ঢাকা     বুধবার   ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৪ ১৪৩১

৪.৮ কিলোমিটার যমুনা রেলসেতু ৩ মিনিটে অতিক্রম

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২২, ৬ জানুয়ারি ২০২৫  
৪.৮ কিলোমিটার যমুনা রেলসেতু ৩ মিনিটে অতিক্রম

ফাইল ফটো

যমুনা নদীর ওপর নির্মিত ৪.৮ কিলোমিটার রেলসেতু ১২০ কিলোমিটার গতিতে প্রায় ৩ মিনিটে অতিক্রম করেছে পর্যবেক্ষণ ট্রেন। 

সোমবার (৬ জানুয়ারি) দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে বাংলাদেশের রেলওয়ের গভর্মেন্টের ইনস্পেক্টর, সেতুর প্রকল্প পরিচালক ও প্রজেক্ট ম্যানেজারসহ দেশি-বিদেশি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সেতুতে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচলের চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। ট্রেনটি সেতু অতিক্রম করতে সময় নেয় ২ মিনিট ৫৯ সেকেন্ড।

যমুনা রেলওয়ে সেতুর চিফ সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. মাইনুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আরো পড়ুন:

প্রকল্প সূত্র জানায়, দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত দেশের দীর্ঘতম রেলওয়ে সেতুর অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ শেষে চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণমূলক ট্রেন চলাচল সম্পন্ন হয়েছে। আজ দুপুরে ১টা ৪৫ মিনিটে চারটি কোচ ও একটি ইঞ্জিন নিয়ে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর অংশ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে যমুনা রেলসেতুতে ট্রেন চালানো হয়। এসময় ট্রেনের গতি এবং সেতুটির কম্পন পর্যবেক্ষণ করেন বাংলাদেশ রেলওয়ে গভর্মেন্ট ইন্সপেক্টর ফরিদ আহমেদ, প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান ও জাপানের প্রকল্প পরিচালক ম্যাকহ্যাভিসহ অন্য কর্মকর্তারা। পরে তারা ট্রেন থেকে নেমে পায়ে হেঁটে সেতুটি পর্যবেক্ষণ করেন।

এর আগে রবিবার (৫ জানুয়ারি) সকালে প্রথম পর্যায়ে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার গতিতে সেতুর দুই পাশ থেকে দুটি ট্রেন পারাপারের পর ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরপর পর্যায়ক্রমে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করে।

যমুনা রেলওয়ে সেতুর চিফ সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, “পরীক্ষামূলকভাবে পূর্ণগতিতে ট্রেন চলছে। আজ দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর অংশ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হয়। এতে দেখা গেছে, ১টা ৪৭ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডে ট্রেনটি পশ্চিম পাড়ের সেতুর শেষ অংশ অতিক্রম করে। এটিই ছিল সর্বশেষ পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল। এখন পুরো সেতু পর্যবেক্ষণ করা হবে। কোথাও কোনো ত্রুটি আছে কি না তা খুঁজে বের করা হবে। এরপর উদ্বোধনের জন্য পুরোপুরি উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে সেতুটি।”

যমুনা রেল সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান বলেন, “যতগুলো প্যারামিটার দেখানো হয়েছে সবগুলো সন্তোষজনক। এই মুহূর্তে নন ইন্টারলক কালার লাইট সিস্টেমের মাধ্যমে এই সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে। অনুমোদন পেলেই আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বানিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।”

বাংলাদেশ রেলওয়ে গভর্মেন্ট ইন্সপেক্টর ফরিদ আহমেদ জানান, পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল পর্যবেক্ষণ করে তিনি সন্তুষ্ট। তারপরও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এরমধ্যে অটোমেটিক সিগনাল লাইট এবং ইন্টারলক সিগনালিং ব্যবস্থা (সিবিআই) কাজ চলছে। 

প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত যমুনা সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাঁটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে ২০২০ সালের ৩ মার্চ যমুনা নদীর ওপর উজানে আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ওই বছর ২৯ নভেম্বর রেলসেতুরটির নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এরপর ২০২১ সালের মার্চে রেল সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়।

প্রথমে প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা নির্ধারিত হলেও পরবর্তীতে তা ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ অর্থায়ন এসেছে দেশিয় উৎস থেকে এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। দেশের বৃহত্তর এ রেলসেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে জাপানি কোম্পানি ওটিজি ও আইএইচআই জয়েন্টভেঞ্চার।

ঢাকা/কাওছার/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়