ঢাকা     বুধবার   ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৪ ১৪৩১

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আসছে না ভুটানের পাথর

পঞ্চগড় প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ৬ জানুয়ারি ২০২৫  
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আসছে না ভুটানের পাথর

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। ফাইল ফটো

ভারতের ফুলবাড়ী লোকাল ট্রাক ওনার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের আন্দোলনের কারণে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আসছে না ভুটানের পাথর। ভারত ও ভুটান থেকে পাথর আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থলবন্দরে স্থবিরতা নেমে এসেছে। পাথর না আসায় সরকারের রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ার পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন বন্দরসংশ্লিষ্ট হাজারের বেশি শ্রমিক।

বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “ভারতের ফুলবাড়ীতে স্লট বুকিং বা অনলাইন ফি নিবন্ধন চালু করার কারণে ভুটানের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে পাথর রপ্তানি বন্ধ রেখেছেন। যার কারণে গত দুইদিন ধরে ভুটান থেকে পাথর আসছে না। গত ১৮ নভেম্বর থেকে ভারতের পাথর আমদানিও বন্ধ রয়েছে।”

জানা গেছে, বন্দরটি প্রায় ৯৫ শতাংশই পাথর আমদানি নির্ভর। এই বন্দরে ভারত ও ভুটান থেকে আমদানি হয় পাথর। গত তিনদিন ধরে ভুটান থেকে পাথর না আসার কারণে পুরো ইয়ার্ড ফাঁকা হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা। 

আরো পড়ুন:

স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফুলবাড়ী লোকাল ট্রাক ওনার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন বাংলাদেশে আসা ভুটানি ট্রাকগুলোকে স্লট বুকিংয়ের (অনলাইনে ফি দিয়ে নিবন্ধন) আওতায় আনতে আবারো আন্দোলন শুরু করেছে। ভুটানের সঙ্গে ভারত সরকারের চুক্তি থাকায় তাদের কোনো প্রকার স্লট ফি দিতে হয় না। এ কারণে ভুটানের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে পাথর রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের চলমান অস্থিরতাকে কাজে লাগাতে সুবিধা পোর্টালের আনতে আন্দোলন করছে ভারতের ফুলবাড়ী লোকাল ট্রাক ওনার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন। ভুটান যাতে নিয়মের আওতায় এসে বাংলাদেশের কাছে পাথর রপ্তানি করতে না পারে এমন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। অথচ ভারতের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, ফুলবাড়ী স্থলবন্দর ব্যবহারে বাংলাদেশের কাছে পণ্য রপ্তানিতে ভুটানকে কোনো অনলাইন ফি দিতে হয় না। তবে ভারতীয় ট্রাক মালিক সংগঠনের দাবি, তারা সুবিধা পোর্টালের আওতায় আসলে তাহলে ভুটান কেন নয়, এমন দাবিতেই তারা আন্দোলন করছে বলে জানা গেছে।

এর আগেও, ২০২৩ সালের ৫ জুলাই ফুলবাড়ী বর্ডার লোকাল ট্রাক ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশে প্রবেশ করা ভুটানি ট্রাকগুলোকে স্লট বুকিংয়ের (অনলাইনে ফি দিয়ে নিবন্ধন) আওতায় আনতে আন্দোলনের কারণে টানা এক মাস ভুটান থেকে পাথর আমদানি বন্ধ ছিল। কারণ হিসেবে জানা গিয়েছিল, বাংলাদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতীয় গাড়িগুলোকে রাজ্য সরকারকে ৬ চাকার ট্রাকপ্রতি ৩ হাজার এবং ১০-১২ চাকার ট্রাকপ্রতি ৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু ভুটানের গাড়ির ক্ষেত্রে সেটি দিতে হয় না। এ কারণে ভারতের ফুলবাড়ী স্থলবন্দরে আন্দোলনে নামেন ভারতীয় ট্রাকচালকেরা।

স্থলবন্দর সূত্র জানায়, ভৌগলিক অবস্থানগত দিক থেকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর বাংলাবান্ধা। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের সাথে ট্রানজিট সুবিধা থাকায় ব্যবসা ও পর্যটনে ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি করেছে স্থলবন্দরটি। এ স্থলবন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি হয়, তার ৯৫ শতাংশই পাথর। গত নভেম্বরের ১৮ তারিখ থেকে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধের পর ভুটান থেকে প্রতিদিন ২০০-৩০০ ট্রাকে পাথর আমদানি হয়েছে। ভারতের ফুলবাড়িতে নতুন করে সুবিধা পোর্টাল চালুর দাবির কারণে ভুটান গত তিনদিন ধরে বাংলাদেশে পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছে।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “ফুলবাড়িতে স্লট বুকিং বা অনলাইন ফি নিবন্ধন চালু করার কারণে ভুটানের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে পাথর রপ্তানি বন্ধ রাখায় কয়েক দিন ধরে ভুটানের পাথর আসছে না। গত নভেম্বর থেকে ভারতের পাথর আমদানিও বন্ধ রয়েছে। ভুটান সুবিধা পোর্টালের আওতায় আসলে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে, আমাদেরকে বেশি মূল্যে পাথর আমদানি করতে হবে। এ কারণে ভুটান পাথর রপ্তানি আপাতত বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছেন।” 

তিনি আরো বলেন, “স্থলবন্দরে পাথর না আসার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বন্দরের শ্রমিকরাও। আশা করছি সমস্যা সমাধান হবে শিগগিরি। এ নিয়ে বাংলাবান্ধা আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপ গত শনিবার মিটিংও করেছে।”

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের আহ্বায়ক রেজাউল করিম শাহিন বলেন, “ফুলবাড়ী বর্ডার লোকাল ট্রাক অনার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন’ এর আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ভুটানের গাড়ি সুবিধা পোর্টালের আওতায় আনার কারণে ভুটান এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন মাল লোডিং বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত মৌখিকভাবে জানিয়েছে। তাছাড়া, কিছুদিন ধরে ভারতের পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। এ নিয়ে আমরা গত শনিবার (৪ জানুয়ারী) স্থলবন্দরের কনফারেন্স রুমে আলোচনা সভা ডেকেছিলাম। সভায় এ বিষয়ে ও ভ্যাট বিষয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেখব। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।”

বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “বন্দরটি পাথর আমদানি নির্ভর হওয়ায় সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বন্দর দিয়ে সীমিত পরিসরে রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে।”

ঢাকা/নাঈম/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়