বগুড়ায় শিক্ষিকাকে মারধর, মামলা নিতে গড়িমসির অভিযোগ
বগুড়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
স্কুল শিক্ষিকার দেওয়া ফেসবুক পোস্ট
পূর্ব শত্রুতার জেরে স্থানীয় প্রভাবশালীদের দ্বারা মারপিটের শিকার হন বগুড়ার ধুনটের স্কুল শিক্ষিকা ফৌজিয়া হক বিথী। গত ৬ ডিসেম্বর ঘটনার পর তিনি থানায় এজাহার দায়ের করেন। কিন্তু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল আলম গত এক মাসেও সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগ ওই শিক্ষিকার। এদিকে মামলা না নেওয়ায় প্রতিনিয়ত ওই প্রভাবশালী পক্ষের অত্যাচার এবং হুমকি ধামকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন স্কুল শিক্ষিকা।
এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর স্কুল যাওয়ার পথে বগুড়ার ধুনটের বেলকুচি সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ফৌজিয়া হক বিথী স্থানীয় প্রভাবশালীদের দ্বারা মারধরের শিকার হন। পরে ৭ ডিসেম্বর তিনি থানায় এজাহার দায়ের করেন। বিথী বেলকুচি গ্রামের রাজ্জাকুল কবির বিদ্যুৎ-এর স্ত্রী।
বিথী এজাহারে উল্লেখ করেন, গত ৫ ডিসেম্বর তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে কয়েকজন স্থানীয় প্রভাবশালী তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত করেন। এরপর তিনি বিষয়টি তার ভাতিজা রাশেদ বাবু ভুট্টু ও রাসেল মাহমুদকে জানালে তারা এর প্রতিবাদ করেন। এতে ওই ব্যক্তিরা তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়।
পরে গত ৬ ডিসেম্বর বিকাল আনুমানিক ৫টায় রাশেদ বাবু ভুট্টু ও রাসেল মাহমুদ বেলকুচি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে আসামিরা তাদের মারধর করে। খবর পেয়ে বিথী তার ছেলে আহনাফ কবির বর্ণিলকে (১৫) নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। তিনি আসামিদের বাধা দিলে তারা তাকেও মারধর করে। পরে তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হলে আসামিরা পালিয়ে যায়।
শিক্ষিকা ফৌজিয়া হক বিথীর দায়ের করা এজাহারের কপি
ফৌজিয়া হক বিথী বলেন, “গত ৭ ডিসেম্বর থানায় এজাহার দিয়েছি। ওসি সাহেব তদন্ত সাপেক্ষের ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই করেননি। এজাহারের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই স্বপন। তাকেও একাধিকবার ফোন দিয়েছি এজাহারটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে কিনা তা জানতে। তিনি জানিয়েছেন, তারা আমাকে ডাকলে তখন থানায় যেতে। কিন্তু তারা আমাকে ডাকেনি। আমি ফোন দিলেও তিনি আর রিসিভ করেন না।”
বিথী আরও বলেন, “এদিকে আসামি পক্ষের লোকজন দুই তিন দিন পরপর গভীর রাতে আমার বাড়িতে ঢিল ছুঁড়ছে। মাঝে মধ্যে রাতে দরজায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে ভয় দেখাচ্ছে। রাস্তাঘাটে চলাফেরার সময় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে। আমার কর্মস্থল স্কুলে এসেও গালিগালাজ করে। বাড়ি থেকে স্কুল যাওয়ার পথে বা স্কুল থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে তাদের লোকজন আমাকে অনুসরণ করে। থুথু নিক্ষেপ করে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। গতকাল রাত আড়াইটায় আমার বাড়িতে অনেকগুলো ঢিল ছুড়েছে। পরিবার নিয়ে আমি অতিষ্ট হয়ে পড়েছি। আমি এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।”
এ বিষয়ে ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইদুল আলম বলেন, “এজাহারটা ওই অবস্থাতেই আছে। আমরা তদন্ত করে দেখেছি ওটা নিজেদের পারিবারিক একটা বিষয়। তার ভাতিজার সাথে দ্বন্দ্ব। এটা সামান্য বিষয়। এজাহার করার মতো না। রাস্তায় গালিগালাজের বিষয়টি সত্য না। পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে তাদের মধ্যে একটা মানসিক একটা বিষয় কাজ করছে। বাড়িতে ঢিল ছোঁড়া বা দরজায় লাঠির আঘাতের কোনো তথ্য পাইনি। এজাহারে তো ওরকম কিছু লেখা নেই।”
এটাকে পারিবারিক বিষয় হয়ে থাকলে থানা থেকে বিষয়টি সুরাহা করার কোনো সুযোগ আছে কিনা বা চেষ্টা করেছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখনও করা হয়নি। তবে আমরা উভয়পক্ষকে ডেকে মীমাংসার চেষ্টা করব।”
ঢাকা/এনাম/এস