ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৫ ১৪৩১

মৌলভীবাজারে ডাকাত আতঙ্ক

মৌলভীবাজার সংবাদদাতা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১৪, ৮ জানুয়ারি ২০২৫  
মৌলভীবাজারে ডাকাত আতঙ্ক

রাতে লাঠি হাতে গ্রাম পাহারা দিচ্ছেন এলাকাবাসী

ডাকাত আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলার বাসিন্দাদের। গরু চুরি ও প্রবাসীদের ঘরে ডাকাতিই হলো সংঘবদ্ধ চক্রের লক্ষ্য।

এদিকে ডাকাতের হাত থেকে রক্ষা পেতে রাতে এলাকার মসজিদে মাইকিং করা হচ্ছে। মাইকে প্রচারণা শুনে গভীর রাতে রাস্তায় নামেন মানুষজন। বেশ কিছু গ্রামে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন এলাকাবাসী। গত এক সপ্তাহ ধরে আতঙ্কে রাত পার করছেন কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজার ও কমলগঞ্জবাসী।

গত সোমবার (৬ জানুয়ারি) রাতে ডাকাত দল প্রবেশ করেছে এমন খবর উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের উবাহাটা, ভূমিগ্রাম, মির্জানগর, সরিষকান্দি, নারায়নক্ষেত্র, বিক্রমকলস, রামপুর এবং রহিমপুর ইউনিয়নের ধরমপুর, সিদ্ধেশ্বরপুর, বিষ্ণুপুর, রহিমপুর ও শমসেরনগর ইউনিয়নের রাধানগরসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় বিভিন্ন মসজিদ থেকে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হয়। আতঙ্কিত নির্ঘুম মানুষ রাতভর পাহারা দেন।

গত ১৩ অক্টোবর গভীর রাতে কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রাজারগাঁও গ্রামের মিছির মিয়ার বাড়িতে একদল মুখোশধারী ডাকাত হানা দিয়ে ৪ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৩ লাখ ২৯ হাজার টাকা নিয়ে যায়। 

৩০ অক্টোবর ভোররাতে উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ তিলকপুর গ্রামের এক খাদ্য পরিদর্শকের বাড়িতে ডিবি পুলিশের পরিচয়ে ডাকাতি করে একদল ডাকাত। এসময় খাদ্য পরিদর্শক ও স্কুল শিক্ষিকা তার স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১৭ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ২৪ হাজার টাকা নিয়ে যায় ডাকাতরা। 

২৪ নভেম্বর ইউপি সদস্য সালেহ আহমদের বাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়ে ওই উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের নূরজাহান চা বাগানের বাসিন্দাদের গণপিটুনিতে এক ডাকাত নিহত হয়। এছাড়া সহযোগী তিন জনকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। 

এ ঘটনার পর ২২ ডিসেম্বর গভীর রাতে রহিমপুর ইউনিয়নের ধরমপুর গ্রামের এক যুক্তরাজ্য প্রবাসীর বাড়িতে হানা দেয় একদল ডাকাত। বিষয়টি টের পেয়ে এলাকায় মাইকে প্রচার করা হয়। পরে পাঁচ ডাকাতকে আটক করে কমলগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে তুলে দেন এলাকাবাসী। 

১৯ ডিসেম্বর রাতে পতনউষার ইউনিয়নের শহীদনগর বাজারে একটি গ্যারেজ থেকে সিএনজি অটোরিক্সা চুরি হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ উপজেলায় আগের চেয়ে চুরিসহ নানা অপরাধ বেড়েছে। গত কয়েক মাসের ধারাবাহিক ঘটনায় কমলগঞ্জের মানুষের মনে ভয় ঢুকেছে। ভয় থেকেই রাত হলে ডাকাত আতঙ্কে থাকছেন কমলগঞ্জের মানুষ।

রহিমপুর গ্রামের মো. সোহেল বলেন, “সপ্তাহখানেক ধরে মানুষের মাঝে ডাকাত আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সোমবার রাতে আমাদের বাড়ির পেছনে একদল মানুষের হাঁটার শব্দ শুনে বের হই। লোকগুলো আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। কয়েকদিন ধরে আমরা ডাকাতির ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারছি না।”

নারায়ণক্ষেত্র গ্রামের মো. আব্দুল্লাহ বলেন, “আমাদের গ্রামসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামে ডাকাতের ভয়ে মানুষ ঘুমাতে পারছে না। মাইকে ডাকাত প্রবেশের সতর্কবার্তা শুনে গ্রামের মানুষ পাহারা দিচ্ছে। গ্রামের সবাই মিলে বৈঠক হয়েছে। সবাই মিলে পাহারার ব্যবস্থা করেছি। এদিকে গরু চুরি বেড়েছে জেলার কুলাউড়া ও রাজনগরের চা বাগানগুলোতে। গরু রক্ষার জন্য কুলাউড়ার হিঙ্গাজিয়া চা বাগানের চা শ্রমিকরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।”

হিঙ্গাজিয়া চা বাগানের রাজেন্দ্র কুমার বলেন, “বাগানগুলোতে শ্রমিকরা গরু পালন করে আসছে। চোরের দল টার্গেট করে বাগানে হানা দিচ্ছে। রাত নামলেই শ্রমিকরা রাস্তায় নামেন। পালাক্রমে পাহারা বসান। জানুয়ারি মাসের শুরুতেই বাগান থেকে দুটি গরু চুরি হয়েছে।”

রাজনগর উপজেলার করিমপুর বাগানের দিপক দাশ বলেন, “চলতি মাসে তিনটি গরু নিয়ে যাওয়ার সময় এলাকাবাসীর ধাওয়া খেয়ে গরু রেখে পালিয়ে যায় চোর।”

কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, “আমরা ডাকাতি প্রতিরোধে বেশকিছু সফলতা পেয়েছি। ডাকাতির প্রস্তুতির সময় বহিরাগত কয়েকজনকে জনগণের সহায়তায় আটক করা হয়েছে। সম্প্রতি ডাকাত আসার খবর বেশিরভাগই গুজব। কমলগঞ্জ পর্যটন এলাকা হওয়ায় বাইরের অনেক লোকজন আসেন। আমরা এলাকাবাসীসহ পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে তৎপর রয়েছি। নিজেদের উদ্যোগে গ্রামবাসী পাহারার ব্যবস্থা করায় গ্রামও সুরক্ষিত থাকবে।”

রাজনগর থানার ওসি শাহ মো. মুবাশ্বির বলেন, “গরু চুরি বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে পুলিশি তৎপরতায় তা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।” 

কুলাউড়া থানার ওসি মো. গোলাম আবসার বলেন, “টহল দল বৃদ্ধির পর চুরি-ডাকাতি কমেছে।”

ঢাকা/আজিজ/এস


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়