ঢাকা     শুক্রবার   ১০ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৬ ১৪৩১

মা-বাবা-ভাই বেঁচে নেই, এখনো জানে না ফাহিম

কাওছার আহমেদ, টাঙ্গাইল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩১, ৯ জানুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ১৫:৪৯, ৯ জানুয়ারি ২০২৫
মা-বাবা-ভাই বেঁচে নেই, এখনো জানে না ফাহিম

প্রায় তিন বছর ধরে ‘জটিল’ রোগে আক্রান্ত ছিলেন মহায়মিন সিদ্দিকী ফুয়াদ। মাঝেমধ্যে শরীরে রক্ত দিতে হত। বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। রাত ১২টার দিকে তার বাবা ফারুক সিদ্দিকী পরিবার সদস্যদের নিয়ে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।

সাভারের রাজফুলবাড়িয়া এলাকায় পৌঁছালে তাদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের পেছনে দুটি বাস ধাক্কা দেয়। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সটির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায়। পরে অ্যাম্বুলেন্স ও যাত্রীবাহী দুটি বাসে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা ফারুক সিদ্দিকী পরিবারের ৪ সদস্যের পুড়ে যাওয়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃত্যুর দীর্ঘ সময় পার হলেও ফারুক সিদ্দিকীর ছোট ছেলে ফাহিম এখনো জানে না, তার মা-বাবা-ভাই বেঁচে নেই।

নিহত ফারুক সিদ্দিকীর চাচাতো বোন সোমা সিদ্দিকী বলেন, ‘‘ফাহিম হোস্টেলে থেকে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। সে এখনো জানে না, তার মা-বাবা-ভাই পৃথিবীতে নেই।’’

দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- ৬৪ নম্বর ভবনদত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক সিদ্দিকী, স্ত্রী মহসিনা খন্দকার, ছেলে মহায়মিন সিদ্দিকী ফুয়াদ ও স্ত্রীর বড় বোন সীমা খন্দকার।

পরিবারের সদস্যরা জানান, ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকী বেশকিছু দিন ধরে অসুস্থ ছিল। মাঝেমধ্যে শরীরে রক্ত কমে যেত। গত রাতে ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের চার সদস্যকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন ফারুক সিদ্দিকী। পথে দুর্ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

ঘাটাইল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান তালুকদার বলেন, ‘‘চার জনের মরদেহ এখনো ঢাকায় রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাদের দাফন করা হবে।’’

নিহত ফারুক সিদ্দিকীর ছোট ভাই মামুন সিদ্দিকী জানান, তারা তিন ভাই-বোন। বড় ভাই ফারুক সিদ্দিকী ৬৪ নম্বর ভবনদত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ভাতিজা ফুয়াদ স্থানীয় ভবনদত্ত গণ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

তিনি বলেন, ‘‘বেশ কিছুদিন ধরে ফুয়াদ অসুস্থ ছিল। শরীরে রক্ত কমে যেত। গত রাতে ফুয়াদ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য রাত ১২টার দিকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেন বড় ভাই। এ সময় ফোন করে সবাইকে দোয়া করতে বলেন। তারপর আর কথা হয়নি।’’

ফারুক সিদ্দিকীর সহকর্মী মো. রুবেল মিঞা বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষক হিসেবে ফারুক সিদ্দিকী খুব নীতিবান মানুষ ছিলেন। এমন নীতিবান এক জন মানুষের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।’’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হেপলু বলেন, ‘‘রাতে ফারুক সিদ্দিকীকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিয়ে বাড়ি আসি। সকালে খবর পাই তিনিসহ পরিবারের ৪ সদস্য মারা গেছেন।’’

ঢাকা/রাজীব


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়