ঢাকা     শনিবার   ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৭ ১৪৩১

মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওসির বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩২, ১১ জানুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ১২:৩৪, ১১ জানুয়ারি ২০২৫
মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওসির বিরুদ্ধে

কোনাবাড়ী থানার ওসি নজরুল ইসলাম। ফাইল ফটো

এক ওষুধ ব্যবসায়ীকে ধরে নিয়ে অস্ত্র ও হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ, ওসি প্রথমে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে দেনদরবার করে দুই লাখ টাকা নেন। পরে ঘটনা ধামাচাপা দিতে ওই ব্যবসায়ীকে মেট্রোপলিটন অধ্যাদেশে প্রসিকিউশন মামলা দিয়ে আদালতে পাঠান। পরদিন আদালত থেকে জামিন পান ওই ব্যবসায়ী।

গত ৩ জানুয়ারি রাতে কোনাবাড়ী বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী হলেন কোনাবাড়ী হাউজিং এলাকার হোসেন আলী মুন্সীর ছেলে নূরুল ইসলাম (৪৫)। তিনি কোনাবাড়ী বাজার এলাকায় ওষুধের দোকান চালান।

ব্যবসায়ী নূরুল ইসলাম বলেন, ‘‘৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় দোকানে বসে ছিলাম। হঠাৎ চার-পাঁচজন যুবক এসে আমাকে ‘আওয়ামী লীগ নেতা ও ৪-৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে জড়িত’ অভিযোগ তুলে হেয় করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা আমাকে কয়েকটা কিল-ঘুষি মারে। এ সময় কোনাবাড়ী থানার এসআই হানিফ মাহমুদ আমাকে ধরে থানায় নিয়ে যান। পরে থানা-পুলিশ নানা প্রশ্ন করে এবং ভয়ভীতি দেখায়। তারা বলে, আমি নাকি ৪ আগস্ট বাসন থানার সামনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও গুলি চালিয়েছি। কিন্তু, ওই সময়ে (১ থেকে ৫ আগস্ট) আমি ছেলেকে ভর্তি করার জন্য ভারতের শিলিগুড়িতে ছিলাম। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় ৬ আগস্ট সড়কপথে বেনাপোল হয়ে বাড়িতে ফিরি। সব বলার পরও পুলিশ ‘আজমত উল্লার বাসার কেন গিয়েছিলেন? রিপন সরকারের সঙ্গে ছবি কেন? ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, হত্যা ও অস্ত্র মামলা দেবে, আগামী এক বছরেও জামিন হবে না’ এমন নানা কথা বলে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাকে থানায় নিয়ে আসার খবর পেয়ে আমার স্ত্রী, দুই ভাগনে ও তার (ভাগনে) ছেলে থানায় আসেন। আমার স্ত্রী আমাকে দেখে ও পুলিশের ভয়ভীতির কথা শুনে কান্নাকাটি শুরু করেন। একপর্যায়ে থানার মধ্যে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। পরে ওসি নজরুল থানার এসআই উৎপল সাহার মাধ্যমে স্বজনদের জানান, পাঁচ লাখ টাকা দিলে পুলিশ সেভ করবে। পরে আমার ভাগনে দোকান থেকে ১৯ হাজার ও বাড়ি থেকে ৫৬ হাজার টাকাসহ আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে ওসিকে দেন। কিন্তু, তারপরও আমাকে না ছেড়ে মেট্রোপলিটন অধ্যাদেশের আইনে আদালতে পাঠায়। আদালত জামিন দিলে মুক্তি পাই।’’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কোনাবাড়ী থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘‘ঘটনাটি কোনাবাড়ী থানার সেকেন্ড অফিসার উৎপল এবং ওসি নিজে তত্ত্বাবধান করেছেন। শিক্ষার্থীরা ওই ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলেও ছাড়া হয়নি। উল্টো টাকা নিয়েছেন। আবার মেট্রোপলিটন অধ্যাদেশের মাধ্যমে আদালতে পাঠিয়েছেন।’’

প্রসিকিউশন মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই ব্যবসায়ী কোনাবাড়ীর রাজধানী হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁর সামনের রাস্তার ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে চিৎকার ও চ্যাঁচামেচি করে জননিরাপত্তা ও শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্ন করে জনগণের চলাফেরায় বাধা সৃষ্টি করেছেন।

কোনাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন মামলার বাদী হানিফ মাহমুদ বলেন, ‘‘টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনি ওসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেন তিনি ভালো বলতে পারবেন।’’

মামলার সাক্ষী করা হয়েছে একটি মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. খায়রুল ইসলামকে।

তিনি জানান, নূরুল ইসলাম তার জানামতে ভালো লোক। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। টাকা নেওয়া বা তাকে মামলার সাক্ষী করার বিষয়ে তার জানা নেই।

অভিযোগের বিষয় নাকচ করেছেন কোনাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজরুল ইসলাম। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।’’ এরপর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন ওসি।

ঢাকা/রেজাউল/রাজীব


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়