ঢাকা     শনিবার   ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৮ ১৪৩১

কচু লতিতে ভাগ্য ফিরলো বরুড়াবাসীর

রুবেল মজুমদার, কুমিল্লা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩০, ১১ জানুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ১৭:৫৫, ১১ জানুয়ারি ২০২৫
কচু লতিতে ভাগ্য ফিরলো বরুড়াবাসীর

কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার কৃষকদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে পুষ্টিকর সবজি কচু ও লতি। অন্য ফসলের তুলনায় কম শ্রম ও বেশি লাভ হওয়ায় এই সবজি দুটি চাষ করছেন কয়েক হাজার কৃষক। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে এখানে উৎপাদিত কচু ও লতি দেশের বিভিন্ন স্থানের বাজারে সরবরাহ হচ্ছে। এমনকি চাহিদা থাকায় কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ প্রায় ৩০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে এই কচু ও লতি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বারুড়া উপজেলায় মূলত দুই জাতের কচুর চাষ বেশি হয়।সেগুলো হল- লতিরাজ ও বারি পানিকচু-৩। লতিকচু থেকে শুধু লতি সংগ্রহ করা হয়। আর পানিকচু থেকে দুটোই সংগ্রহ করা হয়।

এখানকার কচু ও লতি খেতে সুস্বাদু এবং গলায় ধরে না। ফলে এর চাহিদা অনেক। চাহিদার জোগান দিতে ১২ মাসই  বাণিজ্যিকভাবে উপজেলা জুড়ে এই দুই সবজি চাষ করেন কৃষকরা। একবার রোপণ করলে ফলন পাওয়া যায় বছরের ৮-৯ মাস। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় চাষিরা ঝুঁকছেন কচু লতি চাষে। 

আরো পড়ুন:

কৃষকরা জানান, ২০১৪ সালের দিক থেকে কচু চাষে মনোযোগ দেন চাষিরা। খরচের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে কচু ও লতি চাষ করতে থাকেন। যত দিন যাচ্ছে, এই সবজির চাষ বাড়ছে। বর্তমানে পুরো উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে তিন হাজারের বেশি কৃষক কচু ও লতি চাষ করছেন।

এদিকে, দেশের বৃহৎ সবজি আড়ত কুমিল্লার নিমসার বাজার থেকে প্রতিদিনই রপ্তানি হচ্ছে কচুর লতি। প্রান্তিক কৃষকদের নিয়ে গঠিত ২৫টি সমিতির মাধ্যমে কচু ও লতি সংগ্রহ করা হয়। এ কাজে স্থানীয় কৃষকদের সহযোগিতা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অফিস। এছাড়া, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আড়তদরা সরাসরি এলাকা থেকে কচু ও লতি সংগ্রহ করেন।

উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের বটতলা এলাকার কৃষক হাছান মিয়াজী বলেন, ‍“একবিঘা জমিতে দুই বছর ধইরা ধান বাদ দিয়া কচু ও লতি চাষ করতাছি। খরচ হইছে ২৫ হাজার। এহন পর্যন্ত লতি বেচছি ৪০ হাজার টাকার। আরো বেইচ্ছা পারমু কয়েক মাস। আমরার কচু-লতি বিদেশেও যায়।”

একই এলাকার কৃষক জসিম সর্দার বলেন, “বাজারে ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে প্রতিকেজি লতি বিক্রি করছি। লতি চাষের বড় সুবিধা হল- সপ্তাহে এক থেকে দুবারও লতি বিক্রি করা যায়। আমি এবার ৪৫ শতাংশ জমিতে এই সবজি চাষ করছি, খরচ গেছে ৪০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ৮০ হাজার টাকার বেশি লতি বেচছি। পাইকারেরা বাড়ি আইসা লতি লয়ে যায়।”

সরেজমিনে দেখা যায়, জমি থেকে কচু ও লতি তুলে বাড়ি নিয়ে যান কৃষকরা। সেগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করে আঁটি বাঁধার কাজ করেন নারী শ্রমিকরা। উপজেলায় এক হাজারের বেশি নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে এই খাতে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বরুড়ায় এসে কৃষকের বাড়ি থেকে কচু ও লতি কিনে নিয়ে যান। কয়েক হাত হয়ে এই সবজিটি যায় রপ্তানিকারকদের হাতে।

কুমিল্লা জেলার স্থানীয় কৃষিবিদ জাহিদ হাসান বলেন, “বছরে বরুড়ায় উৎপাদিত ১৩৩ থেকে ১৪০ মেট্রিক টন লতি ও কচু বিশ্বের অন্তত ৩০টি দেশে যায়। বিদেশের যেসব দেশে  বাংলাদেশিরা বেশি থাকেন, এমন দেশগুলোতে কচু ও লতির চাহিদা বেশি। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বেশি পরিমাণে এই দুই সবজি যায়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের নানা দেশেও রপ্তানি হয়। 

কুমিল্লায় জেলার জ্যেষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রেজা শাহবাজ হাদী বলেন, “রপ্তানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। যারা এই সবজি রপ্তানি করছেন, তারা নিজেদের লোক দিয়ে কৃষক পর্যায় থেকে এই সবজি সংগ্রহ করছেন।”  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, “আমরা কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করছি। কৃষকদের সচেতনতা জন্য বিভিন্ন এলাকায় মাঠ মিটিং করছি।” 

রপ্তানিকারক মো. ইসমাইল চৌধুরী বলেন, “শুধু আমাদের সংগঠনের মাধ্যমেই বরুড়ার লতি ও কচু বছরে রপ্তানি হচ্ছে অন্তত এক হাজার মেট্রিক টন। রপ্তানি মূল্য অন্তত ২৪ কোটি টাকা। আমাদের সংগঠনের বাইরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও এই সবজি রপ্তানি করছে।”

তিনি আরো বলেন, “আগের চেয়ে সবজির দাম যেমন বেড়েছে, উড়োজাহাজ ভাড়াও অনেক বেড়েছে। এ কারণে চাহিদা থাকলেও আমরা বেশি পণ্য পাঠাতে পারি না। উড়োজাহাজ ভাড়া কমানো গেলে রপ্তানি আরো অনেক বেড়ে যাবে।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়