যশোরে বিএনপির মিলনমেলা
নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর || রাইজিংবিডি.কম
যশোরের জেস গার্ডেন পিকনিক স্পটে মিলনমেলার আয়োজন করে সদর উপজেলা বিএনপি
ব্যতিক্রম এক মিলনমেলা হয়ে গেল যশোরে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামে নির্যাতিত নেতাকর্মীদের নিয়ে এই মিলনমেলার আয়োজন করা হয়।
রবিবার (১২ জানুয়ারি) জেস গার্ডেন পিকনিক স্পটে যশোর সদর উপজেলা ও পৌর বিএনপি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মিলনমেলায় নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীরা তাদের স্বজনদের নিয়ে অংশ নেন। পাশাপাশি চিকিৎসক, শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, ছাত্র প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মিলনমেলায় উপস্থিতি ছিলেন। দীর্ঘদিন পর রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের একসঙ্গে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হন নেতাকর্মীরা। নেতাদের দাবি, এ উদ্যোগ রাজনৈতিক সহকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে সহায়ক হবে।
মিলনমেলায় নির্যাতনের শিকার অনেকেই স্মৃতিচারণ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তাদের একজন যশোর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক ইউনুচ আলী তারা বাবু।
তিনি বলেন, “২০১৪ সালের ২৭ মার্চ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় সাদা পোশাকধারী পুলিশ। ডিবি অফিসে নিয়ে পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে পুলিশ। ওইদিনই অপারেশন করে আমার পা কেটে ফেলতে হয়। মিথ্যা অস্ত্র ও নাশকতার মামলায় আমাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। ক্র্যাচে ভর করেই এখন চলতে হচ্ছে। আমার নামে পেন্ডিংসহ ১৬টি মামলা দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার পতনের পর আজকের মিলনমেলায় আমন্ত্রণ পাওয়ায় খুশি হয়েছি।”
যশোর সদরের লেবুতলা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হায়দার আলী বলেন, “২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোট নিয়ে সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছিলাম। পরে পুলিশ স্থানীয় বাজার থেকে তুলে এনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও নাশকতা মামলার আসামি করে কারাগারে পাঠায়। দীর্ঘ দুই বছর তিন মাস কারাভোগের পর বাড়ি ফিরলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতনে জর্জারিত ছিলাম। নির্যাতিত নেতাকর্মীদের নিয়ে এই মিলনমেলার আয়োজন করায় ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, “ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে যশোর সদর উপজেলা ও পৌর বিএনপির অনেক নেতাকর্মী রাজপথে ছিলেন। অনেকে মিথ্যা মামলায় জেলে গেছেন। আবার অনেকে শহিদ হয়েছেন। পঙ্গুত্ববরণ করেছেন অনেকেই। যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের সম্মান জানানোর জন্য এই মিলনমেলার আয়োজন করা হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “বিএনপি মনে করে, ফ্যাসিবাদের পতনের শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে সম্ভব ছিল না। আমরা বারবারই সমমনা রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে আহ্বান জানিয়েছি। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে সবাই অংশ নিয়েছেন। তাই শুধু দলীয় নেতাকর্মী নয়, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া চিকিৎসক, শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, ছাত্রপ্রতিনিধি, নারী নেত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্মান জানানোর জন্য আজকের মিলনমেলায় আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তাদের আত্মত্যাগকেও আমরা সম্মান জানাচ্ছি। নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ না থাকলে কাঙ্খিত পরিবর্তন সম্ভব হবে না। এই আয়োজনের মাধ্যমে সেই বার্তা দিতে চাই।”
ঢাকা/রিটন/মাসুদ