বগুড়ায় বিমানবন্দর পরিদর্শন করলেন বাহিনী প্রধান
বগুড়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
বিমান বন্দরের রানওয়ে পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকে ব্রিফিং করা হচ্ছে
বগুড়ার বিমানবন্দর বাণিজ্যিকভাবে চালু করার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বিমান বন্দরের রানওয়ে পরিদর্শন করেছেন বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান।
রবিবার (১২ জানুয়ারি) সকালে হেলিকপ্টারে করে বগুড়া বিমানবন্দরে অবতরণের পর তিনি রানওয়ে পরিদর্শন করেন। এসময় তার সাথে বিমান বাহিনীর প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা ছিলেন।
বিমান বন্দরের রানওয়ে পরিদর্শন শেষে ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যমকে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন বলেন, “এটি একটি এয়ার ফিল্ড। শুধু রানওয়ের দৈর্ঘ্যটি ছোট। আমরা ইচ্ছা করলে এখনও ছোট বিমান নামাতে পারি। ইমিডিয়েটলি আমাদের যেটি প্রয়োজন এটাকে রিকার্পেটিং করা। এ কাজে আমাদের সহযোগিতা করবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। এটার রানওয়ে যেটা আছে, সেটা ব্যবহারযোগ্য করে ফেলব। ব্যবহারযোগ্যের জন্য বেবিচক প্রস্তুত আছেন। এখানে আমার চেয়ারম্যান আছেন, তিনি বলেছেন খুব দ্রুত এটা চালু করতে পারবেন তারা।”
তিনি আরও বলেন, “রানওয়ের দৈর্ঘ্য যেটা আছে, ৪৫০০ ফুটের একটু বেশি, সেটা বাড়ানো সম্ভব না। তবে যা আছে পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারব। জরুরি সময় যেকোনো ছোট বিমান অবতরণ করতে পারবে। একটু বড় বিমানের ক্ষেত্রে রানওয়ে বড় করতে হবে। সেটা সরকারি বিধি অনুযায়ী হবে। আমরা যদি অনুমোদন পাই, সরকারের কাছে অবশ্যই পারসু করব।”
এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন আরও বলেন, “বগুড়ার বিমানবন্দরটি চালু করতে ইতোমধ্যে একটি পরিকল্পনা করেছি। সেটি চার ধাপে করা হয়েছে। বর্তমানে যেটি আছে এর সেকেন্ড ধাপে গেলে মোটামুটি ছোট বিমান আসতে পারবে। সেটায় ৬০০০ ফুট রানওয়ে লাগবে। তবে বড় বিমান আনতে ৮০০০ ফুট দৈর্ঘ্যের রানওয়ে লাগবে। আরও বড় বিমান আনতে ১০ হাজার ফুট রানওয়ে লাগবে। ওইটা পরের ধাপ। কিন্তু ৬০০০ ফুটের রানওয়ে করতে আমি যদি সরকারের অনুমোদন ও ফান্ড পাই, তবে দেড় বছরের মধ্যে এটি চালু করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।”
তিনি আরও বলেন, “বগুড়ার বিমানবন্দরে বিগত সময়ে বাণিজ্যিকভাবে বিমান ওঠানামা নিয়ে সরকারের কাছে একাধিকবার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিগত সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। এখন সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। এছাড়া কৃষি পণ্যসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক কাজে বিমানবন্দরটি ব্যবহারের জন্য সরকারের বিভিন্ন ধরনের গবেষণার প্রয়োজন আছে। এগুলোর সমন্বয়ে এই বিমানবন্দরটি বাণিজ্যিক রূপ পাবে।”
এসময় সহকারী বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এএসএম ফখরুল ইসলাম, বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর করিব ভুইয়াসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বগুড়ায় বিমানবন্দর স্থাপনে প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯৮৭ সালে। কিন্তু নানা জটিলতায় সেই উদ্যোগে ভাটা পড়ে। এরপর ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে এখানে বিমানবন্দর স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
সেসময় ২২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। এরপর ১৯৯৫ সালে সদর উপজেলার এরুলিয়া এলাকায় বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ১১০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ১৯৯৬ সালে সেখানে প্রকল্পের আওতায় রানওয়ে, কার্যালয় ভবন ও কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করা হয়। ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০০০ সালে।
ওই সময় থেকে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান ওঠানামা করে। পর্যায়ক্রমে এখানে বেসামরিক বিমান চলাচলের ব্যবস্থা করার কথা ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পুরো বিষয়টি প্রায় দুই যুগ ধরে ফাইলবন্দী অবস্থায় পড়েছিল।
ঢাকা/এনাম/এস