তালা ভেঙে চেয়ারম্যানকে কার্যালয়ে বসালেন নারীরা
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
যদুবয়রা ইউপি কার্যালয়ের বারান্দায় সোমবার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে সই করছেন চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। এ সময় তাকে ঘিরে রেখেছেন নারীরা।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ৮ নম্বর যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের তালা প্রায় ৯ দিন পর ভেঙে দেন কয়েকশ নারী। পরে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল করে চেয়ারম্যানের বাড়িতে যান এবং চেয়ারম্যানকে ডেকে পরিষদে এনে সেবা নেন।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল সোয়া ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পরিষদ চত্বরের বাইরে ও ভিতরে শত শত নানা বয়সী নারী। চেয়ারম্যান কক্ষে পরিষ্কারের কাজ করছেন গ্রাম পুলিশ। আর পরিষদের বারান্দায় বসে জন্মনিবন্ধনের সনদে স্বাক্ষর করছেন চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন নারীরা।
এ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নারী জানান, মিথ্যা দোষে একটি পক্ষ চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা লাগিয়েছিল। সেজন্য চেয়ারম্যান পথে ঘাটে, বনে বাগানে বসে সই সাক্ষর করছিলেন। অনেকে পরিষদে এসে ফিরে যাচ্ছিলেন। এতে চরম জনদুর্ভোগ হচ্ছিল। সেজন্য হাতুড়ি দিয়ে কার্যালয়ের তালা ভেঙে তারা চেয়ারম্যানকে বাড়ি থেকে পরিষদে ডেকে এনেছেন।
যদুবয়রা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, “ষড়যন্ত্র করে কে বা কাহারা ছুটির রাতে পরিষদ চত্বরে ছাত্রলীগের কেক কেটেছিল। সেজন্য বিএনপির লোকজন কার্যালয়ে তালা লাগিয়েছিলেন। এতে জনগণের ভোগান্তি হচ্ছিল। তাই সোমবার শত শত সেবা প্রত্যাশী নারীরা তালা ভেঙে আমাকে পরিষদে নিয়ে এসেছেন।”
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ৪ জানুয়ারি রাতে যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ছাত্রলীগের ৭৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে কেক কেটে বিভিন্ন শ্লোগান দেওয়া হয়। ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার নেতৃত্বে এই কেক কাটা হয়। পরে কেক কাটার ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এর প্রতিবাদে ওই দিন রাতেই ইউনিয়ন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা চেয়ারম্যান কার্যালয়ে তালা দেন। তারপর ৫ জানুয়ারি দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করে পরিষদ থেকে সচিব, গ্রাম পুলিশ ও সেবা প্রত্যাশীদের বের করে দিয়ে পরিষদ ভবনের প্রধান ফটকের গেটে তালা লাগিয়ে দেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরে খবর পেয়ে ৬ জানুয়ারি দুপুরে পরিষদ চত্বরে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ। বৈঠক শেষে চেয়ারম্যানের কার্যালয় বাদ রেখে অন্যান্য কক্ষের তালা খুলে দেন নেতাকর্মীরা। আর সোমবার স্থানীয় নারীরা চেয়ারম্যান কার্যালয়ে তালা ভাঙে দেন।
যদুবয়রা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম আসাদ বলেন, “পরিষদের বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া আছে। সরকারের কাছে বিচার চাই।”
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলায়মান শেখ বলেন, “সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।”
কয়েকশ নারী একসঙ্গে এসে কার্যালয়ের তালা ভাঙার সংবাদ পরিষদের সচিবের কাছ থেকে পেয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম। এ ঘটনায় তিনি বলেন, “পরিষদের ঘটনায় দুটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। এগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলে তা বাস্তবায়ন করা হবে।”
ঢাকা/কাঞ্চন/ইমন