ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৩ মার্চ ২০২৫ ||  ফাল্গুন ২৮ ১৪৩১

চাঁদা তোলার প্রতিবাদে লঙ্কাকাণ্ড, গুলি-টেঁটায় শেষ তিন প্রাণ

নরসিংদী প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২৫, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ২০:৫৮, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
চাঁদা তোলার প্রতিবাদে লঙ্কাকাণ্ড, গুলি-টেঁটায় শেষ তিন প্রাণ

নরসিংদী রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চল বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের বাঁশগাড়ী বাজার ঘিরে দুই পক্ষের সংঘাতের খণ্ড চিত্র।

নরসিংদী রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চল বাঁশগাড়ী ইউনিয়নে চাঁদা তোলা নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। টেঁটা, অস্ত্র, বাঁশের লাটি, ইট-রড় নিয়ে সংঘর্ষে  জড়ান সেখানকার মানুষ।এ ঘটনায় রায়পুরায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। 

রবিবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে দুই ইউপি চেয়ারম্যানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। তাতে দুই পক্ষে গ্রামের লোকজনও জড়িয়ে পড়েন। এ ঘটনায় তিনজন নিহতের পাশাপাশি আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ জন।

স্থানীয়রা জানান, চাঁদা চাওয়া নিযে কথা কাটাকাটির জের ধরে টেঁটা, বাঁশ, রড, ইট, পাথর ও অস্ত্র নিয়ে কয়েকশ মানুষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান রাতুল হাসান ও সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল হকের মদদে এই সংঘাতের সূচনা বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে। 

সংঘর্ষে  আহত আলী আহমদ (২৩), আলমগীর হোসেন আলম (১৯) এবং অজ্ঞাত একজনকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তাদের মৃত্যু হয়। জেলা সদর হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৩০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত আলমের বোন ইয়াসমিন বলেন, ‘‘বর্তমান এবং সাবেক চেয়ারম্যান চাঁদার জন্য দফায় দফায় বাড়িতে লোক পাঠায়। আমার বাবা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে মারধর করে ও হুমকি-ধমকি দেয়। এ ঘটনায় দুই মাস বাবা গ্রামে ছিলেন না। শনিবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে আমার ভাই বাবাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি এলে রাসেল, রায়হান, রাজিবসহ কয়েকজন সন্ত্রাসী এসে শাসিয়ে যায়। আজ সকালে তাদের নেতৃত্বে ৪০ থেকে ৫০ জন আমাদের ওপর হামলা চালায় এবং আমার ভাইকে বুকে গুলি করে মেরে ফেলে।’’

তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে রায়পুরায় বাঁশগাড়ী এলাকায় চাঁদা তোলা নিয়ে অনেক মায়ের বুক খালি হয়েছে। তারা ঝগড়া করবে, তারা সংঘর্ষ করবে, আমরা কেন টাকা দেব? এ জন্য আমার ভাইকে হারাতে হলো।’’

বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের মফিজ উদ্দিন, মোবারক মিয়া, ফজলে রাব্বিসহ কয়েকজন জানান, বছর পর বছর ধরে সাবেক আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু টেঁটাযুদ্ধ লাগিয়ে রেখে বিভিন্নভাবে ফায়দা লুটে গিয়েছেন। বাঁশগাড়ী এলাকার মধ্যে এমন বাড়ি নেই, যে চাঁদা দিতে হয় না। রাজু চলে গেলেও তার লোকজন নিয়মিত বাড়িতে এসে চাঁদা দাবি করেন। যদি কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানান, তবে নির্যাতন করেন। বিশেষ করে যারা বিদেশ ফেরত বা যাদের পরিবারের লোক বিদেশ থাকে; তাদের মোটা অংকের টাকা দিতে হয় টেঁটাযুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য।

তারা জানান, এখানে পুলিশ, প্রশাসন কেউ কিছু বলতে পারে না। কেউ কিছু বললে তাকে প্রাণ হারাতে হয়। না হলে এলাকা ছাড়া হতে হয়। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে, ধরে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বর্তমান চেয়ারম্যান রাতুল হাসান ও সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।

রায়পুরা থানার ওসি আদিল মাহমুদ বলেন, সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। তাদের একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চলছে।

ঢাকা/হৃদয়/বকুল


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়