সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী দেখা রোমাঞ্চকর
মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, সুন্দরবন থেকে ফিরে || রাইজিংবিডি.কম

পর্যটকদের কাছে অপার বিষ্ময়ের নাম সুন্দরবন। বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনের সৌন্দর্য দেখতে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসুরা। জীববৈচিত্র্যের প্রাণ-প্রাচুর্যের কারণে সুন্দরবন পৃথিবীর অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র। এ বনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের নাম। এছাড়া সুন্দরবনে আছে নানা ধরনের পাখি, চিত্রল হরিণ, বন্য শুকর, কুমির, ডলফিনসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণী। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিবছর অসংখ্য দেশি-বিদেশি পর্যটক ভ্রমণে আসেন। বিশেষ করে শীত মৌসুমে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি ঘটে। এখন সেই পর্যটকের সমাগম ঘটছে সুন্দরবনে। বলা যায়, পর্যটকে ভরপুর এখন সুন্দরবন।
নভেম্বর মাস শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরবনে পর্যটকদের আগমন শুরু হয়। শীত যত বাড়তে থাকে, সেই সঙ্গে সুন্দরবনেও বাড়তে থাকে পর্যটকের সংখ্যা। গত ২৭ জানুয়ারি খুলনা প্রেসক্লাবের শতাধিক সদস্যের একটি টিম সুন্দরবন ভ্রমণে যায়। তিন দিনের এই ভ্রমণে সুন্দরবনের অভয়ারণ্য আন্ধারমানিক, কচিখালী, কটকা, ডিমেরচর, জামতলা সী বিচ এবং করমজল পর্যটন স্পটে প্রচুর পর্যটক দেখা যায়।
বনবিভাগের সূত্রমতে, হিরণ পয়েন্ট ও দুবলারচরের চেয়ে এ বছর আন্ধারমানিক, কচিখালী, কটকা, ডিমেরচর, জামতলা সী বিচে পর্যটকের আগমন বেশি। তবে এ বছর বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা কম। পর্যটন স্পটগুলোতে প্রতিদিন ৭-৮টি ছোট-বড় ভেসেল জাহাজ নোঙন করতে দেখা গেছে।
পর্যটকদের কাছে সরাসরি সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী দেখা রোমাঞ্চকর। আন্ধারমানিক, কচিখালী, কটকা, ডিমেরচর, জামতলা সী বিচে যাওয়ার পথে দেখা মিলেছে, বানর ও হরিণের দলবদ্ধ ছোটাছুটি, বন্য শুকর, সুন্দরবনের বিলুপ্ত প্রায় বিশাল আকৃতির মদনটাক ও ঈগল পাখি। করমজলের খালের পাড়ে বিশাল আকৃতির কুমিরকে রোদ পোহাতে ও আরেকটি কুমিরকে পানিতে ভেসে থাকতে দেখা যায়। যা সবাইকে রোমাঞ্চিত করে। এছাড়াও নদীতে ডলফিনের ডুব সাতার ছিল হৃদয়কাড়া। সুন্দরবনের নদী, খালে সাদা বক, মাছরাঙা, শঙ্খচিল, গাংচিলের মাছধরা ও উড়াউড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। সুন্দরবনের লক্ষিপেঁচা, দোয়েল, মৌটুসিসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলরবও মনোমুগ্ধকর।
সুন্দরবনে খুলনা প্রেস ক্লাব থেকে আসা পর্যটক কেএম জিয়াউস সাদাত জানান, সরাসরি সুন্দরবনের জীব-জন্তু দেখে অনেক আনন্দ উপভোগ করা যায়। যা অন্য কোনোভাবে সম্ভব না।
অপর পর্যটক সোহেল মাহমুদ জানান, সরাসরি সুন্দরবনের হরিণ, কুমির, বানর এবং অন্যান্য পশুপাখির দেখা পাওয়া রোমাঞ্চকর। বনের জীববৈচিত্র্য বাঁচিয়ে রাখা দরকার। একইভাবে পর্যটক কাজী শামীম আহমেদ জানান, সুন্দরবনের অনেক জায়গার বন উজাড় করা হয়েছে। এ কারণে বন্যপ্রাণীও আগের মতো দেখা পাওয়া যায় না। তবে তারপরও যা দেখা যায়, তার অনুভূতি অন্যরকম।
বনরক্ষী দিলীপ জানান, সুন্দরবনে হরহামেশা বানর, হরিণ, শুকর দেখা যায়। তবে খুব একটা বাঘ-কুমির দেখা যায় না। যে সব পর্যটকের চোখে বাঘ-কুমির পড়ে তারা ভাগ্যবান।
বনবিভাগ সূত্র জানায়, আগে সুন্দরবনের হারবাড়িয়া, কচিখালি, কটকা, হিরণ পয়েন্ট, দুবলারচর, কলাগাছিয়া ও করমজল— এই সাতটি স্থানে পর্যটন স্পট ছিল। নতুন করে শরণখোলার আলীবান্ধা, চাঁদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিক, খুলনা রেঞ্জের শেখেরটেক ও কৈলাশগঞ্জে আরো চারটি পর্যটন স্পট হয়েছে।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের (টোয়াস) সাধারণ সম্পাদক এবং রূপান্তর ইকোট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান ডেভিড বলেন, লাক্সারি লঞ্চগুলোতে ভালো পর্যটক হচ্ছে। তবে ছোট ছোট লঞ্চে তেমন পর্যটক নেই। আন্ধারমানিক, কচিখালি ও কটকা পর্যটন কেন্দ্রে এ বছর পর্যটকদের আগ্রহ বেশি। এছাড়া সুন্দরবনের প্রবেশমুখ করমজল পর্যটন স্পটে স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরা বেশি যাচ্ছেন।
সুন্দরবন বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দে বলেন, ‘‘পর্যটনের জন্য বনবিভাগের পক্ষ থেকে রাজস্ব টার্গেট থাকে না। আমরা চাই, সহনশীল মাত্রায় সুন্দরবনে পর্যটক আসুক। যাতে করে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের উপর বিরূপ প্রভাব না পড়ে।’’
ঢাকা/বকুল