ঢাকা     শুক্রবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩২

গোপালগঞ্জে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ ৩ জনের নামে মামলা

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ২০:২৪, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
গোপালগঞ্জে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ ৩ জনের নামে মামলা

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে তৎকালীন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এবং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ‍দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুদক গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক আল আমিন ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার আসামিরা হলেন- টুঙ্গিপাড়া উপজেলার তৎকালীন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম, ডুমুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলী আহম্মেদ ও একই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কবির তালুকদার।

আরো পড়ুন:

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুদক জানায়, অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিনে অভিযান চালিয়ে প্রাপ্ত তথ্য, সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্য অনুসন্ধানকালে সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা-কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় বিশেষ বরাদ্দ দ্বারা বাস্তবায়িত ২৬টি প্রকল্পের মধ্যে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ২১ নং প্রকল্প চর গোপালপুর ওয়াবদা রাস্তা থেকে পাতিলঝাপা অনন্ত বৈদ্যর বাড়ি হয়ে ভেন্নাবাড়ি বৈদ্যবাড়ি পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণ ও প্যালাসাইডিং করণ কাজটি কাবিখা-কাবিটা নীতিমালার আওতায় শ্রমিক দ্বারা করানো হয়েছে মর্মে দেখানো হয়।
 
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বছরের জুন মাসের ৩ তারিখ থেকে একই মাসের ১২ জুন পর্যন্ত ২ হাজার ১৬০ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে মাস্টার রোল সম্পন্ন করে ১ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা বিল উত্তোলন করা হয়। এরপর ২০২৪ সালের ১৩ জুন হতে ১৭ জুন পর্যন্ত ২ হাজার ১৬০ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে মাস্টার রোল সম্পন্ন করে দ্বিতীয় বিল বাবদ মোট ৬৮ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা উত্তোলন করা হয়। ১৮ জুনের পর আরো পাঁচ দিন ৫৯০ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ সম্পন্ন হয়েছে দেখিয়ে মাস্টার রোল সম্পন্ন করে ওই বছরেরই ২৪ জুন তৃতীয় ও চূড়ান্ত বিল বাবদ মোট ৬৮ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকাসহ সর্বমোট তিন দফায় ২ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। টাকা উত্তোলন করা হলেও ৫০ লাখ টাকার প্যালাসাইডিং কাজের মধ্যে ৩৪ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকার কাজ না করায় উক্ত টাকা ২০২৪ সালের অক্টোবরে ৩০ তারিখ সোনালী ব্যাংকে চালানের মাধ্যমে ১-৪৯০১-০০০১-২৬৭১ কোডে জমা করা হয়। ২৪ জুন বরাদ্দকৃত সমুদয় ২ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। 

এরপর মাস্টার রোলের সঙ্গে সমন্বয় করে গত অক্টোবরের ৩০ তারিখ ৩৪ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়। অর্থাৎ কাজ না করেও বিল উত্তোলন করে প্রায় চার মাসে ৩৪ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকা সাময়িক আত্মসাৎ করা হয়েছিল মর্মে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়।রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা-কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় বিশেষ বরাদ্দ দ্বারা বাস্তবায়িত ২৬ প্রকল্পের মধ্যে ৪৭ লাখ ২২ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৩ নং প্রকল্প ‘পাকুরতিয়া পান্না শেখ এর বাড়ি হতে ছোট ডুমুরিয়া দেবেন মণ্ডলের বাড়ির কাছে এইচবিবি রোড পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণ ও প্যালাসাইডিং করণ কাজটি কাবিখা-কাবিটা নীতিমালার আওতায় শ্রমিক দ্বারা করানো হয়েছে মর্মে দেখানো হয়। ২০২৪ সালের ৩ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত ২৫০ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে মাস্টার রোল সম্পন্ন করে প্রথম বিল বাবদ ২৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা ও ২৪ জুন চূড়ান্ত বিল বাবদ ১১ লাখ ৮০ হাজার ৫০০ টাকাসহ মোট ৪৭ লাখ ২২ হাজার টাকার বিল উত্তোলন করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, প্রকল্প দুইটি সরেজমিন পরিমাপ গ্রহণ করা হলে দেখা যায়, ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলে রাস্তা তৈরি করায় সাধারণ মানুষের ব্যবহার উপযোগী নেই। অর্থাৎ রাস্তায় বালির পরিমাণ বেশি ও মাটির পরিমাণ অত্যাধিক কম। ড্রেজার দিয়ে বালু পরিবহন করায় দূরে থেকে শ্রমিক দিয়ে মাটি আনার খরচ লাগেনি। কিন্তু উক্ত খাতে বিল বাবদ অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। অতিরিক্ত লিড, ম্যানুয়েল কম্পেকশন, লেভেলিং, ড্রেসিং, ক্যাম্বারিং, পার্শ্ব ঢাল ঠিক করণ, শক্ত, কাদা, বালি মাটির জন্য অতিরিক্ত ব্যয় বাবদ বিল উত্তোলন করা হলেও রাস্তায় উক্ত কাজসমূহ করার তথ্য পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী বর্ণিত আসামিগণ অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ না করে ভুয়া মাস্টাররোল প্রস্তুতপূর্বক দাখিলের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করত: অর্থ উত্তোলন করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

ঢাকা/বাদল/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়