ঢাকা     রোববার   ৩০ মার্চ ২০২৫ ||  চৈত্র ১৭ ১৪৩১

মেয়ে ধর্ষণের ঘটনায় মায়ের আত্মহত্যার চেষ্টা: ৪ জনকে আসামি করে মামলা

শেরপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪৪, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ১৯:৫০, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
মেয়ে ধর্ষণের ঘটনায় মায়ের আত্মহত্যার চেষ্টা: ৪ জনকে আসামি করে মামলা

গত শুক্রবার দুপুরে কিশোরীটি তার ৩-৪ জন বান্ধবীর সঙ্গে ঝিনাইগাতীর গজনী অবকাশকেন্দ্রে বেড়াতে যায়।

বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী গজনী অবকাশ পর্যটন বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক মাদ্রাসাছাত্রী। এ ঘটনায় চার জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

প্রথমদিকে লোক লজ্জার ভয়ে ধর্ষণের কথা গোপন করলেও পরে ওই শিক্ষার্থী এক নারী পুলিশের কাছে ধর্ষণের কথা স্বীকার করলে পুলিশ ধর্ষণ মামলা গ্রহণ করে। 

এ ঘটনায় লোক-লজ্জায় বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন ধর্ষণের শিকার ওই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মা। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকেলে জেলার ঝিনাইগাতীর গজনী অবকাশকেন্দ্রের পাশের জঙ্গলে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। 

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় উপজেলার কাংশা ইউনিয়নে মেয়েটির মা বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ওই নারী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী (১৪) উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের একটি গ্রামের এক দরিদ্র কামারের মেয়ে। সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। এ ঘটনায় ১৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার অভিযুক্ত মো. ইলিয়াছকে (২৫) প্রধান আসামি করে মোট চার জনের নামে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের হয়েছে। 

বাকি আসামিরা হলো- মো. আবু সাঈদ, রাশেদুল ইসলাম ও মতিন মিয়া। গতকাল বুধবার ওই শিক্ষার্থীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. আল আমিন।

পুলিশ ও ওই নারীর স্বামীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত শুক্রবার দুপুরে কিশোরীটি তার ৩-৪ জন বান্ধবীর সঙ্গে ঝিনাইগাতীর গজনী অবকাশকেন্দ্রে বেড়াতে যায়। সেখানে ওই কিশোরীর সঙ্গে পূর্বপরিচিত মো. ইলিয়াছের (২৫) দেখা হয়। একপর্যায়ে ইলিয়াছ তার তিন সহযোগীর সহায়তায় কিশোরীটিকে অবকাশকেন্দ্রের জঙ্গলের ভেতরে নিয়ে ধর্ষণ করে। তার ডাকচিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে কিশোরীটিকে উদ্ধার করেন এবং বাড়িতে পৌঁছে দেন।

ওই ঘটনার পর গতকাল দুপুরে মেয়ের ধর্ষণের ঘটনা জানতে পারেন তার মা। এছাড়াও এলাকায় বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মুখে মুখে। এতে লজ্জা থেকে বাঁচতে ময়েটির মা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। পরে বিকেলে সবার অগোচরে বাড়ির অদূরে গারো পাহাড়ে যান এবং সেখানে বিষপান করেন। 

পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যরা তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। এক পর্যায়ে অচেতন অবস্থায় তাকে গারো পাহাড়ে পড়ে থাকতে দেখেন। প্রথমে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ঝিনাইগাতী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে রাতে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে আজ ভোরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে আত্মহত্যার চেষ্টাকারী ওই নারীর স্বামীর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, “আমার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তবে আরও কয়েকদিন হাসপাতালে থাকতে হবে। আমি ময়মনসিংহ থাকায় মামলার ব্যাপারে তেমন খোঁজখবর নিতে পারছি না। তবে আমি প্রশাসনের কাছে এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।” 

ডাক্তারি পরীক্ষার ব্যাপারে তথ্য নিশ্চিতের জন্য শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাসলিম আরিফ ও ডা. তাহেরাতুল আশরাফিকে একাধিকবার মোবাইলে ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল আমিন বলেন, “কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ওই কিশোরীকে গতকাল জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে বিস্তারিত জানা যাবে। তবে এ ঘটনায় ইলিয়াছ ও তার তিন সহযোগীদের আটকের চেষ্টা চলছে।”

ঢাকা/তারিকুল/এস


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়