পদ্মা-মেঘনায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে মধ্যরাতে
চাঁদপুর ও শরীয়তপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনাসহ পাঁচটি নদী অঞ্চল শরীয়তপুর, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল ও ভোলায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা জারি হবে। নিষেধাজ্ঞা চলবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত।
নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন জেলেরা পাবেন খাদ্য সহায়তার চাল। চাঁদপুরে নিবন্ধিত ৪০ হাজার জেলেকে চার কিস্তিতে ১৬০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। তবে সরকারি খাদ্য সহায়তা অপ্রতুল বলে দাবি জেলেদের।
ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ও নদীতে জাটকার নিরাপদ বিচরণ নিশ্চিতে ২০০৬ সাল থেকে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নদীতে সব প্রকার মাছ শিকার নিষিদ্ধ করে সরকার। নিষেধাজ্ঞার এই সময় চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভেরবী পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার এলাকায় জাল ফেলা, মাছ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অভয়াশ্রমে জেলেদের মাছ ধরা আটকাতে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলা টাস্কফোর্স।
নিষেধাজ্ঞা চলকালে পদ্মা ও মেঘনা নদীতে নিয়মিত জেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী অভিযান পরিচালনা করবে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে মাছ শিকার করতে গিয়ে ধরা পড়লে, কমপক্ষে এক বছর থেকে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানাসহ উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন জেলেরা বলে জানিয়েছে চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তারা।
চাঁদপুর সদর উপজেলার পুরান বাজার রনাগোয়াল এলাকার মেঘনা পাড়ের জেলে সফিক বলেন, “সরকার দুই মাস মাছ ধরতে নিষেধাজ্ঞা দিছে। সেই আদেশ আমরা মানব। ইতোমধ্যে নৌকা-জাল ওপরে উঠানোর প্রস্তুতি চলছে। সরকারের কাছে সবসময় দাবি থাকে, যাতে চালের সঙ্গে আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করে তারা। কারণ চালের সঙ্গে রান্না করতে তেল, নুন ও তরকারিসহ অন্যান্য জিনিসের দরকার হয়।’
আবদুর রহমান নামে অপর জেলে বলেন, “অধিকাংশ জেলে ধার-দেনা ও কিস্তিতে জর্জরিত। এই সময়ে কিস্তি বন্ধ থাকলে আমরা উপকৃত হব। প্রশাসন যদি কিস্তি বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করে তাহলে আমাদের ওপর চাপ কমবে।”
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, “জাটকা রক্ষায় জেলে পাড়াগুলোতে প্রচার প্রচারণা চালানো হয়েছে। জেলেদের জন্য নির্ধারিত বিজিএফ-এর চাল বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে। মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের মতোই জাটকা রক্ষা অভিযান কঠোর হবে। অভয়াশ্রমে অসাধু জেলেরা যাতে কোনোভাবেই নদীতে নামতে না পারে, সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে মৎস্য বিভাগ।”
তিনি আরো বলেন, “নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে যাতে জেলেদেও ওপর কিস্তির চাপ না আসে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে।”
শরীয়তপুর:
শরীয়তপুর জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন জেলার নড়িয়া উপজেলার চন্ডিপুর থেকে ভেদরগঞ্জের কাচিকাটা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকায় নিবন্ধিত প্রায় ২৫ হাজার ৮২৬ জন জেলে সব ধরনের মাছ ধরা থেকে বিরত থাকবেন। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে নদী তীরবর্তী এলাকা ও হাট বাজারগুলোতে মাইকিং, লিফলেট ও পোস্টারের মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়েছে। কার্ডধারী ১৫ হাজার ৪৬৫ জন জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল বরাদ্দ করে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে।
শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল হাসান বলেন, “শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চন্ডিপুর থেকে ভেদরগঞ্জের কাচিকাটা পর্যন্ত পদ্মা নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকা ইলিশের অভয়াশ্রম। মার্চ-এপ্রিল দুই মাস এ এলাকায় সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ। আইন বাস্তবায়নে মাইকিং, সচেতনতামূলক সভা ও প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ১৫ হাজার ৪৬৫ জন জেলেকে প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চাল সহায়তা দেওয়া হবে। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জাটকা বড় হওয়ার সুযোগ পাবে এবং ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
ঢাকা/অমরেশ, সাইফুল /মাসুদ