ভাটফুলের সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ প্রকৃতি
ফরিদপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

এই ফুলের সৌরভে আকৃষ্ট হয়ে প্রজাপতি, মৌমাছি ও নানা প্রজাতির পতঙ্গের আনাগোনাও বেড়েছে।
ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকায় প্রকৃতির অলংকার হয়ে থোকায় থোকায় ফুটে রয়েছে ভাটফুল। এই ফুলটি বনজুঁই, ভাটিফুল, ঘেটু ফুল বা ঘণ্টাকর্ণ নামেও পরিচিত। ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে ফুটে থাকা এই ফুলের সৌন্দর্য ও মিষ্টি সুবাসে মুগ্ধ হন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
ফরিদপুরের ঝোপঝাড়, জঙ্গল, রাস্তার ধার এমনকি পরিত্যক্ত জমিতেও ভাটিফুলের ছড়াছড়ি চোখে পড়ার মতো। এই ফুলের সৌরভে আকৃষ্ট হয়ে প্রজাপতি, মৌমাছি ও নানা প্রজাতির পতঙ্গের আনাগোনাও বেড়েছে।
ফরিদপুর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বসন্তের আগমনে পলাশ-শিমুলের পাশাপাশি ভাটিফুলও প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তোলে। এই ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Clerodendrum viscosum। এটি গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ, যার উচ্চতা সাধারণত ২ থেকে ৪ মিটার পর্যন্ত হয়। গাছের পাতা পানপাতার মতো খসখসে এবং ডালের শীর্ষে থোকায় থোকায় সাদা ও বেগুনি মিশ্রিত রঙের ফুল ফোটে। ফুলের মিষ্টি গন্ধ রাতেও পরিবেশকে সুগন্ধময় করে তোলে।
ভাটিফুল শুধু সৌন্দর্যের প্রতীকই নয়, এটি একটি ভেষজ উদ্ভিদও বটে। গ্রামাঞ্চলে এর পাতা, ফল ও মূল জ্বর, চর্মরোগ, সাপের কামড় এবং অ্যাজমার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এছাড়া সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এই ফুল দিয়ে পূজা-অর্চনাও করেন।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ময়না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কালিপদ চক্রবর্তী বলেন, “ভাটিফুল সৌন্দর্য প্রেমীদের মুগ্ধ করে। রাস্তার দুপাশে থোকায় থোকায় ফুটে থাকা এই ফুল পথচারীদের মনে বাড়তি আনন্দ দেয়। ফাল্গুন মাসে প্রকৃতিতে এই ফুলের আবির্ভাব পরিবেশে নতুন মাত্রা যোগ করে।”
স্থানীয়রা জানান, আগের তুলনায় এখন ভাটিফুলের দেখা কম মিলছে। অযত্নে বেড়ে ওঠা এই ফুলের সৌন্দর্য এখনও বাংলার প্রকৃতিকে মুগ্ধ করলেও এর সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশও তার ‘বাংলার মুখ’ কবিতায় ভাটিফুলের সৌন্দর্যকে অমর করে রেখেছেন।
ফরিদপুরের প্রকৃতিতে ভাটিফুলের এই অপরূপ সৌন্দর্য শুধু চোখই জুড়ায় না, মনে করে দেয় বাংলার ঐতিহ্য ও প্রকৃতির অকৃত্রিম সৌন্দর্যের কথা। এই ফুলের সৌরভও সৌন্দর্য যেন বাংলার প্রকৃতির এক অনন্য উপহার।
ঢাকা/তামিম/এস