ঢাকা     শনিবার   ২৯ মার্চ ২০২৫ ||  চৈত্র ১৬ ১৪৩১

ব্যস্ততা বেড়েছে রাঙামাটির তাঁত কারখানাগুলোতে

শংকর হোড়, রাঙামাটি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৪, ২৫ মার্চ ২০২৫   আপডেট: ১৪:৩৯, ২৫ মার্চ ২০২৫
ব্যস্ততা বেড়েছে রাঙামাটির তাঁত কারখানাগুলোতে

রাঙামাটির একটি তাঁত শিল্পের দোকান

আর মাত্র ছয়দিন পর পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়েছে রাঙামাটির তাঁত কারখানাগুলোতে। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কারখানায় পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁতীরা। রাঙামাটি শহরে ছোট-বড় প্রায় ২০টি তাঁত কারখানা রয়েছে।

রাঙামাটির তাঁত কারখানাগুলোর ব্যস্ততা মূলত একটু ভিন্ন হয়ে থাকে। ঈদের ছুটিতে পার্বত্য এই জেলাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে তাঁতীরা পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই জেলায় তাঁতের তৈরি পাঞ্জাবির চাহিদা রয়েছে স্থানীয়দের কাছে।

আরো পড়ুন:

রাঙামাটি শহরের আসামবস্তি, স্বর্ণটিলা ঘুরে দেখা যায়, তাঁতীরা পোশাক তৈরির কাজ করছেন। তাদের দম ফেলার ফুসরত নেই। চাহিদা বেশি থাকায় পোশাক তৈরির তাগিদও বেশি। এখানকার ঐতিহ্যবাহী পিনন-হাদি, তাঁতের পাঞ্জাবি, ফতুয়া, জামা ও রুমালসহ আরো বিভিন্ন রকমের তাঁত পণ্যের চাহিদা থাকে পর্যটকদের কাছে। একশো ভাগ কটনের তৈরি এসব কাপড় পরিধানে যেমন আরাম তেমনি এর দাম অন্যান্য তাঁত পণ্যের তুলনায় অনেক বেশি।

তাঁতী রিতা মারমা বলেন, ‍“সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করছি। ওভারটাইম কাজ চলছে। ঈদে পর্যটকদের জন্য বাড়তি পণ্যের চাহিদা থাকে। সেটা যোগান দিতে রাতদিন কাজ চলছে। আমাদের ভালোই ইনকাম হচ্ছে।”

ফরিদা আখতার নামে অপর তাঁতী বলেন, “আমাদের মজুরি হয় কাজ অনুযায়ী, অর্থাৎ যতটা কাজ বুঝিয়ে দিতে পারি সেই অনুযায়ী মজুরি পাই। বর্তমানে কাজের চাপ বেশি, তাই মজুরিও ভালো পাচ্ছি।”

আরএস টেক্সটাইলের মাস্টার রনি মারমা বলেন, “ঈদে ব্যস্ততা খুব বেশি। চাহিদা অনুযায়ী পণ্য তৈরি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পাঞ্জাবি, ফতুয়া, থ্রি-পিস এসব পণ্যের চাহিদা বেশি। কারখানায় উৎপাদিত পণ্য চলে যাচ্ছে তাঁতের শো-রুমগুলোতে। শহরের তবলছড়ি টেক্সটাইল মার্কেট, রিজার্ভ বাজার, কাঁঠালতলী ও পর্যটনে টেক্সটাইল দোকানগুলো ভরে উঠেছে নিত্য নতুন পণ্যে। রমজান মাসে পর্যটক নেই, যে কারণে বিক্রিও নেই। তবে ঈদকে সামনে রেখে দোকানগুলোতে এখন সাজসাজ রব। প্রতিদিনই দোকানে আসছে নতুন নতুন কালেকশন। শো-রুমের কর্মীরা নতুন পণ্যে দোকান সাজাতে ব্যস্ত।”

তাঁতের পোশাকের দোকানের বিক্রয়কর্মী সবিতা চাকমা বলেন, “রমজান মাসে পর্যটক না থাকায় বেচাকেনা থাকে না। ঈদে ছুটিতে পর্যটক আসলে তখন বেচাবিক্রি ভালো হয়। এবছর যেহেতু টানা ৯দিন ছুটি রয়েছে, তাই প্রচুর পর্যটক আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এবারও বিক্রি ভালো হবে বলে আশা করছি।”

রাঙামাটি টেক্সটাইল মালিক সমিতির সভাপতি বাবলা মিত্র বলেন, “চাহিদা থাকায় পর্যটকদের জন্য নিত্যনতুন ডিজাইনের পোশাক তৈরি হচ্ছে। পর্যটকরা ঈদের ছুটিতে আসলে আত্মীয় ও প্রিয়জনদের জন্য উপহার হিসেবে এখানকার তাঁত পণ্য নিয়ে যান। এজন্য এসময় তাঁতের পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে।”

তিনি আরো বলেন, “চাহিদা অনুযায়ী কারখানাগুলোতে উৎপাদনের চাপ বেশি। রং, সুতার দাম বৃদ্ধির কারণে এই খাতে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যগুলো ১০০ ভাগ কটনের তৈরি, তাই দামও বেশি পড়ে। অনেক শো-রুমে বর্তমানে অন্য জেলার কম দামের পণ্য বিক্রি করছে, যা নিন্মমানের। দাম কম হওয়ার কারণে অনেকেই ওই সব পণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন, যা জেলার পণ্য হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করে না।” 

বাবলা মিত্র বলেন, “যেসব পর্যটক পণ্যের কদর বোঝেন তারা স্থানীয় তাঁতের তৈরি পণ্য দাম বেশি হলেও কিনছেন। পর্যটকদের স্থানীয় তাঁত পণ্য দেখে মানসম্মত পণ্য কেনার অনুরোধ করছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়