ঢাকা     সোমবার   ৩১ মার্চ ২০২৫ ||  চৈত্র ১৮ ১৪৩১

জমির ভাগ নিয়ে সন্তানদের দ্বন্দ্ব, ১৬ ঘণ্টা পড়ে ছিল বাবার মরদেহ

যশোর (অভয়নগর) সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০৩, ২৭ মার্চ ২০২৫   আপডেট: ২২:২৮, ২৭ মার্চ ২০২৫
জমির ভাগ নিয়ে সন্তানদের দ্বন্দ্ব, ১৬ ঘণ্টা পড়ে ছিল বাবার মরদেহ

বাড়ির উঠানে জমির ভাগ নিয়ে সালিসে ব্যস্ত সন্তানেরা। ইনসেটে খাটিয়ায় হাবিবুর রহমানের মরদেহ

বাড়ির উঠানে বাবার মরদেহ রেখে জমির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে সালিসে ব্যস্ত সন্তানেরা। সালিস বৈঠক শেষে ১৬ ঘণ্টা পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, মেম্বার ও এলাকাবাসীর হস্তক্ষেপে মরদেহের দাফন করা হয়।

বুধবার (২৬ মার্চ) ভোর ৬টার দিকে হাবিবুর রহমান বিশ্বাস (৭২) নামের ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। এরপর দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা বাড়ির উঠানে পড়ে ছিল তার মরদেহ। রাত ১০টার দিকে তাকে দাফন করা হয়। সন্তানদের এমন কীর্তিতে হতবাক হয়েছেন গ্রামবাসী।

ঘটনাটি ঘটেছে যশোরের অভয়নগর উপজেলার চলিশিয়া ইউনিয়নের কোটা গ্রামের পূর্বপাড়া এলাকায়। হাবিবুর রহমান বিশ্বাস পেশায় কৃষক ছিলেন। তার চার স্ত্রী ও নয় সন্তান রয়েছে।

আরো পড়ুন:

স্থানীয়রা জানান, হাবিবুর রহমান দীর্ঘদিন ছোট স্ত্রী ও তার ছেলে সোহেল বিশ্বাসের সঙ্গে কোটা গ্রামে বসবাস করতেন। মৃত্যুর পূর্বে ছোট স্ত্রীর নামে ৮৩ শতাংশ জমি লিখে দেওয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পর্যায়ে কয়েকবার সালিসের আয়োজন করেছিলেন অন্য স্ত্রী ও সন্তানেরা। কিন্তু, নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন হাবিবুর রহমান।

বুধবার বার্ধক্যজনিত কারণে হাবিবুরের মৃত্যুর খবরে বাড়িতে আসেন অন্য স্ত্রীর ছেলে আতাউর রহমান, সুমন, আনোয়ার ও হাফিজুর। এসময় জমি সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত বাবার মরদেহ দাফনে বাধা সৃষ্টি করেন তারা। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, মেম্বার ও এলাকাবাসীকে ডেকে বাড়ির উঠানের এক পাশে সালিস বসানো হয়। সে সময় বাড়ির উঠানে খাটিয়ার ওপর হাবিবুর রহমানের মরদেহ পড়ে ছিল দীর্ঘ সময়।

মৃতের ছেলে সোহেল বিশ্বাস বলেন, ‘‘বাবার কবর পর্যন্ত খুঁড়তে দেয়নি সৎ ভাইয়েরা। আমার মায়ের নামে লিখে দেওয়া ৮৩ শতাংশ জমির মধ্য ৫০ শতাংশ তাদের নামে লিখে দেওয়ার শর্তে মুচলেকা দেওয়ার পর কবর খুঁড়তে ও দাফন করতে দেয় তারা।’’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘‘মৃত্যুর ১৬ ঘণ্টা পর বাবার মরদেহ দাফন করতে হয়েছে। আল্লাহ ওদের বিচার করবেন।’’

সালিসে উপস্থিত ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘‘জমি সংক্রান্ত বিরোধ সালিসের মাধ্যমে মীমাংসা করা হয়েছে। রাত ১০টার পর মরদেহের দাফন করা হয়েছে।’’

চলিশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সানা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘মরদেহ ফেলে রাখার ঘটনা দুঃখজনক। বিষয়টি জানার পর আমার প্রতিনিধি, মেম্বার ও এলাকাবাসী সালিসের মাধ্যমে তাদের পারিবারিক সমস্যার মীমাংসা করেছেন।’’

ঢাকা/প্রিয়ব্রত/রাজীব

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়