ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মুড়ি ভর্তা বিক্রি করে আয় অর্ধ লাখ টাকা

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৪, ১৫ এপ্রিল ২০২৫   আপডেট: ১৮:২৭, ১৫ এপ্রিল ২০২৫
মুড়ি ভর্তা বিক্রি করে আয় অর্ধ লাখ টাকা

ক্বারী মুহাম্মদ সুলতান

ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে মাদারীপুরে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে বিভিন্ন মসজিদে ইমামতি করেছেন ক্বারী মুহাম্মদ সুলতান। বিয়ে করার পরে সন্তানের জন্ম এবং এরপর সংসারে নেমে আসে অভাব। পরে গুরুজনের পরামর্শে কুমিল্লা শহরের কোটের মোড়ে ভ্রাম্যমাণ দোকানে পুরী, সিঙ্গারা, আলুর চপ, বেগুনি, পিঁয়াজু, ছোলা দিয়ে মুড়ি ভর্তা বিক্রি করে চলছে তার সংসার। এতে প্রতিদিন তার বিক্রি হয় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। খরচ বাদে প্রতিমাসে আয় করেন অর্ধ লাখ টাকা।

মাদারীপুর পৌর শহরের পুরাতন কোটের মোড়ে ভ্রাম্যমাণ দোকান করেন বরগুনা জেলার পাথরঘাটা এলাকায় হাফেজ ক্বারী মুহাম্মদ সুলতান। স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তার সংসার। লেখাপড়া শেষে ১৯৯০ সালে জীবনের তাগিদে চলে আসেন মাদারীপুরে। সন্তাননেরা বড় হওয়ায় মসজিদ থেকে যতটুকু সম্মানী পেতেন তাতে সংসার চলা বড়ই দুষ্কর।

২০১২ সালে ৩ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ভ্রাম্যমাণ মুড়ির দোকান দেন। পরে সেখানে ভালো বিক্রি হওয়ায় সিঙ্গারা, পিয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি ও মুড়ি ভর্তা বিক্রি শুরু করেন। পর থেকে তার আর তাকে পিছনে তাকাতে হয়নি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতিতে যেখানে প্রত্যেকটা পণ্যের দাম বাড়লেও এখনো তিনি ৫ টাকা হারে এ সকল খাবার বিক্রি করে যাচ্ছেন। এ সকল খাবার বিক্রি করে যে টাকা লাভ হয়, তা দিয়ে সংসার পরিচালনা করেন। জমানো টাকা দিয়ে হজ্ব করেছেন তিনি ও তার স্ত্রী।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দুপুর ৩টা থেকে শুরু করে রাত ১০টা পর্যন্ত তার এই খাবার বিক্রি চলে। এই খাবারের জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ প্রতিনিয়তই ভিড় করে। কেউ রিকশায় বসে, কেউ পাশে দাঁড়িয়ে খান। কেউ আবার বাড়ির জন্য নিয়ে যান প্যাকেটে করে।

স্থানীয়রা জানান, এখানকার যুগে ভেজাল খাদ্যের অভাব নেই। কিন্তু এই হুজুর যা বিক্রি করেন এগুলো ভালো মানের খাবার। তার খাবারে ভেজাল নেই। প্রতিদিনের খাবার প্রতিদিনই শেষ হয়ে যায়। অনেক সুস্বাদু খাবার হয়।

মুড়ি ভর্তা খেতে আসা শরীয়তপুরের রুবেল আহমেদ জানান, তিনি কাজ শেষে মাঝে মাঝেই এই হুজুরের দোকানে মুড়ি ভর্তা খেতে আসেন। তার এই মুড়ি ভর্তা অনেক সুস্বাদু হয়। এ রকম ভালো করে কেউ বানাতে পারে না।

মুড়ি খেতে আসা আসাদ ও সাব্বির জানান, এই হুজুর অনেক সুন্দর মুড়ি বানান। তার পিঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, পুরি সুস্বাদু হয়। 

বিক্রেতা ক্বারী মুহাম্মদ সুলতান জানান, ইমামতি করে যা পেতেন, এতে সংসার চলা দুষ্কর হয়ে পড়েছিল। কোটের মোড়ে ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়ে পুরি, সিঙ্গারা বিক্রি করে ভালো লাভ হচ্ছে। এ টাকা দিয়ে মেয়েদের হাফেজ এবং ক্বারী বানিয়েছেন। ছেলেদের মাওলানা বানাতে পারেছেন। মহান আল্লাহতালার কাছে শুকরিয়া আদায় করেন তিনি। 

তিনি বলেন, ‘‘আল্লাহ তাআলার রহমতে এ ব্যবসায় আমার সফলতা এসেছে। আমার এই সফলতা দেখে অনেকে কিছু করার জন্য আগ্রহী হচ্ছেন।’’

ঢাকা/বকুল

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়