ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

কুড়িগ্রামের ৭ জেলে ৬ মাস ভারতের কারাগারে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫১, ১৭ এপ্রিল ২০২৫   আপডেট: ১৭:২০, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
কুড়িগ্রামের ৭ জেলে ৬ মাস ভারতের কারাগারে

ভারতের কারাগারে থাকা ৫ জেলে

মাছ ধরতে গিয়ে ৬ মাস ধরে ভারতের জেলে আটকা রয়েছেন কুড়িগ্রামের ৭ জন জেলে। জেলার রাজিবপুর উপজেলার জিঞ্জিরাম নদী হয়ে ভারতের অভ্যন্তরে মাছ ধরতে গিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতীয় হাজতে আটক রয়েছেন তারা। এই ৭ জন জেলের বাড়ি কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলায়। দীর্ঘ ৬ মাস ধরে হাজতে আটক থাকলেও কীভাবে তাদের ফেরানো যায়, তা নিয়ে কূল-কিনারা করতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা।

২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর তাদের আটক করে ভারতীয় সীমান্তবাহিনী বিএসএফ। এরপর থেকে তাদের কোনো খোঁজ পাচ্ছিল না জেলে পরিবারের সদস্যরা।

আরো পড়ুন:

সম্প্রতি ভারতের আমপাতি জেলার মাহিন্দগঞ্জ থানার তুরা মেঘালয় থানা এলাকার এক বাসিন্দার মাধ্যমে গোপনে পাঠানো চিঠির মাধ্যমে তাদের সন্ধান মেলে। আটক জেলেরা হলেন, চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের হরিনের বন্দ এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫), রমনা ব্যাপারী পাড়া এলাকার বাহাদুর মিয়ার ছেলে বিপ্লব মিয়া (৪৫), শামছুল হকের ছেলে মীর জাহান আলী (৪৫), মৃত এছাহক আলীর ছেলে বকুল মিয়া (৩২), পকের আলীল ছেলে আমির আলী (৩৫), রাজিবপুর উপজেলার বালিয়ামারী ব্যাপারী পাড়ার জরিপ উদ্দিনের ছেলে আঙ্গুর হোসেন (২০) ও রৌমারী উপজেলার যাদুর চর বকবান্ধা এলাকার ছলিম উদ্দিনের ছেলে চাঁন মিয়া (৬০)।

রমনা মডেল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রুকুনুজ্জামান স্বপন বলেন, হাজতে আটকরা পেশায় জেলে। তারা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বৈধভাবে ভারতে গিয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তারা বৈধভাবে যেতে না পেরে অবৈধভাবে মাছ ধরতে গিয়ে আটক হন।

গোপনে স্ত্রীকে পাঠানো মীর জাহান আলীর চিঠির মাধ্যমে জানা যায়, বর্তমানে তারা মেঘালয়ের কালাইর চর পেট্রোল থানা আমপাতিতে রয়েছেন। চলতি মাসে তাদের হাজত থেকে ছাড়িয়ে নিতে না পারলে তাদের স্থায়ী সাজা দেওয়া হবে। আটক জেলে পরিবারগুলো উৎকণ্ঠতায় দিন কাটাচ্ছে।

আটক জেলেদের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত বছরের ৩ নভেম্বর জেলেরা মাছ ধরার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এরপর থেকে তাদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। সম্প্রতি ভারতের আমপাতি জেলার মাহিন্দগঞ্জ থানার তুরা মেঘালয় থানা এলাকার এক বাসিন্দার মাধ্যমে গোপনে পাঠানো চিঠির মাধ্যমে তাদের সন্ধান মেলে।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা বলেন, ‘‘জেলেদের সন্ধান পাওয়ার পর চেয়ারম্যান, ইউএনও ও ডিসি মহোদয়ের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি। ছাড়িয়ে আনতে তারা আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা চাই যেন দ্রুত তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।’’   

আটক জেলে মীর জাহানের স্ত্রী ববিতা বেগম বলেন, ‘‘ঘরে খাবার নেই। আমার স্বামী কোনোরকম সংসার চালাতে বলে মাছ শিকার করতে চলে যান। পরে জানতে পারি, তারা ভারতে আটক হয়েছেন। সন্তানদের মুখে ঠিকভাবে খাবার দিতে পারছি না। বড় সন্তানকে আমার বাবার বাড়িতে রেখে এসেছি।’’

আরেক আটক জেলের স্ত্রী কাজলী বেগম বলেন, ‘‘আমরা গরীব মানুষ। নদীতে মাছ শিকার করা আমাদের পেশা। প্রতি বছর আমার স্বামী বৈধভাবে ভারতে গেলেও এবার ব্যতিক্রম ঘটে। গত ৩ নভেম্বর মাছ শিকার করতে গিয়ে ভারতে আটক হন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতের একটি গণমাধ্যমের বরাতে জানতে পেরেছি। ছেলে-মেয়ে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি।’’ 

রমনা মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম আশেক আঁকা বলেন, ভারতের জেলে থাকা জেলেদের রাজিবপুরের জিঞ্জিরাম নদীর সীমান্ত এলাকা থেকে আটক করা হয়। ভুক্তভোগীদের সহযোগিতার চেষ্টা করা হচ্ছে। 

চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক জানান, জেলেদের ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

ঢাকা/সৈকত/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়