পারশে মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন
তৃপ্তি || রাইজিংবিডি.কম
পারশে মাছ ও রেণু
উপজেলা প্রতিনিধি
পাইকগাছা (খুলনা), ২৫ মার্চ : বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পাইকগাছা লোনাপানি কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা পারশে মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন। পাইকগাছা লোনাপানি কেন্দ্রে মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবনে এটা দ্বিতীয় সাফল্য।
বিজ্ঞানীরা জানান, পরিপক্ক পারশে মাছ অপ্রাণিভোজী হলেও পোনার প্রাথমিক খাদ্য অতিক্ষুদ্র জীবন্ত প্রাণিকণা। তাই হ্যাচারিতে কৃত্রিম প্রজননের পূর্বে পারশে মাছের পোনার ভক্ষণযোগ্য অতিক্ষুদ্র প্রাণিকণার চাষ এবং এই প্রাণিকণার খাদ্য হিসেবে এককোষী উদ্ভিদ চাষ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা হয়েছে।
হ্যাচারিতে অতিক্ষুদ্র জীবন্ত প্রাণিকণা ও এককোষী উদ্ভিদের চাষ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে ওয়ার্ল্ড ফিস সেন্টার কারিগরি সহায়তা দিয়েছে।
পাইকগাছা লোনাপানি কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস. বি. সাহা জানান, ২০০৬-০৭ সালে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পাইকগাছা লোনাপানি কেন্দ্রে কোর গবেষণা প্রকল্পের আওতায় লোনাপানি অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মাছসমূহের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবনের লক্ষ্যে গবেষণা শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে গ্রীষ্ম মৌসুমে প্রজনন-সক্ষম সুস্বাদু নোনা টেংরা মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়। এ কৌশল উদ্ভাবনের জন্য প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক প্রদান করেন।
পারশে মাছের প্রজননকাল শীত মৌসুম হওয়ায় এবং এ মাছের পোনার খাদ্যাভ্যাস নোনা টেংরার থেকে ব্যতিক্রম হওয়ায় কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এ মাছের পোনা উৎপাদন প্রক্রিয়া জটিল এবং সময়সাপেক্ষ।
ড. সাহা বলেন, আগামী শীত মৌসুমের আগেই পারশে মাছের পোনা উৎপাদন কৌশলের উৎকর্ষ সাধন ও চাষ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের লক্ষ্যে গবেষণা অব্যাহত রাখা হবে। পোনা উৎপাদন পরবর্তী চাষের পদ্ধতি উদ্ভাবনে সক্ষম হলে উপকূলীয় ঘেরে চিংড়ি চাষের পাশাপাশি পারশে মাছ চাষ করা সম্ভব হবে এবং এতে উপকূলীয় অঞ্চলে মাছ চাষে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
পারশে মাছ (Green back mullet) অতি সুস্বাদু। এ মাছের বৈজ্ঞানিক নাম ছিল লিজা সাবভিরিডিস (Liza subviridis ) এবং বর্তমান বৈজ্ঞানিক নাম চেলন সাবভিরিডিস (Chelon subviridis)। অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এ মাছের চাহিদা রয়েছে।
অগভীর উপকূলীয় জলাশয়, খাড়ি অঞ্চলে এবং প্যারাবনের জলাশয়ে এ মাছ পাওয়া যায়। পারশে মাছের প্রজনন স্বভাব অন্য মাছের চেয়ে কিছুটা বতিক্রমী। প্রাকৃতিক পরিবেশে শীত মৌসুমে (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) এ মাছ অধিক লবণাক্ত পানিতে প্রজনন করে থাকে। চাষের জন্য চাষীরা প্রাকৃতিক জলাশয় হতে এ মাছের পোনা সংগ্রহ করে থাকে। অতীতে প্রাকৃতিক জলাশয়ে এবং চিংড়ি ঘেরে এ মাছ পর্যাপ্ত পাওয়া যেত। কিন্তু নির্বিচার আহরণ ও পরিবেশগত কারণে প্রাকৃতিক জলাশয়ে এ মাছ তেমন আর পাওয়া যায় না। এ মাছের সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চাষাবাদের পদ্ধতি উদ্ভাবনে পাইকগাছা লোনাপানি কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা কয়েক বছর গবেষণা করছেন।
রাইজিংবিডি/তৃপ্তি/বকুল
রাইজিংবিডি.কম