ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সাইবার ক্রাইম করে ব্যবসা

মো. হৃদয় সম্রাট || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সাইবার ক্রাইম করে ব্যবসা

মো. হৃদয় সম্রাট : সুমাইয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী। মাঝেমধ্যে ক্লাসের নোট ফেসবুকের মাধ্যমে আদান-প্রদান করে। এছাড়াও অন্য সবার মতই রাতে মেতে থাকে বন্ধুদের সাথে ফেসবুক আড্ডায়। এই পুরোটা আনন্দের কারণ সে মনে করে তথ্য-প্রযুক্তি। যা তার জীবনকে সহজ করে দিয়েছে।

প্রতিদিনের মত আজও সে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার। তবে অভ্যাসবসত সকালে সে ফেসবুকে ঢুকতে গিয়ে দেখলো তার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড ভুল দেখাচ্ছে, বারবার পাসওয়ার্ড দেয়ার পরও সে ফেসবুকে ঢুকতে পারছে না।

তখনই তার সমস্যটার কথা বন্ধুদের বললো, তারা তাকে বোঝালো যে, তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে। হ্যাকাররা সাধারণত এই কাজগুলো করে থাকে এবং গুপ্ত কথা ফাঁস করে দেবার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করে। সুমাইয়ার কপাল ভালো ছিলো যে তার তেমন কোনো তথ্য সেখানে ছিলো না।

এভাবেই প্রতিনিয়ত ঘটছে সাইবার ক্রাইম। তথ্য হচ্ছে চুরি, করছে ব্যবহার, তবে খোঁজ পাচ্ছেন না আসল ব্যবহারকারী।

সাইবার ক্রাইম রোধ করার জন্য অনেক কাজ চলছে। তবুও প্রতিদিনই এই ক্রাইমের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সাইবার ক্রাইম বলতে বোঝায়, অবৈধ কোনো উদ্দেশ্যে যখন কোনো ব্যক্তির তথ্য অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা হয়। এটার মাধ্যমে মানুষ তথ্যগত অনিরাপত্তায় ভোগে।

বর্তমানে দেখা যায়, বিভিন্ন সফ্টওয়ার ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়ে নেয়। পরবর্তী সময়ে সেটা আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে পাচার করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা সাধারণ মানুষের  মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশে পাঠাও (মটর রাইডিং সফ্টওয়্যার) যেমন কোনো ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়া তাদের উপর নজরদারি করতো। ফেসবুককে ৫০০ কোটি ডলারের জরিমানা করা হয়েছিলো, শুধু এই তথ্য পাচারের জন্য। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে ফেসএ্যাপ নামে একটি মোবাইল সফ্টওয়্যার প্রায় ১৫ কোটি গ্রাহকের তথ্য সংরক্ষণ করেছে। যেটা ছিলো সম্পূর্ণভাবে অনৈতিক।

এভাবেই প্রতিদিন হাজারো সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে ব্যবহারকারীদের তথ্য, যা পরবতীতে অনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং যারা আসলে এই সকল অপরাধের সাথে জড়িত তারা আবার ধরা ছোয়ার বাইরে থাকছে ।

বর্তমানে সাইবার ক্রাইমের এই ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পেতে স্টামফোর্ড ‍ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সিএসসি বিভাগে সিনিয়র শিক্ষক জাবির হক জানান, বর্তমানে এই সাইবার ক্রাইমের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যদি সাইবার ক্রাইম সংখ্যা কমাতে হয়, তাহলে একটি পথই খোলা আছে, সেটি হল এই বিষয়ে সবাইকে সচেতন করা। তিনি বলেন, তবুও কিছু নিয়ম মানলে এই বিষয়গুলো কমানো সম্ভব । তাই তিনি কিছু দিক-নির্দেশনাও দিয়েছেন:

১. মোবাইলে লক ব্যবহার করা। ফলে যে কেউ চাইলেই আপনার ফোন ব্যবহার করতে পারবে না।

২. মাঝেমধ্যে আপনার অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন এবং শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।

৩. গুগল অথেনটিক যে ফিচারটি আছে সেটা ব্যবহার করুন।

৪. অ্যাকাউন্টে  ভেরিফিকেশন কোড ব্যবহার করুন।

৫. অপরিচিত মানুষের দেয়া কোনো লিঙ্কে ঢুকবেন না।

তিনি আরও বলেন, আসলে প্রতিদিনই প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটছে, সাথে উন্নত হচ্ছে নানাভাবে সাইবার ক্রাইম করার প্রভাব। তাই যদি নিজেরা সাবধান না হয়, তাহলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে যে কোনো দুর্ঘটনা।

এই তথ্য চুরি করে ব্যবসায়ীরা গড়ছে সম্পদের পাহাড়। এখন আর মানুষের কাছে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা লাগে না তাদের। ফেসবুক বা অন্য কোনো সোস্যাল মিডিয়ার উপর নজরদারি করলেই তার ব্যক্তিগত তথ্য সম্পর্কে জানতে পারে। ফলে তাদের রুচি সম্পর্কে বুজতে পারে কোম্পানীগুলো। এতে তাদের ব্যবসা আরও সহজ হচ্ছে। একটি দেশের মানুষ কী পছন্দ করে, কোন বিষয়টা তারা পছন্দ করে না, কীভাবে জীবন-যাপন করে এই বিষয়গুলো জানতে পারার ফলে ব্যবসা করা আরও সহজ হয়ে যায় তাদের জন্য।

তাই নিজের তথ্যের সুরক্ষা নিজেরই করতে হবে। সাইবার ক্রাইম রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তথ্য জানতে হবে জানাতে হবে। তাহলেই সাইবার ক্রাইম রোধ করা সম্ভব হবে।

 

লেখক: শিক্ষার্থী, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ সেপ্টেম্বর ২০১৯/মো. হৃদয় সম্রাট/হাকিম মাহি 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়