ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

১৪ বছর পর ইবি হলে ফুটল নাইট কুইন

ইমানুল সোহান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫৫, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
১৪ বছর পর ইবি হলে ফুটল নাইট কুইন

ইমানুল সোহান : ফুল ভালোবাসার প্রতীক। প্রিয়তমার গলায় মালা কিংবা খোঁপায় ভালোবেসে ফুল গুঁজে দেয়ার সৌন্দর্য-অনুভূতি অনন্য। সব ধরনের শুভ কাজেও ফুলের ব্যবহার রয়েছে। তবে মানুষভেদে ফুলের পছন্দে তারতম্য দেখা যায়। কেউ গোলাপ, কেউ হাসনাহেনা, কেউবা গ্রামবাংলার মেঠো পথের ধারে ফোটা অজানা ফুলের ভালোবাসায় মুগ্ধ হন। তবে যে ফুল কয়েক বছরে একবার ফোটে, সেই ফুল নিয়ে সবার কৌতূহল থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তেমনই একটি ফুল- নাইট কুইন।

মিষ্টি মনোহরিণী সুবাস, দুধসাদা রং, স্নিগ্ধ ও পবিত্র পাপড়ি আর সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে এই ফুল পরিচিত। রাতের আঁধারে নিজের সৌন্দর্য মেলে ধরে সকাল হওয়ার আগেই ঝরে পড়ে নাইট কুইন। তাই এই একটি ফুলের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয় ফুলপ্রেমীদের। আমাদের দেশে দুর্লভ প্রজাতির ফুল হিসেবেই গণ্য করা হয় নাইট কুইনকে।

এক রাতে এই দুর্লভ ফুলের দেখা মিলল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদ্দাম হোসেন হলের ৪০২ নম্বর রুমের শিক্ষার্থীদের লাগানো টবে। ২০০২ সালে সাদ্দাম হোসেন হলের ৪০২ নম্বর রুমের সামনে ইবি সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি শেখ রিয়াজউদ্দিন গাছটি লাগান। দীর্ঘ ৬ বছর পরিচর্যা করেন। ২০০৪ সালে প্রথমবার গাছটিতে দেখা মেলে নাইট কুইন। পরের বছরও একসঙ্গে ৩টি ফুল ফোটে। এরপর একে একে কেটে গেছে প্রায় ১৪ বছর। দীর্ঘ সময় পেড়িয়ে আবারও গত মঙ্গলবার রাতে তৃতীয়বার ফুটল নাইট কুইন। যে কারণে ফুলটির পরিপূর্ণ রূপ দেখতে আগ্রহী ছিলেন হলের অনেক শিক্ষার্থী।

সন্ধ্যা থেকে ফুলটি দেখতে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে শিক্ষার্থীরা। রাত ১১টায় অপেক্ষার অবসান ঘটে। নিজের রূপের বাহার নিয়ে নাইট কুইন পরিপূর্ণভাবে পাপড়ি মেলে দেয়। উপস্থিত শিক্ষার্থীরা তখন ফুলটি নিয়ে সেলফি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পরেই শিক্ষার্থীদের ফেসবুক টাইমলাইন ভরে ওঠে নাইট কুইনের গুণগানে। বর্তমানে ফুল গাছগুলোর পরিচর্যা করেন ইবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ইমরান শুভ্র ও অন্যান্য সদস্যরা। এ প্রসঙ্গে গাছের চারা রোপণকারী শেখ রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘নাইট কুইন খুবই দুষ্প্রাপ্য ফুল। সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে গাছটি লাগিয়েছিলাম। ফুলের সৌন্দর্য আমাকে খুব আকৃষ্ট করে। আমাদের সকলের উচিত গাছ লাগিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা।’

নাইট কুইনের বৈজ্ঞানিক নাম পেনিওসিরাস গ্রেজ্জি। বিরল ক্যাকটাস জাতীয় এ ফুলটির বৈশিষ্ট্য অন্যান্য ফুলের তুলনায় একটু আলাদা। বছরের মাত্র একদিন এবং মধ্যরাতে পূর্ণ বিকশিত হয়। আর শেষরাতেই জীবনাবসান ঘটে। পাথরকুচির মতো পাতা থেকেই এই ফুলগাছের জন্ম হয়। আবার পাতা থেকেই প্রস্ফুটিত হয় ফুলের গুটি। ১৫ দিন পর গুটি থেকে কলি হয়। যে রাতে ফুলটি ফুটবে, সেদিন বিকেল থেকেই কলি অদ্ভুত সুন্দর রূপে সাজে। ধীরে ধীরে অন্ধকার যখন চারিদিকে ঘিরে ধরে, ঠিক তখন নিজের সৌন্দর্যে স্বমহিমায় প্রকাশিত হয় ফুলটি। এর সুবাসে তীব্রতা না থাকলেও অদ্ভুত মিষ্টি মাদকতা আছে, যা পুষ্পপ্রেমীদের সবসময়ই টানে।

নাইট কুইন নিয়ে নানা গল্প শোনা যায়। সর্বাধিক প্রচলিত গল্প হলো, দুই হাজার বছর আগে বেথেলহেমে যিশুখ্রিস্টের জন্মের রাতে নগরীর প্রতিটি বাড়িতে নাইট কুইন ফুটেছিল। এ কারণে একে ‘বেথেলহেম ফ্লাওয়ার’ নামেও ডাকা হয়। এছাড়া একে সৌভাগ্যের প্রতীকও বলা হয়। তবে সৌভাগ্য আর গল্প যাই থাকুক অপার সৌন্দর্যই ফুলটিকে ‘ফুলের রানী’ উপাধি দিয়েছে।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়