ঢাকা     শনিবার   ০৪ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩১

ভালো থেকো ভালোবাসা

মোহাম্মদ মুনতাসীর মামুন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভালো থেকো ভালোবাসা

মোহাম্মদ মুনতাসীর মামুন: ছোটবেলা থেকেই আমি শান্ত স্বভাবের ছেলে। কারো সাথে আজ পর্যন্ত হাতাহাতি-মারামারি করার মতো অভিজ্ঞতা আমার নেই। তাই সবাই আমাকে ভদ্র ছেলে বলেই জানে। কিন্তু কে জানে এই ভালো ছেলেটার ভালোবাসার আকাশে মেঘ হয়ে উঠবে কালো!

বড় হয়ে যখন মনে ভালোবাসার ছোঁয়া লাগে, তখন আমার ভাবনা একজন সঙ্গী বানানোর। প্রথম দেখাতেই একটা মেয়েকে আমার ভীষণ ভালো লাগে। হয়তো আমার মতো অনেকেই তাদের সঙ্গীকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেন। আমার জীবনেও এর পুনরাবৃত্তি ঘটে।

আমি চেয়েছিলাম আমার পছন্দের মানুষটা আর বেশিক্ষণ দূরে না থাকুক। তাকে আপন করার জন্য কত রকম চেষ্টা করেছিলাম । কত রাত নির্ঘুম কেটেছে। কত স্বপ্ন তাকে নিয়ে এই দু’চোখ জুড়ে। প্রপোজ করার মতো সাহস আমার নেই। অবশেষে সাতপাঁচ ভেবে তার চাচাতো বোনকে ম‌্যানেজ করলাম। তাকে অনেকবার বলার পর তিনি বললেন, ঠিক আছে, আমি বলে দেখবো। তারও মনে হয় আমাকে ভালো লেগেছিলো। কারণ, প্রথম বলাতেই সে সম্মতি দিয়েছিল।এবার কথা বলার পালা। কথা বলতে হবে মোবাইলে। সময় নির্ধারণ হলো পরের দিন বিকেল ৪ টায়। সময় মতো ফোন করলাম। প্রথমবারেই ফোন রিসিভ করলো। কথা শুরু হলো। একটানা ৫৮ মিনিট কথা বললাম। এরপর থেকে সময় পেলেই কথা হতো রীতিমত। মাঝে মধ‌্যে দেখাও হতো। এভাবে চললো প্রায় একবছর। হঠাৎ একদিন সে ঢাকা চলে গেল আমাকে না জানিয়ে। সে চলে যাওয়ার পরদিন রাত অনেক বিষন্নতায় কেটেছে। এরই মাঝে চলে আসে আমার জেডিসি (জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট) পরীক্ষা। সেই বছর পরীক্ষার ফলাফলও তেমন ভালো করতে পারিনি। যার কারণে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। সে ঢাকা চলে যাবার দুই মাস পর ফোন দিল। আমি তো বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলাম। কোনো রকম নিজেকে সামলাতে পেরেছিলাম। সেও অনেক কেঁদেছিল। আমিও আবেগে আপ্লুত হয়ে সম্পর্কটা আবার পুনরাবৃত্তি ঘটাই। সব কিছুই আগের মতো হয়েছিল। কিন্তু একদিন তার পরিবারের লোকজন জানতে পারেন আমাদের সম্পর্কের কথা। এরপর শুরু হলো জীবনের কষ্টের আরেকটা অধ্যায়। তাকে অনেকবার মার খেতে হয়েছিল। আর আমার উপর দিয়েও অনেক ঝড় ঝাপটা গিয়েছিল। এক পর্যায়ে দুজনই দুজনকে ভুলে গেছি। এই ঘটনার পর আমি আরো দুর্বল হয়ে পড়ি। যাকে এতটা ভালোবেসে ছিলাম, সে এতটাই সহজে ভুলে যাবে কোনোদিন কল্পনায়ও ভাবিনি। নিজেকে প্রশ্ন করে বললাম, সে ভুলে থাকতে পারলে আমি কেনো পারবো না। যতই মনকে বোঝাতে চেষ্টা করতাম মন বুঝতো না। প্রথম ভালোবাসা বলে কথা।

যত দুঃখই হোক তাকে পেতে সর্বদাই আমি মুখিয়ে ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ একদিন শুনলাম সে নাকি আরেকজনের সাথে পালিয়ে গেছে। শোনার সাথে সাথেই আকাশটা যেন ভেঙে পড়ল মাথার উপর। পৃথিবীটা অন্ধকারে ভরে গেল। তার জন্য এত করলাম, আর আজ সে অন্যের হাত ধরে পালালো! যাহ্ আমার কপালটাই পোড়া। নিয়তিকে মেনে নিতে পারলেও এতটুকু মানতে বড় কষ্ট হচ্ছে। মনকে বোঝালাম, সে হয়তো আমার কাছে সুখ পায়নি, তাই অন‌্যের সাথে চলে গেছে। তাকে ভালোবেসে যদি সে সুখী হয়, তবে আমিও সুখী।

তুমি যদি আমার সে না হও, তবে কেনো তোমাকে না পেয়ে এতো ভালো লাগে। তবে কেনো আমাদের হৃদস্পন্দন একসঙ্গে স্পন্দিত হয়। তুমি যদি আমার সে না হও, তবে কেনো তোমার জন্য পুরো পৃথিবীর বিরুদ্ধে একা দাঁড়াতে দ্বিধা নেই আমার। আমি যদি তোমার জন্য না হই, তবে হৃদয় কেনো বলে হ্যাঁ, আমি তোমার জন্য। আমার ভাবনায় কেনো শুধু তুমি। কেনো আমার স্বপ্নে শুধু তুমি। অদেখা ভবিষ্যৎ শুধু তুমি। আমার হৃদয় কেনো অবিচল সবসময় তোমার পক্ষে।

আমি কখনো তোমার হাত ছুঁয়ে দেখিনি। কখনো একসঙ্গে হাসিনি। কখনো একসঙ্গে কাঁদিনি। একসঙ্গে কখনো বৃষ্টিতে ভিজিনি। কখনো চুমু খাইনি তোমার ঠোঁটে। তবুও তোমায় ভালোবাসি। কোনো কিছু ছাড়াই ভালোবাসবো। মৃত্যু পর্যন্ত...মৃত্যুর পরেও...।

লেখক: শিক্ষার্থী, কালারাজাহাট হোসাইনিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা, গলাচিপা, পটুয়াখালী।



রাইজিংবিডি/পটুয়াখালী/১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯/মামুন/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়