ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ভর্তি মেলা

যেখানে স্বপ্ন পূরণের প্রতিযোগিতা

সাইফুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৬, ২১ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যেখানে স্বপ্ন পূরণের প্রতিযোগিতা

হালকা শীত। সকালের ঘুম যেন স্বর্গের একখণ্ড প্রশান্তি। তবুও গায়ের কাঁথা ফেলে প্রতিদিনের মতো আজও বের হলাম ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে।

আজ চিরচেনা পথ যেন অপরিচিত মনে হচ্ছে। কাছের মানুষগুলোকে খুঁজে পাওয়া যেন অসাধ্য হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার নতুন মুখের ধ্বনি এবং পায়ের ধপাস ধপাস শব্দ, আবার মাঝে মাঝে নুপুরের আওয়াজ আমাকে এক বছর আগের স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়েছে। যখন আমিও প্রথম ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম প্রিয় ক্যাম্পাসে।

এই নতুন মুখগুলো দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুদের। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা ভর্তিচ্ছুরা মিলিত হয়েছে এক মিলন মেলায়।

সোমবার থেকে শুরু হয়েছে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। চলবে আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত। এ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো জায়গা জনশূন্য নেই বললেই চলে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকদের পদচারণা ক্যাম্পাসকে করে তুলেছে উৎসবমুখর।

প্রতিবছরের ন্যায় এবারও শিক্ষার্থীদের কলকাকলিতে ক্যাম্পাসের প্রতিটি আড্ডাস্থলের আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে আনন্দের বাণী। অজানা ও অচেনা এই ৭৫৩ একরের ভূমিতে শিক্ষার্থীদের করেছে উদাসীন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সতেরোটি আবাসিক হলে জায়গা দখল করে আছে ভর্তিচ্ছুরা। সবাই ছুটছে নিজ জেলা বা বিভাগীয় বড় ভাই-বোনদের পিছু। পরীক্ষা দিতে এসে অনেকের হয়েছে তীব্র অভিজ্ঞতা। স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবন, মতিহার হল, বঙ্গবন্ধু হল, জোহা হল কোন দিকে? এরকম নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, শহীদ মিনার, সাবাস বাংলাদেশ চত্বর, টুকিটাকি চত্বর, শেখ রাসেল স্কুল মাঠ, বুদ্ধিজীবী চত্ত্বর ও পশ্চিমপাড়াখ্যাত মেয়েদের হলগুলোর সামনে কোথাও যেন পা ফেলার জায়গা নেই। সন্ধ্যা হলে মিটিমিটি আলোর বৈদ্যুতিক বাতির নিচে শিক্ষার্থীদের মন উজাড় করা বাহারি গল্প যেন মন মাতিয়ে তুলছে ক্যাম্পাসকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় বসেছে গানের আড্ডা। এতে ভিড় জমাচ্ছেন ভর্তিচ্ছুরা। গান, কৌতুক আর আড্ডাতে মুগ্ধ হচ্ছেন অভিভাবকরা। এছাড়া ভর্তিচ্ছুদের সঙ্গে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা হারিয়ে যাচ্ছে তাদের মিষ্টি অভিজ্ঞতা বর্ণনায়। উপদেশ, বুদ্ধি ও পরামর্শ দিতে ব্যস্ত তারা।

এদিকে ভর্তিচ্ছুদের নিয়ে এখানকার ব্যবসায়ীদেরও আনন্দের কমতি নেই। কেননা বিপুল সংখ্যক ভর্তিচ্ছুরা পরীক্ষা দিতে আসায় এবং ক্যাম্পাসের হলগুলোতে অবস্থান করায় ব্যবসা ভালোই জমে উঠেছে। তবে, এবছর প্রশাসনের কড়া নজরদারিতে হল ও দোকানগুলোতে। সাথে খাবারের মান অক্ষুন্ন রেখে ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করেছেন তারা।

নবীনদের আগমনে ক্যাম্পাসের সার্বিক চিত্র আনন্দ আর উচ্ছাসে ভরে উঠলেও কিছু ক্ষেত্রে একটু বিপাকেই পড়তে হয় এখানকার অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের। থাকা-খাওয়াসহ পড়ালেখাতেই এর প্রভাবটা বেশি পড়ে বলে মন্তব্য করেন অনেকে।

চলতি শিক্ষাবর্ষে মোট ৪ হাজার ৭১৩টি (কোটাসহ) আসনের বিপরীতে ৭৮ হাজার ৯০ জন ভর্তিচ্ছুর আবেদন জমা পড়ে। ফলে প্রতি আসনের বিপরীতে লড়াই করবে ১৬ জন শিক্ষার্থী। এদিকে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কঠোর নজরদারিতে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কোনো প্রকার জালিয়াতি ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ক্যাম্পাসে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি চক্রসহ যেকোনো অঘটন রোধ করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সদা তৎপর রয়েছে। পুলিশ, গোয়েন্দা, বিএনসিসি, রোভার স্কাউটসহ অন্য বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।’

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

 

রাবি/সাইফুর রহমান/হাকিম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়