ঢাকা     বুধবার   ১৫ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ১ ১৪৩১

ফুলের রাজ্য গদখালীতে একদিন

তাসনিমুল হাসান প্রান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ২৫ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফুলের রাজ্য গদখালীতে একদিন

জীবনকে উপভোগ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই ভ্রমণ পিপাসু হতে হবে। মন ভালো রাখতে হলে প্রকৃতির বিকল্প নেই। আর সে ভ্রমণ যদি হয় কোনো ফুলের রাজ্যে, তাহলে তো ভালো লাগার কোনো কমতিই থাকে না।

আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় ফুলের বাগান রয়েছে যশোরের গদখালীতে। যেই বাগানকে স্বর্গোদ্যানের এক টুকরো জায়গা মনে হবে। বাগানের সৌন্দর্য নিজের চোখে না দেখলে লেখনীতে প্রকাশ করা খুবই কঠিন।

ব্যস্ততম জীবনে এ ভ্রমণ যেমন হৃদয়ে প্রশান্তি এনে দিতে পারে, তেমনি জীবন চলার শিক্ষাগ্রহণও করা যেতে পারে।

হঠাৎ করেই পরিকল্পনা ঘুরতে যেতে হবে যশোর গদখালীতে। যে ভাবনা সেই কাজ। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গড়াই বাস ধরে নাহিদ, রাফিজ, আদনান আর প্রান্ত চারজন মিলে রওনা হলাম ৩১ আগস্ট বিকেলে যশোরের উদ্দেশ্যে। প্রায় ৩ ঘণ্টা পরে আমরা পৌঁছলাম যশোরে।

নেমে প্রথমেই গেলাম বাংলাদেশের বিমান বাহিনীর একমাত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র যশোর বিমান বন্দর। সেখানের সন্ধ্যার পর অপরূপ দৃশ্য দেখা শেষে গেলাম জীমের বাসা যশোর মণিহার। রাতের ভোজন শেষে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়লাম। কারণ, সকাল সকাল উঠতে হবে যেতে হবে ফুলের রাজ্য গদখালীতে।

সকালে উঠে হালকা নাস্তা শেষে যাত্রা শুরু করলাম ফুলের রাজ্যের উদ্দেশ্যে। যাত্রা পথেই শাঁ শাঁ করে চলতে থাকা বাস যখন ঝিকরগাছা বাজারের রাস্তা অতিক্রম করে এগিয়ে যায়, তখন থেকেই প্রকৃত পক্ষে অপরূপতার আভাস মেলে। বাসের মধ্য থেকেই তাকিয়ে দেখতে থাকলাম শতবর্ষীয় পুরোনো সেই যশোর বেনাপোল মহাসড়কের শিশু গাছগুলো। যাওয়ার পথে প্রকৃতির এই দৃশ্য যা কোনো ভাবেই ভুলার নয়।

অতঃপর প্রায় একঘণ্টা পরে স্বপ্নময় সেই ফুলের রাজ্যে পৌঁছলাম। সেখান থেকে ভ্যানে করে রওনা হলাম পানিসারা বাজারের উদ্দেশ্যে। বড় রাস্তা পেরিয়ে গ্রামের পথে ঢোকার কিছু পরেই বাহারি ফুলের দেখা পেলাম। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম চারপাশ। বিখ্যাত কোনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবি যেন। পানিসারা বাজারের বেশ কিছুটা পথ আগেই নেমে পড়লাম ভ্যান থেকে। হেঁটে হেঁটে দেখছিলাম পুরো এলাকা। তখন মনে হচ্ছিলো, কোথা থেকে কোথায় আসা। সব দিকে ফুল আর ফুল।

পথে পথে গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, গ্ল্যাডিউলাসসহ বিভিন্ন ফুলের মাঠের দেখা পেলাম। কোথাও খোলা মাঠে আবার কোথাও ছাউনি দিয়ে সারি বেঁধে নানা রঙের ফুলের চাষ করা হয়েছে।

পাশের এক গোলাপ বাগানে বেশ কয়েক জন কৃষককে ব্যস্ত দেখলাম ফুল কাটতে। স্তুপ করে রাখা এই ফুল ছড়িয়ে পড়বে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

দেশের ফুলের মোট চাহিদার একটা বড় অংশের যোগান দিয়ে থাকে ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার এই ফুল চাষিরা। ১৯৮৪ সালের দিকে এখানে ফুলের চাষ শুরু হলেও গত দুই দশকে ফুল চাষে স্থানীয় কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে কয়েকগুণ। বর্তমানে এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার কৃষক জড়িত রয়েছেন ফুল চাষে। শুধু গদখালী বাজারেই প্রতিদিন কয়েক লক্ষ টাকার ফুলের বেচাকেনা চলে, যা  নিরবে দেশের অর্থনীতির চাকাকে আরো সচল করছে।

এখন ঝিকরগাছা, শার্শা ছাড়াও যশোরের মনিরামপুর, কেশবপুরেও বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে ইন্টারনেটে, বিদেশি সিনেমাতে ইউরোপের ফুল বাগানের ছবি দেখেছি। বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এরকম ফুলের বাগান আমাদের নিজের দেশেও আছে, তা না দেখলে কেউ বুঝতে পারবেন না। এ যেন পৃথিবীর মাঝে এক স্বর্গ উদ্যান। বিমোহিত হয়েই কাটলো পুরোটা বিকেল। অবশেষে প্রিয় মানুষদের জন্য কিছু ফুল কিনে ফেরার পথ ধরলাম।

অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে মর্তুজা হাসান নাহিদ বলেন, ‘সৌন্দর্যের আরেক স্বর্গের নাম যশোরের ফুলের রাজ্য গদখালী। শুধু লিখে এর সৌন্দর্যের কথা প্রকাশ করা সম্ভব না। যতক্ষণ ফুলের রাজ্যে ছিলাম, মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম কতো অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।’

রাফিজ আরাফাত বলেন, ‘সারা দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ঘুরেও গদখালীর মতো ভালোলাগার স্বাদ পাইনি। এ অঞ্চলের মাঠে মাঠে লাল, নীল, বেগুনি, সাদা, নীল রঙের ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য এখনো হাতছানি দিয়ে ডাকছে।’

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

 

কুষ্টিয়া/তাসনিমুল হাসান/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়