ঢাকা     বুধবার   ১৫ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ১ ১৪৩১

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

স্বাগতম দেশের সর্ববৃহৎ ক্যাম্পাসে

মাহবুব এ রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৯, ২৬ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্বাগতম দেশের সর্ববৃহৎ ক্যাম্পাসে

আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ২১০০ একর জুড়ে বিস্তৃত এই পাহাড়ে ঘেরা সুকোমল ক্যাম্পাস। আগামীকাল ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধ নামক এক মহাযজ্ঞের। আর এ ভর্তিযুদ্ধ চলবে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। এখানে একটি সিটকে নিজের করে নিতে আসন প্রতি লড়বেন ৩৪ জন শিক্ষার্থী।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যান্য ক্যাম্পাস থেকে একদম আলাদা। এখানে সকাল হয় শাটলের ঝকঝক কিংবা হুইসেল ধ্বনিতে। পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয় সবুজ প্রকৃতি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে ওঠে কাটাপাহাড়ের রাস্তা। ভিড় জমতে থাকে ঝুপড়িগুলোয়। ক্লাস-পরীক্ষার ব্যস্ততাকে পেছনে ফেলে সতেজ থাকতে কখনো কখনো টেবিল চাপড়িয়ে অভিনব পন্থায় ঝুপড়িগুলোতে জমে দারুণ গানের আসর। আবার কেউ কেউ প্রেয়সীর হাত ধরে ঘুরে বেড়ায় বোটানিক্যাল গার্ডেন, পুকুর পাড় কিংবা ফরেস্ট্রির সবুজাভ প্রান্তরে। কী নেই এই ২১‘শ একরের ক্যাম্পাসে! বোটানিক্যাল গার্ডেন, ঝুলন্ত ব্রিজ যেখানে দাঁড়িয়ে স্বাদ নিতে পারা যায় রাঙামাটির সেই বিখ্যাত ঝুলন্ত সেতুর, ফরেস্ট্রির সেই গালিচা বিছানো নির্জন পথ, চালন্দা গিরিপথ, সুইচ গেট, পাহাড়ের পাদদেশের ঝর্ণা এবং সুউচ্চ পাহাড় টেলিটক হিলসহ পুরো ক্যাম্পাস পাঠ্যসূচির সহচর বিনোদন কেন্দ্র।

শহর থেকে ক্যাম্পাসের দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটারের। তাই শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য ১৯৮০ সালে চালু হয় শাটল ট্রেন। পৃথিবীর সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাতন্ত্র্যটা এখানেই। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিবহনের জন্য ছিল নিজস্ব ট্রেন। কিন্তু বর্তমানে তা বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ই পৃথিবীর একমাত্র শাটল ট্রেনের বিশ্ববিদ্যালয়। কবি শামসুর রাহমান ছড়ায় খুঁজেছিলেন ট্রেনের ঠিকানা-

'ঝক ঝকা ঝক ট্রেন চলেছে

রাত দুপুরে ওই

ট্রেন চলেছে ট্রেন চলেছে

ট্রেনের বাড়ি কই'

চবির ট্রেনের ঠিকানা কিংবা গন্তব্য বটতলি থেকে ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্ট। দুটো শাটলের পাশাপাশি আছে ১টি ডেমুও। প্রতিদিন প্রায় দশ থেকে বারো হাজার শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয় যাতায়াতের মাধ্যম এই শাটল ও ডেমু ট্রেন। শাটল দেখতে শুধু যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন, তা কিন্তু নয়। বিদেশ থেকেও শাটল দেখতে চবিতে আসার অনেক নজির আছে। শাটলই হলো চবির প্রাণ।

অনেকে এই শাটলকে ভ্রাম্যমাণ বিশ্ববিদ্যালয়ও বলেন। আড্ডা, গল্প, গান, পড়ালেখা কী নেই এই শাটলে! বিভিন্ন বগিতে সবাই একসঙ্গে গান গেয়ে মাতিয়ে রাখেন পুরো ট্রেন।

এবার চবির সৌন্দর্য আর ঐতিহ্যে যোগ হলো নতুন মাত্রা। দেরিতে হলেও দেশের স্বাধিকার আন্দোলনের স্মৃতিকে নির্দেশ করে স্বগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে ‘জয় বাংলা’ ভাস্কর্য। পাশাপাশি ক্যাম্পাস আঙিনায় হাইটেক পার্ক নির্মাণের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে ইতোমধ্যে।

এতো গেলো সৌন্দর্য আর ঐতিহ্যের কথা। আপনি যদি বিভিন্ন কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিসের সাথে যুক্ত হতে চান, তাও আছে সব উপাদান। আছে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। বর্তমান সময়ে বিতর্কশিল্প বেশ জনপ্রিয়। ক্যাম্পাসে আছে দেশের অপ্রতিদ্বন্দ্বী বিতর্ক সংগঠন 'চিটাগং ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি'। আবৃত্তির জন্য আছে 'চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি মঞ্চ'। সংস্কৃতি চর্চার জন্য আছে অঙ্গন ও উত্তরায়ণসহ বিভিন্ন সংগঠন। আছে সাংবাদিক সমিতি, ক্যারিয়ার ক্লাব, ছায়া জাতিসংঘ, হিস্ট্রি ক্লাব, সাহিত্য সংসদ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরসহ প্রয়োজনীয় এবং জনপ্রিয় সব সংগঠন। আছে জিমনেশিয়াম এবং সুবিশাল খেলার মাঠ। সবুজাভ প্রকৃতি আর ঝর্ণার স্বচ্ছ জলধারা স্বাগতম জানাচ্ছে আপনাকে। আগামীর স্বপ্ন বিনির্মাণে বেছে নিতে পারেন এই ক্যাম্পাসকে।

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।


চবি/মাহবুব এ রহমান/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়