ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ন-তে নারী, ন-তে নেতৃত্ব

মীর মারুফ তাসিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৭, ২৮ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ন-তে নারী, ন-তে নেতৃত্ব

আমাদের এই সমাজের একজন নারীকে সারা জীবন অনেক কষ্ট করতে হয়। যেমন করতে হয় তার বাপের বাড়িতে অন্য দিক দিয়ে করতে হয় তার স্বামীর বাড়িতে। তারপরও আমাদের দেশে নারীদের অবহেলা করা হয়। এই সমাজে পুরুষের নেতৃত্বকে ভালো দৃষ্টিতে দেখা হলেও নারীদের নেতৃত্বকে দেখা হয় অবহেলার দৃষ্টিতে। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই বাস্তবতা। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আমরা নারী নেতৃত্বকে স্বাগত জানাতে পারি না।

সমাজের পুরুষেরা সব দিক দিয়ে নেতৃত্ব দিবেন। কারণ, তারা শক্তিশালী। তাদেরকে নেতৃত্ব দিতে স্বাগত জানানো হয়, কিন্তু নারীকে নয়। আমাদের সমাজে নারীদের দুর্বল ভাবা হয়। আসলে এই দুর্বলরাই যে সবলদের জন্ম দেন, সেটি আদিকাল থেকেই সমাজের দৃষ্টির বাইরে রয়ে গেছে।

নারীরা কি সামাজিক কর্মকাণ্ডে ও কর্মক্ষেত্রে ভালো নেতা হতে পারেন না? এদের মধ্যে কি নেতৃত্ব দেয়ার গুণাবলি নেই? যদি তাই হয়, তাহলে আমাদের দেশের দেশে প্রধান দুটি  রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে নারী। স্পিকার নারী, শিক্ষামন্ত্রী, বিভিন্ন জেলা প্রশাসক নারী, বিভিন্ন জেলা পুলিশ সুপার নারী। বরং দেখা যায়, যে জেলায় নারী প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি, সে জেলায় অন্যায় কম এবং সুশৃঙ্খল। আমাদের চিন্তা হলো তাদের সফলতাকে ছোট করে দেখা এবং অন্তপুরের বাসিনী বলে ঘরে আবদ্ধ করে রাখা।

পরিবারের সদস্য হিসেবে পুরুষের যেমন কথা বলার এবং নীতি নির্ধারণের অধিকার আছে, ঠিক একজন নারীরও অধিকার রয়েছে। পুরুষশাসিত সমাজে নারীর মূল্য থাকলেও অবহেলা জিনিসটি বেশি কাজ করে। একজন মানুষকে অবহেলা করলে স্বাভাবিকভাবেই তা তার অগ্রসরে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তার মনের শক্তিকে নষ্ট করে দেয়। ক্রমান্বয়ে তিনি নিজেকে অভিশপ্ত মনে করা শুরু করেন। আমাদের কন্যা সন্তান যখন বিয়ে করে স্বামীর বাড়ি যান, আর সেখানে গিয়ে যখন শ্বশুর-শাশুড়ির দ্বারা নির্যাতনের শিকার হন, তখন আমাদের পোড়ে। কিন্তু একই নারী যখন আমাদের ঘরে আসেন, তখন আমরাই নারী মনে করে নির্যাতন করি। এরটাই আমাদের বহু লালিত স্বভাব এবং চরিত্র। যদি নারীদের আমাদের মা, বোন, স্ত্রী এবং আমাদের মতো মানুষ মনে করি, তাহলে নারীদের প্রতি অবহেলা পরিত্যাগ করতে হবে।

নারীরা সহজে প্রতিবাদ করতে চায় না। দিনের পর দিন নারী অবহেলিত হচ্ছেন। কেন অবহেলা হচ্ছে, এই বিষয় জানতে চাইলে গ্রিন ইউনিভাসির্টির সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক জাকিয়া জাহান মুক্তা বলেন, ‘বহু দিনের পুরুষতান্ত্রিকতার চর্চায় নারী পুরুষ উভয়েই অভ্যন্ত হয়ে গেছেন। নারীর অবহেলিত হওয়ার জন্য সব সময় পুরুষরাই যে দায়ী  তা নয়; নারীরাও তাদের অবহেলিত হওয়ার জন্য অনেকাংশে দায়ী। আমাদের সামাজিকীকরণ আমাদের শেখায় নারী-পুরুষের অবস্থান আর দায়িত্ব কী। আর এই শিক্ষাই আমরা সারা জীবন বয়ে বেড়াই। বলা চলে, অনেক নারী নিজেকে দুর্বল ভাবতে ভালোও  বাসেন। গণমাধ্যমও এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। নারী হবে ঘরের ‘লক্ষ্মী’ আর পুরুষ হবে ‘সুপার হিরো’ এটাতো আমাদের মিডিয়া শেখায়।’

নারী নেতৃত্বকে কেনো  অবহেলা করা  হয়, এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিক মারিয়া সালাম বলেন, ‘নারী নেতৃত্বকে অবহেলা করা বা অপছন্দ করা কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। সমাজে নারীর সমমর্যাদা দীর্ঘদিন যাবৎ অস্বীকার করে আসার প্রবণতা থেকে নারীর প্রতি অবজ্ঞা বা অবহেলার বিষয়টি একটি জিনগত বৈশিষ্ট্য হিসেবে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সমাজে পুরুষদের একটা উচ্চ আসনে বসানো হয়েছে বহুবছর আগে এবং কালক্রমে এই বিশ্বাস প্রচলিত হয়ে গেছে। সমাজে পুরুষের দক্ষতা ও সক্ষমতা নারীদের চেয়ে অনেক বেশি। নারীদেরকে স্বাভাবিক অর্থেই পুরুষের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম দক্ষ বলে মনে করা হয়। শারীরিক শক্তির জায়গাটা বাদ দিলে একজন নারী যে একজন পুরুষের চেয়ে কোনো কাজেই কম দক্ষ নয়, সেটা আমরা কেউ মেনে নিতে পারি না।’

সচেতনভাবে বা অবচেতনে আমরা ধরেই রাখি পুরুষের সক্ষমতা নারীর চেয়ে অনেক বেশি, যার ফলে সমাজে নারী নেতৃত্বকে অবহেলার চোখে দেখা হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

একজন মানুষের প্রাপ্য সম্মান করলে কোনো ক্ষতি হয় না। পুরুষের যেমন স্বাধীনভাবে চলার অধিকার আছে তেমনিভাবে একজন নারীর চলার অধিকার থাকতে হবে। তাই পুরুষদের নেতৃত্বকে যেভাবে স্বাগত জানানো হয়, ঠিক সেইভাবে নারী নেতৃত্বকে স্বাগত জানানো উচিত।

লেখক: শিক্ষার্থী, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।


মানারাত/মীর মারুফ তাসিন/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়