ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘আমি তো রয়্যাল ডিপার্টমেন্টে পড়ি’

শাহরিয়ার কবির রিমন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৬, ৩০ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘আমি তো রয়্যাল ডিপার্টমেন্টে পড়ি’

বর্তমানে তরুণ শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে আইন বিষয়ে পড়াশোনা। তুলনামূলক একটু বেশি মেধাবীরাই আইনে পড়তে আসেন। বিসিএস ও অন্য যে কোনো চাকরি, ব্যাংক, স্বায়ত্তশাসিত ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির ক্ষেত্রে আইনের ছাত্রদের অন্য বিষয়ের শিক্ষার্থীদের মতো সমান সুযোগ আছে।

এমন বিশেষ কিছু পেশা রয়েছে, যেখানে শুধু আইনের ছাত্ররাই কাজ করতে পারবেন, অন্যরা নয়। যেমন- ওকালতি, জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের অধীনে জাজশিপ, ব্যাংকসহ দেশের সশস্ত্র বাহিনীতেও ল’ অফিসার হিসেবে শুধু এ বিষয়ের শিক্ষার্থীদেরই নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। তাই বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত।

সেদিক থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ও পিছিয়ে নেই। এখানেও আইন বিভাগ একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হিসেবে সমাদৃত। বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও এর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে ১৯৮৬-৮৭ সালে। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৮৭-৮৮ শিক্ষাবর্ষ থেকেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে জড়িয়ে যায় বর্তমানের ৩১ বছরের পুরনো আইন বিভাগের নাম । দেশের আইন বিভাগের মধ্যে প্রতিষ্ঠার দিক থেকে তৃতীয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ।

প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১ম সারির শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ থাকে আইন বিষয়। এই বিভাগের ছাত্ররা অন্য বিভাগের ন্যায় তুমুল প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে নিজেদেরকে প্রমাণ করার সুযোগ পান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে সবচেয়ে বেশি পরিচিত এবং মানসম্মত আইন বিভাগ। হরহামেশাই আইন বিভাগের ছাত্রদেরকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি তো রয়্যাল ডিপার্টমেন্টে পড়ি’। খেলার মাঠ থেকে বিজেএস এর ভাইভা বোর্ড, সবখানেই দাপট ইবির এই বিভাগের।

প্রতিবছর একের পর এক সাফল্য এসে ধরা দিচ্ছে আইন বিভাগের হাতে। এখান থেকে বেরিয়ে অধিকাংশ ছাত্রই বিজেএস পরীক্ষায় সফল হয় অত্যন্ত সাবলীলভাবে। ইবির আইন বিভাগের একটি বড় অংশ সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ার বা লইয়ার হিসেবে অবদান রেখে চলেছে সুপ্রিম কোর্ট থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি আদালতেই। এছাড়াও অনেক সাবেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন।

এই বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ দিনরাত তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে গড়ে তুলছেন আইনের আগামী দিনের ভিত। ৫০ জনেরও বেশি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষকরা সাহস এবং জ্ঞান ছড়িয়ে চলেছেন ছাত্রদের মাঝে। তাদের ছত্র ছায়ায় আইন বিভাগ যেন প্রতিদিন নব উদ্যমে ছুটে চলে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ অত্যন্ত স্বনামধন্য বিভাগ। এখানে যেমন করে আইন পড়ানো হয়, বাংলাদেশের অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অংশে কম নয়। কারিকুলাম ও সিলেবাসের দিক দিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ ক্লাস ওয়ান ইউনিভার্সিটির সমতুল্য।  আমাদের এখানে যে শিক্ষক রয়েছেন, তারা হাইলি কোয়ালিফাইড।  আইন বিষয় একটি প্র্যাকটিক্যাল বিষয় এবং জানার বিষয়। আমরা যত বেশি শিক্ষার্থীদের জানাতে পারবো, তারা তত বেশি দক্ষ হবে। তার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে আমরা আমাদের জুরিস্টিক ক্লিনিক হতে হাতে-কলমে শিক্ষার্থীদের আইন বিষয়ে দক্ষ করে তুলছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ অন্য বিভাগের চেয়েও ভালো করছে, যেটা উপাচার্য মহোদয়ও বলেছেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা কর্মক্ষেত্রেও প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করলে এটা বলাই যায়, যারা ভালো স্টুডেন্ট, তারা এখানে আইন পড়বে এটাই স্বাভাবিক।’

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের অধ্যাপক ও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন প্রশাসক অধ্যাপক ড. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আইন বিভাগের অন্যতম বিশেষত্ব ‘ল’ ক্লিনিক বাংলাদেশের একটি পাইওনিয়ার অ্যাকাডেমিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে এবং আমেরিকা ‘নর্থ ওয়েস্টার্ন পিকটজার স্কুল অব ল’ এর সাথে আমরা একটি চুক্তি করতে যাচ্ছি। এটা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একটি নতুন সংযোজন। ক্লিনিক্যাল এডুকেশনের একটি পথিকৃৎ হতে যাচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ, যা পুরো বাংলাদেশে প্রথম।’

আধুনিক শিক্ষাদানের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপাদান যেমন-ডিজিটাল ক্লাসরুম, মুটকোর্ট, সেমিনার লাইব্রেরি এবং প্রয়োজনীয় যাবতীয় সুবিধা দিয়ে চলেছে ইবির আইন বিভাগ। এগুলো ছাত্রদেরকে ডিজিটাল এই পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সাহায্য করছে। ইবির আইন বিভাগ মানসম্মত শিক্ষাদানে বদ্ধপরিকর এবং সেই লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন প্রতিটি শিক্ষক। আর তাদের পদচিহ্ন অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছেন প্রতিটি শিক্ষার্থী।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।


ইবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়