ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

প্রাণিবিদ্যা বিভাগে প্রাণের ছোঁয়া

রায়হান হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪২, ৫ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রাণিবিদ্যা বিভাগে প্রাণের ছোঁয়া

এক স্নিগ্ধ শীতের সকাল। কুসুম গরম সোনা ঝরা রোদ পোহাতে দুই বন্ধু আমাদের কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বারান্দায় দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম। হঠাৎ মনে হল কোনো পাখির ডাক। সজীব কে বললাম, এখানে কোথাও থেকে যেন পাখির আওয়াজ আসছে। ও বললো, তুই ভুল শুনছিস।

পুনরায় আমাদের গল্প শুরু করি, কিন্তু এবারও স্পষ্ট কবুতরের বাকবাকুম ডাক আমার কানে বেজে উঠল। সজীবও শুনলো। এরপর একটু পেছনে ঘুরতেই দেখি এই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শরীফা সুলতানা ম্যামের রুমের সাইনবোর্ডের উপরে একটি কবুতর বসে ডাকছে। 

আমি খুব কৌতূহল নিয়ে কবুতরটিকে লক্ষ করেছিলাম। সেসময় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রাণের ছোঁয়া ব্যাপারটা খুবই ভালো লাগলো।

এরপর কথা বলি ওই বিভাগের অফিস সহকারী মো. জামান প্রধানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা কাপ্তান বাজার ও কামরাঙ্গীরচর বেড়িবাঁধ থেকে ২০১৮ সালে পাঁচ জোড়া কবুতর এনেছিলাম। এখন মাত্র এক জোড়া কবুতর আছে। আমরা আরও কবুতর সংগ্রহ করবো।’

ঢাকা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে যে কবুতর রয়েছে, সেগুলো গোল কবুতর‌ ও লোটন জাতের কবুতর।

গোল কবুতর:

এই কবুতরের উৎপত্তিস্থল ভারতীয় উপমহাদেশে। আমাদের দেশে এ জাতের কবুতর প্রচুর দেখা যায় এবং মাংসের জন্য এটার যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। এদের বর্ণ বিভিন্ন শেড যুক্ত ধূসর এবং ব্লু-রঙের। এদের চোখের আইরিস গাঢ় লাল বর্ণের এবং পায়ের রঙও লাল। প্রাপ্তবয়স্ক গোল্লা বা গোলা কবুতরের মূল্য ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং মুম্বাই গোল্লা ৮০০-১০০০ টাকা।  

লোটন কবুতর:

গিরিবাজ কবুতর যেমন শূন্যের উপর ডিগবাজি খায়, তেমন লোটন কবুতর মাটির উপর ডিগবাজি খায়। সাদা বর্ণের এই কবুতরের ঘুরানো ঝুঁটি রয়েছে। এদের চোখ গাঢ় পিঙ্গল বর্ণের এবং পা লোমযুক্ত। প্রাপ্তবয়স্ক নোটন কবুতরের মূল্য ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা।

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের বিভাগে অনেক প্রজাতির প্রাণি রয়েছে। বিশেষ করে ক্লাস করতে যখন আসি, তখন কবুতরের ডাক শুনি, খুবই ভালো লাগে। তাছাড়া আমাদের এখানে একটি চৌবাচ্চায় মাছও পালন করা হয়। এসব বিষয়ের কৃতিত্ব আমার বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শরীফা সুলতানা ম্যামের। তিনি একজন ছাত্র ও পরিবেশবান্ধব শিক্ষক।’

বিভিন্ন প্রাণি সংরক্ষণের বিষয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শরীফা সুলতানা বলেন, ‘এই শহরজীবনে প্রাণি বা অন্য জীববৈচিত্র্য দেখা খুবই কষ্টসাধ্য। আমি আমার ছাত্রদের প্রাণিরা প্রাকৃতিকভাবে যেরকম চলাফেরা করে, সেরকম সরাসরি দেখানো জন্য এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা করেছি। আমার এখানে একটি মিনি মিউজিয়াম আছে, যেখানে ছাত্রদের দেখানোর জন্য প্রাণিবিদ্যা সম্পর্কিত প্রায় সবকিছুই রাখার চেষ্টা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখানে জাতীয় ফুল শাপলা, মাছ, শামুক, ব্যাঙ, পানির তলদেশে বাস করা বিভিন্ন প্রাণি সংরক্ষণ করছি। আমার ইচ্ছা, এখানে একটি মিনি চিড়িয়াখানার মতো গড়ে তোলা। যাতে ছাত্ররা প্রাণি ও প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে পারে।’

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ।


ঢাকা/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়