ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

শাহিনুর খালিদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৭, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। বাংলার আকাশে যুদ্ধের দামামা বাজছে। ঐদিন ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিলেন। সে ডাকে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দেশের স্বাধীনতা অর্জনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সে ডাকে প্রত্যক্ষভাবে সাড়া দিয়েছিল দেশের অন্যতম প্রাচীন বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সংগ্রামী ঐতিহ্যের ধারায় বুকে অসীম সাহস নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী অতর্কিত হামলা চালিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ নিশ্চিহ্ন করার যে প্রচেষ্টা চালিয়েছিল, তাতে বাদ পড়েনি এই বিশ্ববিদ্যালয়টিও। এর আগে শহীদ বুদ্ধিজীবী শামসুজ্জোহাসহ অনেক শিক্ষকের মহান আত্মত্যাগের চেতনা অণুপ্রাণিত করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সবর্স্তরের মানুষকে। এরই ধারাবাহিকতায় মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষক এবং অন্তত ৩০ জন ছাত্র, কর্মকর্তা-কর্মচারী শহীদ হন।

মনসুর রহমান খান সম্পাদিত মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর জনসাধারণের প্রবল প্রতিরোধে অল্প কয়েক দিনের মধ্যে রাজশাহীতে সক্রিয় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী দুর্বল হয়ে পড়ে।

ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় গ্রহণে বাধ্য হয়। ১০ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি বিপুল অংশ শহরে প্রবেশ করে। ১৩ এপ্রিল ভোরে পাক সেনারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে আর্টিলারি ফায়ার ও জঙ্গী বিমানের গোলাবর্ষণ অব্যাহত রাখে। তারা জোহা, জিন্নাহ (বর্তমান শেরে বাংলা) হলসহ অন্যান্য আবাসিক হল, বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ও অতিথি ভবন দখল করে নেয়। ধ্বংস করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার। হাবিব ব্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার, ল্যাবরেটরিতে লুটতরাজ চালায়।

রাবির শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা থেকে জানা যায়, এই সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতনে শাহাদতবরণ করেন ৪ শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয় দখলের পরদিন ১৪ এপ্রিল সংস্কৃত বিভাগের শহীদ অধ্যাপক সুখরঞ্জন সমাদ্দারকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর দিন ১৫ এপ্রিল গণিত বিভাগের রিডার শহীদ অধ্যাপক হবিবুর রহমানকে সেনাবাহিনী তুলে নেয়। তাঁর হদিস এখনও পাওয়া যায়নি। মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মীর আবদুল কাইয়ুমকে ২৫ নভেম্বর জীবন্ত কবর দেয়া হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অকথ্য নির্যাতন ভোগ করেছিলেন গণিত বিভাগের শিক্ষক মজিবর রহমান।

এছাড়াও শহীদ হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী প্রশাসনিক ভবনের নৈশপ্রহরী আবদুর রাজ্জাক, স্টেনো টাইপিস্ট শেখ এমাজউদ্দিন, উচ্চমান সহকারী এসএম সাইফুল ইসলাম, প্রকৌশল দপ্তরের কর্ম সহযোগী মো. কলিম উদ্দিন, সুইপার মোহনলাল, পরিবহন শাখার ড্রাইভার আবুল আলী, কাঠমিস্ত্রি শফিকুর রহমান, প্রহরী নূরু মিঞা, উপাচার্য অফিসের জরুরি পিয়ন মোহাম্মদ ইউসুফ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের পিয়ন মো. ওয়াজেদ আলী, প্রহরী মো. আফজল মৃধা, অর্ডালি পিয়ন ওয়াহাব আলী, বেয়ারা আবদুল মালেক, কিউরেটর মনছুর আহমদ খান, প্রহরী হোসেন আলী।

মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ভূমিকাও ছিল অসামান্য। স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়ে শহীদ হয়েছেন বাণিজ্য বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল মান্নান আখন্দ, শাহজাহান আলী, বাংলা বিভাগের আমীরুল হুদা জিন্নাহ, এমএসসি ছাত্র গোলাম সারওয়ার খান সাধন, রসায়ন বিভাগের প্রদীপ কুমার রাহা, অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র মোহাম্মদ আলী খান, পদার্থবিদ্যা বিভাগের ছাত্র মিজানুল হক।

স্থানীয়রা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি দখলে নিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর নির্মম নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালায় পাক বাহিনী। ৯ মাসে অন্তত ৪ হাজার বাঙালিকে হত্যা করা হয় এখানে। নির্যাতনের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হত শহীদ শামসুজ্জোহা হল। যার প্রমাণ এর আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য গণকবর। গবেষকদের ধারণা, পদ্মা নদীর তীর জুড়ে রয়েছে আরও গণকবর, যা এখনও চিহ্নিত করা হয়নি।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে অনেক স্মৃতি-স্মারক, ভাস্কর্য, ম্যূরাল প্রভৃতি। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩ শিক্ষকের নামে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩টি হল ও আন্তর্জাতিক ডরমেটরি। তৎকালীন সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলকে তাদের ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করত। দীর্ঘ ৯ মাস হত্যাযজ্ঞ চালানোর ঘাঁটি বানিয়ে রাখে পাক হানাদার বাহিনী। আর এই হলের পেছনের জায়গায় হাজার হাজার নারী-পুরুষকে মেরে ফেলে রাখে পাকিস্তানি সেনা ও দেশীয় দোসররা।

যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালের ২৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হলের আধা-মাইল দূরে আবিষ্কৃত হয় একটি গণকবর। সেটি খনন করে পাওয়া গিয়েছিল সহস্র মানুষের মাথার খুলি ও নরকঙ্কাল। এছাড়াও মিলেছে মানুষের ব্যবহৃত হাতঘড়ি ও কলম, টুপি, এক ও দশ টাকার নোট মিলে তিনশো টাকা, চাবির রিং, সাইকেলের চাবি, কানের দুল, সিগারেটের লাইটার, মানিব্যাগ, কাজলের টিউব, ওড়না, পাথর বসানো আংটি, চিরুনি, মহিলাদের কার্ডিগান ইত্যাদি।

পরবর্তীকালে এগুলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালায় সংরক্ষণ করা হয়। শহীদদের স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিভিত্তিক কর্মীদের দ্বারা স্মৃতিফলক নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও মুক্তিযুদ্ধ বিপরীত শক্তির হাতে সে উদ্যোগ বিপর্যস্ত হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য বধ্যভূমিতে ১৯৯৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর একটি স্মৃতিফলক উন্মোচন করা হয়। সে সময় স্মৃতিফলকটি উন্মোচন করেন শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক মীর আব্দুল কাইয়ুমের স্ত্রী অধ্যাপক মাসতুরা খানম এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক সুখরঞ্জন সমাদ্দারের স্ত্রী চম্পা সমাদ্দার। কিন্তু রাতের আঁধারে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা স্মৃতিফলকটি ভেঙে ফেলে।

পরে আবার স্মৃতিফলক নির্মাণের কাজ শুরু করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক সাইদুর রহমান খান। তিনিই ১৯৯৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর আবারও স্মৃতিফলক উন্মোচন করেন। স্মৃতিস্তম্ভটি ৪২ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট, প্রায় এক একর জায়গা জুড়ে এটি বিস্তৃত। স্তম্ভরে সামনে রয়েছে মুক্তি মঞ্চ। গোলাকৃতি একটি চৌবাচ্চাকে ভেদ করে চৌকাণাকৃতি ইটের দেয়াল ভেঙে এবরো-থেবরোভাবে গড়া। দেখে মনে হবে গুলির আঘাতে দেয়ালে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। দেয়ালের এমন রূপ দেয়ার কারণ হলো- ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর দ্বারা বাঙালিদের নির্মম নির্যাতনের মধ্য দিয়ে হত্যা করেছিল। তাই এখানে নির্যাতনের মধ্য দিয়ে হত্যার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এটি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা, পৈশাচিকতার সাক্ষ্য। আর সেই স্মৃতিই ধারণ করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ।

রাকসু নেতারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভিত্তি করে গড়েছেন ‘সাবাস বাংলা’ ভাস্কর্য। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকার পর হাতের বাম পাশে উন্মুক্ত খোলা মাঠ তারপর একটু সামনেই মাথা উঁচু দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল ভাস্কর্য।। এই ভাস্কর্যটি হলো 'সাবাশ বাংলাদেশ'। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ভাস্কর্য। ভাস্কর্যটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন চত্বরে অবস্থিত। এর স্থপতি নিতুন কুণ্ডু। এটি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতীকী ভাস্কর্য। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের যে প্রতীকী ভাস্কর্যগুলো রয়েছে তার মধ্যে প্রকাশভঙ্গীর সরলতা, গতিময়তা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার তেজস্বী প্রকাশ এবং নন্দনতাত্বিক দিক থেকে এই ভাস্কর্যটি অনবদ্য। ১৯৯২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কংক্রিট দিয়ে তৈরি ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেন শহিদ জননী জাহানারা ইমাম। স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের সমন্বয় দেখা যায় সাবাস বাংলাদেশ ভাস্কর্যে।

৪০ বর্গফুট একটি বেদির উপর মূল ভাস্কর্যটি স্থাপিত। মূল ভাস্কর্যে দুটি অবয়ব লক্ষ করা যায়। দুইজন যুবককেই খালি গায়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। একজন লুঙ্গি পড়া, মাথায় গামছা বাঁধা গ্রামীণযুবা-কৃষক সমাজের প্রতিনিধি। যার এক হাতে রাইফেল ধরা, মুষ্টিবদ্ধ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ অন্য হাতটি উপরে উত্থিত। প্যান্ট পরিহিত অন্য অবয়বটি শহুরে যুবকের প্রতিনিধি। দুইহাত দিয়ে ধরে রয়েছে রাইফেল, কোমরে গামছা বাঁধা, বাতাসের ঝাঁপটায় চুলগুলো পিছনের দিকে সরে গেছে। সিঁড়ির উপরে মঞ্চের দেয়ালে নারী-পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ, সমাজের সকল বয়সের মানুষের মিছিলের দৃশ্য, রাইফেল হাতে যুবক-যুবতী, একতারা হাতে বাউল, গেঞ্জি পড়া এক কিশোর তাকিয়ে আছে পতাকার দিকে। বাংলার জনজীবনের ছবি এঁকেছেন শিল্পী, বুঝিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে গণমানুষের সম্পৃক্ততার কথা। মূল ভাস্কর্যের পশ্চাতে রয়েছে ৩৬ ফুট উঁচু একটি স্তম্ভ, যার ভেতরে রয়েছে ৫ ফুট ব্যাসের গোলাকার শূন্যতা, যা স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকার প্রতীক।

ভাষা শহীদদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে বর্তমান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি গড়া হয়েছে। এই শহীদ মিনার প্রাঙ্গণেই রয়েছে দেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা। ১৯৭৬ সালে তৎকালীন ভিসি প্রফেসর সৈয়দ আলী আহসানের উদ্যোগে এই সংগ্রহশালাটি নির্মাণ করা হয়। শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালাটি চমৎকার স্থাপত্যনৈপূণ্যে সমৃদ্ধ মোট ৬ হাজার ৬শ বর্গফুট আয়তনের তিনটি গ্যালারি নিয়ে গড়ে উঠেছে। খুবই ক্ষুদ্রপরিসরে সংগ্রহশালাটি যাত্রা শুরু করলওে সংগ্রহের দিক থেকে পর্যায়ক্রমে মুক্তিযুদ্ধের একটি পূর্ণাঙ্গ  সংগ্রহশালায় পরিণত হয়।

১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন চিত্রকর্ম, দলিল-দস্তাবেজ, আলোকচিত্র, জামা, জুব্বা, কোট, ঘড়ি, পোশাক, টুপি, কলমসহ বিভিন্ন দুর্লভ জিনিস এখানে স্থান পেয়েছে। প্রথম গ্যালারিতে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদ ড. শামসুজ্জোহার বিভিন্ন ছবি, ব্যবহৃত জিনিসপত্র। মু্ক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন পোশাক। এছাড়াও রয়েছে ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের আলোকচিত্র, শহীদ আসাদের কিছু দুর্লভ ছবি, বিভিন্ন শিল্পীর আঁকা মুক্তিযুদ্ধের ছবি, ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারিতে নির্মিত রাজশাহীর প্রথম শহীদ মিনারের ছবি। রাজশাহীতে উত্তোলিত প্রথম জাতীয় পতাকাটিও সংরক্ষিত আছে এখানে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও পোশাক, মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন প্রতীকী ভাস্কর্যও রয়েছে দ্বিতীয় গ্যালারিতে।  আরও রয়েছে সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের ছবি। রাজশাহীর শহীদ সিদ্ধার্থ সেন, ডা. মিহির কুমার সেন, ডা. হুমায়ুন কবির, অ্যাডভোকেট নাজমুল হক সরকারসহ আরও অনেকের ছবি ।

একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের কিছু দুর্লভ ছবিও এই গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে । তৃতীয় গ্যালারিতে রাখা হয়েছে একাত্তরে গণহত্যায় নিহত অসংখ্য শহীদের মাথার খুলি আর হাড়। যার বেশির ভাগই উদ্ধার করা হয়েছে জোহা হলের পাশে অবস্থিত গণকবর থেকে । গ্যালারির একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন ঐতিহাসিক আলোকচিত্র । রয়েছে একাত্তরে হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের বিভিন্ন আলোকচিত্র ও বিজয়ী মুক্তিসেনাদের ছবি।

স্বাধীনতা যুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতি ও ঐতিহাসিক উপকরণ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৭৬ সালের ৬ মার্চ তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা আবুল ফজল আনুষ্ঠানিকভাবে এই সংগ্রহশালাটি উদ্বোধন করেন। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তিন শিক্ষকের সহধর্মিনী বেগম ওয়াহিদা রহমান, বেগম মাস্তুরা খানম ও শ্রীমতি চম্পা সমদ্দার এর তিনটি প্রদর্শনী গ্যালারি উদ্বোধন করনে ১৯৯০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ এ জাতি কখনো ভুলবে না। ভুলবে না রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে থাকবে মতিহারের এই সবুজ চত্বর।

লেখক: শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।


রাবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়