ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

জাতীয় ফুটবল দলে খেলতে চান সবুজ

অনিক আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৮, ২ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জাতীয় ফুটবল দলে খেলতে চান সবুজ

ছেলেটির পুরো নাম মাহতাবুর রহমান সবুজ। কিন্তু ক্যাম্পাসের সবাই তাকে চেনে সবুজ নামেই। একজন সফল খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে ইতোমধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন, জায়গা করে নিয়েছেন হাজারো ক্রীড়াপ্রেমীর অন্তরে।

লক্ষ্মীপুরের সন্তান সবুজ সম্প্রতি সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।

মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে সবুজের খেলাধুলায় হাতেখড়ি হয় বাবার হাত ধরে। বাবা সেনাবাহিনীতে মূল দলের খেলোয়াড় হিসেবে খেলতেন। সেই সুবাদে খেলার সাথে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে।

ছোটবেলায় খেলাধুলার প্রতি তার ব্যাপক আগ্রহ দেখে এলাকার কিছু জ্যেষ্ঠ ভাইয়েরা তাকে এলাকার লামচর টাইগার স্পোর্টিং ক্লাবে ভর্তি করিয়ে দেন। এটাই ছিল খেলাধুলার সাথে তার আনুষ্ঠানিকভাবে পথচলা।

ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালীন কুমিল্লা অঞ্চলের স্কুল পর্যায়ের ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে নিজের দলকে রানারআপ হতে দারুণ ভূমিকা রাখেন। স্কুলের গণ্ডি পার হয়ে কলেজে ওঠার পর জেলার  নামকরা লক্ষ্মীপুর তরুণ ক্লাবের বিপক্ষে তার দল লামচর টাইগার স্পোর্টিং ক্লাব জয়লাভ করে। এতে অসাধারণ পারফরম্যান্সের কারণে তাকে ওই ক্লাবে ভর্তির প্রস্তাব দেয়া হয়, কিন্তু কলেজ অন্য এলাকায় হওয়ায় ভর্তি হননি।

২০১৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন ঢাকার তেজগাঁও কলেজে। ইচ্ছা ছিল আরামবাগ একাডেমিতে ভর্তি হয়ে নিজের প্রতিভাকে জাতীয় পর্যায়ে বিকশিত করবেন। কিন্তু বাবার চাকরির সুবাদে চলে আসতে হয় সাভার। খেলাধুলায় নানা সুযোগ-সুবিধার কথা জেনে ২০১৪ সালের এপ্রিলে ভর্তি হন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তির আগে থেকেই বাবার সাথে ক্যাম্পাসের ক্রীড়া শিক্ষক হাবিব স্যার, দীপু স্যার, মাহমুদ স্যারদের সাথে অনুশীলন করতেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর একদিন দীপু স্যার প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলার জন্য তাকে সাভারের রেডিও কলোনিতে নিয়ে যান। সেখানে সবুজের একমাত্র গোলে বিজয়ী হয় তাদের টিম। ভালো খেলার কারণে শীঘ্রই গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল দলের হয়ে সুযোগ পেয়ে বিভিন্ন খেলায় সফলতার সাথে অংশগ্রহণ করতে থাকেন সবুজ। এভাবেই ক্যাম্পাসে আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে তার পরিচিতি।

বিভিন্ন খেলায় পারদর্শীতা থাকলেও  ফুটবলই সবুজের সবচেয়ে প্রিয় খেলা। এছাড়া, দাপটের সাথে খেলে থাকেন ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, অ্যাথলেটিকস, বাস্কেটবল, ক্রিকেট ইত্যাদি।  ক্রীড়াকে আলাদা চোখে দেখা গণ বিশ্ববিদ্যালয় বছরে দুইবার খেলা উৎসবে মেতে ওঠে। এসব খেলায় অংশগ্রহণ করে বহু পুরস্কার নিজের ঝুলিতে পুরেছেন সবুজ। আন্তঃবিভাগীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে অসংখ্য জয়ের নায়ক তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃবিভাগীয় অ্যাথলেট প্রতিযোগিতায় তিনটি খেলায় জয়ী হয়ে এককভাবে সর্বোচ্চ ১১.৫ স্কোর নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি।

সবুজের হাত ধরে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ঘরে তুলেছে বহু শিরোপা। তার নেতৃত্বে এ পর্যন্ত একবার করে ব্যাডমিন্টন ও বাস্কেটবলে চ্যাম্পিয়ন, সাথে দুইবার করে ফুটবল এবং ভলিবলে রানারআপ হয় সিএসই বিভাগ। অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শনের পুরস্কার স্বরূপ এ পর্যন্ত দুইবার ফুটবল ও একবার অ্যাথলেটসহ মোট তিনবার টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই নিজের বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সহপাঠীসহ অন্যদের সহযোগিতা তার এ পথচলাকে সুগম করেছে।

ক্রীড়াক্ষেত্রে অপরিসীম ভালোবাসা থেকে খেলাধুলার মান বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালে গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। দেশের একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের এই নির্বাচনে ২৮০০ ভোটের মধ্যে সর্বোচ্চ ২২৯৮ ভোট পেয়ে ক্রীড়া সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত সহজ-সরল, নিরহংকারী সবুজ খেলোয়াড় হিসেবে সবুজ আদর্শ মানেন পর্তুগিজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে। গতিময় ফুটবলের কারণে সাপোর্ট করেন পেলের ব্রাজিলকে।

স্বপ্ন নিয়ে তিনি বলেন, ‘অন্য সব খেলোয়াড়ের মতো আমিও স্বপ্ন দেখি একদিন জাতীয় ফুটবল দলে খেলার। যদি কখনো জাতীয় দলে সুযোগ পাই, চেষ্টা করবো নিজের সর্বোচ্চটা উজাড় করে দিয়ে দেশকে ভালো কিছু দিতে। আশা রাখি, ক্রিকেটে যেভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, ফুটবলেও একদিন তেমন ভালো করবে। আর ইচ্ছা আছে ক্লাব পর্যায়ে আবাহনীর হয়ে খেলার।’

গত বছর মার্চ-এপ্রিলে দেশের ৬৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৭০০ ক্রীড়াবিদের অংশগ্রহণে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্প-১৯। এতে মোট ১০টি ইভেন্টের সাতটিতে অংশগ্রহণ করে চারটিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে গণ বিশ্ববিদ্যালয়।

টুর্নামেন্টের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইভেন্ট ছেলেদের ফুটবলে ফারইস্ট ইউনিভার্সিটিকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় গণ বিশ্ববিদ্যালয়। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করে দলকে চ্যাম্পিয়ন হতে অনবদ্য ভূমিকা রাখেন সবুজ।

খেলোয়াড় হিসেবে জীবনের সেরা মুহূর্তের কথা জানতে চাইলে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ফাইনালে জয়ী হয়ে তার কাছ থেকে ট্রফি গ্রহণ করেছি। তখনকার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। খেলোয়াড় হিসেবে এটাই আমার সেরা সাফল্য। আমি কতটুকু দিতে পেরেছি বলতে পারবো  না, তবে গণ বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে এমন একটা ট্রফির ভাগিদার হতে পেরেছি, যার সাক্ষী স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী।’

লেখক: শিক্ষার্থী, ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস অনুষদ (৩য় বর্ষ), গণ বিশ্ববিদ্যালয়।

 

সাভার/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়