ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রুপালি জগতে তাজ

অনিক আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৬, ১১ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রুপালি জগতে তাজ

অভিনয়কে যারা বুকে লালন করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চান, তাদের একজন তাজমিলুর রহমান। ছোটবেলায় ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় দাদি মারা যাওয়ার পর কষ্টে অনেক কেঁদেছিলেন। সেই থেকেই ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হওয়ার, কিন্তু মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় টিকলেন না।

হতাশ ছেলেকে সান্তনা দিয়ে বাবা মিজানুর রহমান বললেন, ডাক্তার তো ডাক্তারই, সে মানুষের হোক আর প্রাণীর হোক। বাবার কথায় আশাবাদী হয়ে ২০১৬ সালে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি অনুষদে ভর্তি হন। বর্তমানে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদানের পাশাপাশি তিনি অভিনয় জগতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশকে ভালো কিছু উপহার দেয়ার স্বপ্ন দেখেন।

জয়পুরহাটের ছেলে তাজের অভিনয়ে আসার গল্পটা একটু অন্য রকম। বলা চলে, অনেকটা হুট করেই রুপালি জগতে পা রেখেছেন। খুব বেশি দিনের কথা নয়, ২০১৮ সালের মে মাস। ঢাকাস্থ জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘পাঁচবিবি স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ এর পক্ষ হতে একটা অনুষ্ঠানে বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক মমতাজুর রহমান আকবরকে দাওয়াত দিতে এফডিসিতে যান। আকবর স্যার তার সম্পর্কে বিস্তারিত শুনে অভিনয়ে আসার প্রস্তাব দেন। তাজের জন্য এটা ছিল মেঘ না চাইতেই জল। সঙ্গে সঙ্গে হ্যাঁ বলে দেন।

আকবর তাকে বলেন, ‘কাল শুটিংয়ের জন্য রেডি থেকো, রাতে গল্প পাঠিয়ে দেব।’ অভিনয় জগতে এভাবেই শুরু হয় তার পথচলা।

চোখের দেখাতেই একটা ছেলেকে অভিনয়ে সুযোগ দিয়ে যে ভুল করেননি আকবর স্যার, তা খুব শীঘ্রই প্রমাণ করেন তাজ। কয়েকটা শর্ট ফিল্মে নিপুণভাবে অভিনয় করে নিজের প্রতিভার জানান দেন। ভালো অভিনয়ের ফলে আরো নতুন নতুন কাজের সুযোগ পেতে থাকেন। এ সময় পরিবারের পূর্ণ সমর্থন যেমন পেয়েছেন, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সহপাঠী, বন্ধুদের উৎসাহ, অনুপ্রেরণা তার পথচলার রসদ যুগিয়েছে।

অভিনয়ে প্রবেশের এক বছরের মধ্যে পেয়েছেন অনেক কিছু। মমতাজুর রহমান আকবরের সান্নিধ্য, কাজী উজ্জ্বল, হুমায়ুন সাধুর মতো বড় মাপের অভিনেতাদের সাথে কাজ করেছেন। সামনের পথচলায় এগুলো তাকে দারুণভাবে সহায়তা করে। সম্প্রতি তার একটি নাটক বিদেশী পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।

পথচলার এক বছরে সেরা মুহূর্তের কথা জানতে চাইলে তাজ বলেন, ‘মমতাজ স্যার একবার বললেন তোমার চরিত্র প্লে-বয়। নিজের গম্ভীর আচরণ পরিবর্তন করো এবং মেকাপ নিতে আসো। মেকাপের পর আমাকে বলতেছে, তুমি কে? চিনতেই পারছিল না আমাকে!’

একাডেমিক অনেক পড়াশোনা এবং অভিনয় দুটোকে দারুণভাবে সামলান তাজ। এমনি সময় দুটো সমানতালে চললেও পরীক্ষার আগে সবকিছু পেছনে ফেলে পড়ালেখায় বেশি গুরুত্ব দেন। তাজ মূলত রোমান্টিক এবং কমেডিয়ান নাটকে অভিনয় করতে বেশি পছন্দ করেন। তবে, ভালো মানের যেকোনো গল্পে যেকোনো চরিত্রে কাজ করতে তার আপত্তি নেই। আপাতত ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চান। অভিনয়টা ভালোভাবে রপ্ত করে ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে বড় পর্দায় কাজ করতে চান।

অভিনয়ে তার অনুকরণীয় ব্যক্তি সম্পর্কে বলেন, ‘সবার অভিনয় ভালো লাগে, তবে বিশেষ করে আফরান নিশো, মোশারফ করিম এবং আ খ ম হাসানকে বেশি ফলো করি।’

অভিনয়ের পাশাপাশি তাজ নিয়মিত গান করে থাকেন। ক্যাম্পাস এবং ক্যাম্পাসের বাইরে তার কন্ঠের ভক্তও রয়েছে যথেষ্ট। এছাড়া যখনই সুযোগ পান বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। যুক্ত রয়েছেন ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সামাজিক সেবামূলক সংগঠনে। অসহায় মানুষ এবং পথশিশুদের নিয়ে নিয়মিত কাজ করছেন তিনি।

রুপালি জগত সম্পর্কে তাজের মূল্যায়ন,  ‘এই জগতটা অনেক কঠিন। এখানে টিকে থাকতে হলে অনেক লড়াই করতে হয়। যতক্ষণ তুমি ভালো কিছু দিতে পারবে, ততক্ষণ তুমি এখানে টিকে থাকতে পারবে।’

তাজ টিকে আছেন, টিকে থাকতে চান সবার ভালোবাসা নিয়ে। তার লক্ষ্য বহুদূরে। ভবিষ্যতে নিজেকে একজন দক্ষ ভেটেরিনারিয়ান হওয়ার পাশাপাশি ভালো অভিনয়শিল্পী হিসেবে মানুষের মনে জায়গা করে নিতে চান। সামনের পথচলায় সে সবার দোয়া প্রত্যাশী।

লেখক: শিক্ষার্থী, ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস অনুষদ (৩য় বর্ষ), গণ বিশ্ববিদ্যালয়।


গবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়