ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৯ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

গবি ছাত্রনেতাদের ভাবনায় বঙ্গবন্ধু

তানভীর আহম্মেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৪, ১৭ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গবি ছাত্রনেতাদের ভাবনায় বঙ্গবন্ধু

তাঁর কণ্ঠে ছিল বজ্রধ্বনি, মুখে প্রতিবাদের ভাষা, আর অন্তরে গভীর মমত্ববোধ। তিনি ছিলেন জনগণের আশা-ভরসা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার ছায়া সুনিবিড়, শান্তির নীড় টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন।

তাঁর পিতার নাম ছিল শেখ লুৎফর রহমান এবং মায়ের নাম সায়েরা খাতুন। তাঁদের কোল আলোকিত করেন বাঙালির স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বাধীনতার স্থপতি, লড়াই-সংগ্রামের জ্বলন্ত পিণ্ড মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম, লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে যার হাত ছিল সর্বদা বলিষ্ঠ। বজ্রকণ্ঠে হৃদয় কাঁপানো স্লোগানে যিনি মানুষকে দীপ্ত পথের সন্ধান দেখাতেন, তিনি ছিলেন সংগ্রামী, প্রতিবাদী, মুক্তিকামী সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গা।

সেদিনের মুজিব ১০০ বছর পেরিয়ে এসেও উজ্জ্বল নক্ষত্র। আজকে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ তাঁর জন্মের ১০০ বছর পূর্ণ হলো। জন্মের শতবর্ষ পার হয়ে গেছে, কিন্তু মুজিবের কৃতিত্ব ভুলে যাওয়ার কোনো অবকাশই তৈরি হয়নি। বরং তাঁর কৃতিত্বগুলো আরো বেশি জ্বলজ্বল করে বর্তমান বাংলার প্রত্যেকটা মানুষের চোখে-মুখে।

বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকীতে তাঁকে নিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা কী ভাবছেন, তা তুলে ধরছেন একই শ্বিবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভীর আহম্মেদ।

কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম রলিফ বলেন, স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে তরুণ প্রজন্মকে অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে চলতে হবে। তিনি বাংলাদেশকে যেভাবে দেখতে চেয়েছিলেন আজকের বাংলাদেশকে ঠিক সেভাবেই আমরা দেখতে পারবো, যদি তাঁর আদর্শের ছাত্র নেতৃত্ব তৈরি হতে পারে। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সৎ, যোগ্য, মেধাবী, মাদক ও সন্ত্রাস মুক্ত ছাত্র রাজনীতি তৈরি করতে হবে। আদর্শ ছাত্র রাজনীতি থেকেই একজন যোগ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়। তাই, প্রত্যেকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আদর্শ ছাত্র রাজনীতি গড়ার কোনো বিকল্প নেই।  

সাধারণ ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান রনি বলেন, ছাত্র হিসেবে বঙ্গবন্ধু যেমন মেধাবী ছিলেন, তেমন রাজনৈতিকভাবেও ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র নেতা। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তাঁর ভূমিকা ছিল অসামন্য। আমাদেরও তাঁর মতো একজন আদর্শবান ছাত্র হতে হবে। নিজেকে শুধু পড়াশোনায় আবদ্ধ না রেখে তাঁর মতো দেশপ্রেমিক হতে হবে, অন্যায়-অবিচারে প্রতিবাদ করতে হবে, সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্যতাবান হতে হবে।     

অগ্নিসেতু সাংস্কৃতিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাবনাজ সিকদার বলেন, একটি দেশের সংস্কৃতি সে দেশের পরিচয় বহন করে। ঠিক তেমনি পাকিস্তানি শোষণে  বাংলাদেশের যে কঠিন অবস্থা বিরাজমান ছিল, তা সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে হুবহু তুলে ধরার মাধ্যম হিসেবে সংস্কৃতিকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার মনে করতেন। তাঁর নিজের হাতে লেখা বইগুলো বর্তমান সময়ে এসে মানুষকে আরো বেশি ভাবিয়ে তুলছে, চিন্তা-চেতনায় আদর্শ করে তুলছে। তাঁর ভাষণ, চিঠিপত্র মানুষ এখন নকল করছে, তাঁর মতো করে বলার চেষ্টা করছে, লেখার চেষ্টা করছে।

এসব থেকেই বোঝা যায় সংস্কৃতিকে মুজিব যে অধিকার আদায়ের অন্যতম হাতিয়ার মনে করতেন, তা সম্পূর্ণভাবে ফলপ্রসূ। হাজার বছর ধরে জনগণের রক্তে চেতনার গরম স্রোত বইয়ে দিয়ে যাবে তাঁর সাহিত্য কর্ম। এখান থেকে এটাই স্পষ্ট, মুজিবের শিল্প-সাহিত্যে, সংস্কৃতিতে যে ভাবনা ছিল, তা তাঁর দূরদর্শিতা।

সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের সহ-সভাপতি শারমিন কবিতা বলেন,  শেখ মুজিব শুধু দেশকে স্বাধীন, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাননি, তিনি চেয়েছেন বৃটিশ এবং পাকিস্তানের শোষণে  নিঃস্ব বাঙালি জাতিকে অর্থনৈতিক মুক্তির স্বাদ এনে দিতে। পরিবার থেকেই তিনি সমাজ গড়ার প্রেরণা পেয়েছেন। দেশের শ্রেণিবিভেদ ভুলে সকলকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করে তোলাই ছিল তাঁর চিন্তা-চেতনার অংশ। মুজিব শুধু স্বাধীনতার মহানায়ক নন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথপ্রদর্শক।

ডিবেটিং সোসাইটির সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে মুজিব তাঁর কথায় আগুন ঝরিয়ে ছিলেন। ভাষণ, বক্তব্যের মধ্য দিয়ে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত নিজেকে জনতার অধিকার আদায়ে নিয়োজিত করেছিলেন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ঘোষিত ‘মুজিববর্ষ’ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আমরা গণ বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির পক্ষ থেকে মুজিবর্ষ সামনে রেখে কিছু আভ্যন্তরীণ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

এছাড়া শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী পড়ার ব্যাপারে সবসময় তাগিদ দেওয়া হয় ক্লাবের সদস্যদের। শেখানো হয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে কীভাবে প্রতিবাদ করতে হয়। বঙ্গবন্ধু ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে  প্রতিবাদী মানুষের আদর্শ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে দেশের নেতৃত্ববান মানুষরা এগিয়ে যাক। এতে দেশ ও দশের উন্নতি সাধন হবে।

বাংলার কিংবদন্তী এই মহান নেতার কৃতিত্ব স্বাধীন বাংলায় বেঁচে থাকবে আজীবন। বাংলার জনগণের  লড়াই-সংগ্রামের প্রেরণার উৎস যার মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যেত, সেই মানুষকে জন্মশতবর্ষে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে নতুন করে দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হবে পুরো দেশবাসী এটাই কামনা করছে গবির বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। তাঁর মতো একজন আদর্শ নেতাকে অনুসরণ করে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাবে, এটাই তাদের প্রত্যাশা।

লেখক: শিক্ষার্থী, ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদ (৩য় বর্ষ), গণ বিশ্ববিদ্যালয়।

 

গবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়