ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

করোনা: কী শিখিয়ে যাচ্ছে আমাদের

রফিক আহমদ সোবহানী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০২, ৩১ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনা: কী শিখিয়ে যাচ্ছে আমাদের

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস নিয়ে সবাই সচেতন ও চিন্তিত। ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৩৮ হাজার মানুষ। এই মহামারির পরও আমরা সামাজিক ভালো কিছু পরিবর্তন খেয়াল করছি, যা একটা সুস্থ সমাজ গঠনে অপরিহার্য। আমরা এ আপদ কাটিয়ে উঠার পরেও যদি আমাদের এ কার্যক্রম বলবৎ রাখি, তাহলে আমরা একটি সভ্য জাতিতে পরিণত হব। 

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা

বিশ্বব্যাপী একযোগে এমন পরিচ্ছন্নতা অভিযান মনে হয় কখনোই হয়নি। একদম নিজের হাত, শরীর থেকে শুরু করে ঘর, বাড়ি, গাড়ি, রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, মসজিদ, বাজার সব জায়গায় হ্যান্ড স্যানিটাইজারের স্পর্শ। করোনার প্রভাব কমে গেলে, আমরা এই অভ্যাস ধরে রাখতে পারলে অনেক ভাইরাস বা ফ্লু থেকে মুক্ত থাকতে পারব। হাঁচি-কাশি অনেকটাই কমে গিয়েছে। আর হাঁচি-কাশি দিলেও সেভানে সৌজন্যতা বজায় থাকছে।

পরিবারকে সময় দেওয়া

স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি অনেক আগে থেকেই বন্ধ। ১০ দিনের জন্য সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ। কিন্তু এই বন্ধে বাইরে যাওয়া যাবে না। এই সময়টা পরিবারের বয়স্ক ও শিশুদের দেওয়া যেতে পারে। শিশুদের সাথে ছোটবেলার খেলাগুলো খেলতে পারা যায়। যেমন, লুকোচুরি, চোর-ডাকাত-পুলিশ, লুডু, দাবা এবং কলম ইত্যাদি। আবার সংক্রমিত মানুষ থেকেও দূরে থাকার একটি চর্চা শেখা যাচ্ছে।

নিজেকে সময় দেওয়া 

দ্রুত চলমান পৃথিবী হঠাৎ করে থমকে গিয়েছে, সেই সাথে আপনিও থেমেছেন। নিজেকে নিয়ে নতুন করে ভাবুন। লক্ষ্যটাকে আরেকটু সুনির্দিষ্ট করুন, পরিমার্জন করুন। প্রতিষ্ঠান, সংগঠন নিয়ে আরেকটু চিন্তা করতে পারবেন। পেছনে নিজের যত খারাপ অভ্যাস ও চিন্তা ছিল সেগুলোও পরিবর্তন করার এটা প্রকৃষ্ট সময়।

ঘরের কাজে সাহায্য

অনেকেই নতুন নতুন রান্না করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি দিচ্ছেন। মায়ের সাথে কাজে সাহায্য করছেন। কেউ কেউ ঘর নতুন করে সাজাচ্ছেন। বাড়ির উঠান পরিষ্কার করছেন। সবগুলোই মানুষের মহৎ গুণ। পরিবারে পরস্পরের প্রতি যখন এমন সহানুভূতি থাকবে, তখন পরিবারে নেমে আসবে শান্তি। থাকবে না আর কোনো কলহ।

পরিবেশের প্রাণ

মানুষ ঘরে বন্দি হয়ে যাওয়ার কারণে পশু-পাখি নিজেদের মেলে ধরছে। দুপুরে কান পাতলে শুনবেন বারান্দায় চড়ুই পাখি ডাকছে, সকালে কিংবা রাতে কোকিল ডাকছে। কর্ণফুলীর পানিতে শুশুক লাফাচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে ডলফিন খেলছে। সাগর-নদীর পানিতে মটরের শব্দ না পেয়ে ওরাও হয়তো বিস্মিত। আনন্দে, মুক্তিতে লাফালাফি করছে। পর্যটন এলাকাগুলোতে পায়ের ছাপ পড়ে ধূসর হয়ে যাওয়া পথটুকু সবুজ হয়ে উঠছে। ক্রিকেটের পিচটাও সবুজ হয়ে যাবে। পত্রঝরা গাছের নিচে হাঁটলে মচমচ করে শুকনো পাতা ভাঙবে।

দূষণের মাত্রা কমছে

যানবাহন চলাচল না করায় উল্লেখযোগ্য হারে দূষণ কমছে। ঢাকার বাতাসের দূষণের মাত্রা কমে গিয়েছে। চীনে NO2, CO2 এর পরিমাণ কমেছে। গাড়ি না চললে শব্দদূষণ কম হবে। তেল কম পুড়বে। পরিবেশ ভালো থাকবে।

ঘরে থেকে দূরের কাজের অভিজ্ঞতা

অনেকেই অনলাইনে ক্লাস করছেন, অফিস করছেন, অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিচ্ছেন। এগুলো আগেও অনলাইনে করা যেত, কিন্তু উপস্থিত হতে হতো। ভিডিও কলের মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হচ্ছে। অনেক দিন খবর নাই বন্ধুকে ফেসবুকে নক দেওয়া হচ্ছে। অন্তত তথ্য প্রযুক্তিতে পিছিয়ে পড়া মানুষগুলো প্রশিক্ষিত হচ্ছে।

মানবিকতার শিক্ষা

আমরা ঘরে আছি, যাদের ঘর নেই, তারা বাইরে আছেন। তাদেরও খোঁজ-খবর নিতে হবে। যতটুকু সম্ভব সাহায্য করতে হবে, অনেকেই করছেন, প্রাকাশ্যে- অপ্রাকাশ্যে। কিছুদিন আগেও অন্য গোত্রের মানুষ বিপদে পড়লে অনেকেই হাসতেন, আজ একই মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে সবাই সবার প্রতি মানবতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

এই পরিবর্তনগুলো কিছুদিনের জন্য। করোনার প্রকোপ চলে গেলে আমরা হয়তো আবার আগের মতো হয়ে যাব। কিন্তু এই ১০-১৫ দিনের প্রভাবটা আমাদের উপর থাকবে। এ রকম একটা ধাক্কা হয়তো প্রকৃতির জন্য খুব দরকার ছিল! যদিও মানুষের জন্য মহামারি।

আমরা ঘরে থাকি, যারা আমাদের জন্য বাইরে কাজ করে চলেছেন, তাদের জন্য হলেও ঘরে থাকি। বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে ঝুলে বাড়িতে গিয়েছি, নিজে কোয়ারেন্টাইনে থেকে পরিবারটাকে ভালো রাখি। আর এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নেই, যেন ভবিষ্যতে পরিবেশ নষ্ট না করি। আর যদি করি, তাহলে আবার হয়তো কোনো সুনামি, সিডর, প্লেগ, ফণী বা করোনার মতো মহা প্রতিশোধ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

 

চবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়