ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

গাঁয়ের পথে বনজুঁই

আজাহার ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৮, ৩ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গাঁয়ের পথে বনজুঁই

বনফুলের প্রতি আকুতি প্রকাশ করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘যেথা যত ফুল আছে বনে বনে ফুটে, আমার পরশ পেলে খুশি হয়ে ওঠে।’ কবিগুরু ছাড়াও অনেক কবি প্রেমে পড়েছিলেন নানা প্রজাতির বনফুলের। গ্রামাঞ্চলে মাঠে-ঘাটে, পথে-প্রান্তরে প্রায়শই দেখা যায় নাম না জানা নানা প্রজাতির বনফুল।

এমনই এক ফুলের বর্ণনা করব, যার নাম ‘বনজুঁই’ ফুল। বসন্তের শেষ দিকে থোকায় থোকায় ফুটে থাকে এই সবুজ বহুপত্রী ফুল। এগুলো সাড়া জাগায় ফুলপ্রেমীদের মনে।

অযত্নে অবহেলায় অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে প্রকৃতিতে বেড়ে ওঠা এক গুল্ম জাতীয় পেরিনিয়াল উদ্ভিদ বনজুঁই। ‘বনজুঁই’ নামটি সবার কাছে খুব বেশি পরিচিত নয়। এই ফুল ভাটফুল, ভাটিফুল, ঘেঁটুফুল বা ঘণ্টাকর্ণ নামেও অধিক পরিচিত।

বনজুঁইয়ের বৈজ্ঞানিক নাম ক্লেরোডেন-ড্রাম-ইনারমি। ইনফরচুনাটাম প্রজাতির ফুল এটি। প্রায় ৪০০ প্রজাতির বনজুঁই আছে, যাদের আদিনিবাস এশিয়া মহাদেশের বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান ও শ্রীলংকায়। এটি মূলত বুনো ফুল। যা বসন্তকালে পথে-প্রান্তরে ফুটে থাকে। গ্রামাঞ্চলে ঝোপ-ঝাড়ে, বনে-জঙ্গলে ও রাস্তার ধারে নিজের সৌন্দর্য মেলে ধরে এই ফুল।

বিশেষ করে পতিত ভূমি, জঙ্গলের কিনারা, বড় রাস্তার কিনারা এদের আবাসস্থল। এই ফুলের মন মাতানো সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবেন আপনিও। এর মিষ্টি গন্ধ আপনাকে মাতাল করে তুলবে।

ফুলটি নানা কারুকার্জে ভরা। এই ফুলের পুংকেশর, পাপড়ি, পাতা ও কাণ্ডকে প্রকৃতি নিখুঁতভাবে সাজিয়েছে। ফুলের মাঝখানের পুংকেশরই এই ফুলের প্রধান সৌন্দর্য বহন করে। এর মনমুগ্ধকর সৌরভে প্রজাপতি আর মৌমাছির আনাগোনা লক্ষণীয়।

ফুলের পাপড়ি ঝরে পড়ার পর লালচে বৃতির মাঝখানে সবুজ ও বেগুনি বীজ দেখতে একেবারে নাকফুলের মতো। মনে হয় যেন কারুকাজ খচিত লালচে পাথরের মাঝে সবুজ অথবা গাঢ় বেগুনি চকচকে এক ডায়মন্ড খণ্ড বসিয়ে রেখেছে।

এই বনজুঁইয়ের সৌন্দর্য বর্ধন ছাড়াও নানা গুণ রয়েছে। এই উদ্ভিদ ভেষজ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ম্যালেরিয়া, চর্মরোগ ও পোকা-মাকড়ের কামড়ে খুবই উপকারী। এই উদ্ভিদের কচি পাতার রস টনিক হিসেবে কাজ করে। পাতায় প্রাপ্ত কেমিক্যাল কৃমিনাশক, জ্বর উপশমকারী ও এক্সপেকটোরেন্ট হিসেবেও কাজ করে। মূল থেকে প্রাপ্ত কেমিক্যাল এজমা, টিউমার ও চর্মরোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও ইমপোটেন্সি বা যৌনদুর্বলতায় মূলের উষ্ণ রস চমকপ্রদ ফলপ্রসু।

১৭৫৩ সালে কার্ল লিনিয়াস তাঁর স্পেসিস প্ল্যান্টেরাম নামক গ্রন্থে এই উদ্ভিদের নাম উল্লেখ করেন ‘জেনাস’ নামে। যার অর্থ ‘ভাগ্য উদ্ভিদ’। এদের বৃতি সাদার পরিবর্তে প্রথমে সবুজ ও পরে পরিপক্ক অবস্থায় লালচে রং ধারণ করে। এই লালচে রঙের কারণেই এদের ভাগ্য পরিবর্তন ঘটে অর্থাৎ অল্প সময়ের মধ্যে ফুলের বৃতিতে যে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়, তার জন্য পলিনেটর আকৃষ্ট হয় ও পরাগায়ন ঘটায়। কারো কারো মতে, এজন্যই কার্ল লিনিয়াস এরকম নামকরণ করেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।


ইবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়