ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ক্যাম্পাসের দেয়ালে নেই ভালোবাসার গল্প

চৈতি দাস || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৯, ৬ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ক্যাম্পাসের দেয়ালে নেই ভালোবাসার গল্প

করোনায় পুরো দেশ অঘোষিত লকডাউন। রাস্তায় নেই কোনো গাড়ির হর্ন আর ট্রাফিক জ্যামের ভয়। অলিগলির মোড়ে নেই এখন টং দোকানের চায়ের আড্ডাগুলো। রাস্তার দুই ধারে নেই কোনো ফুটপাত। হুড তোলা রিকশার নেই সারি সারি লাইন। নেই কোনো মানুষের আনাগোনা। সকালবেলা অফিসে ছুটে চলা মানুষগুলোও হারিয়ে গেলো। এ যেন চেনা শহরের অচেনা এক গল্প।

যে শহরে গাড়ির হর্ন ছাড়া শোনা যেত না কোনো পাখির গান, সেখানে আজ শুধু নিরবতা। রাস্তায় এখন কেবলই শোনা যায় পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। প্রকৃতি যেন তার নিজের অস্তিত্ব ফিরে পেয়েছে। গাড়ির হর্নগুলো যেন কোথায় হারিয়ে গেলো। ট্রাফিক পুলিশেরও নেই গাড়ি সামলানোর সেই ব্যস্ততা। বাইক চালকদেরও হেলমেট পরার জন্য কেউ বলে না।

বাসের ড্রাইভার আর হেল্পারেরও নেই সেই যাত্রী তোলার পাল্লা। যাত্রীবাহী বাসগুলো আজ যাত্রীশূন্য হয়ে সারি সারি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবকিছু যেন অলস সময় পার করছে।

ভার্সিটির বাসগুলোতেও নেই কোনো ঝুলে যাওয়ার গল্প। ক্যাম্পাসের সামনে নেই কোনো ফুচকা, ঝালমুড়ির দোকান। ফুচকাওয়ালা মামাদের এখন কেউ বলে না, ‘মামা, ঝাল বেশি দেন।’ ভেলপুরির মামাও যেন আসছে না এখন। ক্যাম্পাসের দেয়ালে নেই কোনো ভালোবাসার গল্প।

কোলাহলপূর্ণ ক্যাম্পাসটাও আজ নীরব। ক্যাম্পাসের মাঠও ফাঁকা পড়ে আছে। ক্যান্টিনের খাবারের গন্ধটাও এখন পাওয়া যায় না। শহীদ মিনারেও নেই সেই আড্ডাগুলো। ক্লাসগুলোতে নেই টিচারদের সেই বকবক। ক্লাস, সিটি, ল্যাবের নেই কোনো ঝামেলা।

রিকশার শহরে এখন নেই কোনো রিকশা। রিকশায় চড়া প্রেমিক প্রেমিকাদেরও এখন দেখা মেলে না। তিন চারজন মিলে একসঙ্গে রিকশা চড়ার গল্পটাও যেন হারিয়ে গেলো। রিকশার মামাদেরও এখন ভাড়া নিয়ে তর্ক করতে দেখা যায় না। রিকশাওয়ালা মামাদের গান শুনাও হয় না কতদিন। মামাদের এখন কেউ বলে না, মামা ওই রিকশাটার আগে যান।

শহরের পার্কগুলোতে নেই কোনো প্রেমিক প্রেমিকা। ছোট ছোট বাচ্চাগুলোও এখন দোলনায় চড়তে আসে না। ক্রিকেট খেলার মাঠও ফাঁকা পড়ে আছে। পার্কের বেঞ্চগুলোতে নেই কোনো ভালোবাসার গল্প। বার্থডে পার্টি করা ছেলেমেয়েরাও এখন বাসায় বন্দি। পার্কে ছুটে চলা সেই বাদামওয়ালা মামাদেরও দেখা মেলে না। ছোট ছোট বাচ্চারাও এখন ফুল নিতে বিরক্ত করে না। বকুল ফুলের মালার গন্ধও কোথায় হারিয়ে গেলো।

অফিস ছুটির পর কেউ এখন চায়ে চুমুক দিতে আসে না। বন্ধুদের চায়ের কাপের আড্ডাগুলোও এখন জমে না। কেউ এখন বলে না, মামা, আরেক কাপ চা দাও। চায়ের সাথে বিস্কুট খাওয়ার বন্ধুদেরও দেখা মেলে না। ট্রিট ট্রিট বলে চিল্লানো বন্ধুদেরও টংয়ের দোকানে দেখা যায় না। দোকানের সামনের কুকুরগুলোকে এখন কেউ বিস্কুট দেয় না।

ফুটপাতের দোকানগুলোতে নেই মানুষের ভিড়। দোকানদার মামারা কেউ এখন বলে না, ‘যেটা নিবেন একশো।’ দরদাম করা মানুষদেরও এখন দেখা মেলে না। জনসমাগম করা ফুটপাতগুলোও আজ নিরবতা পালন করছে। ফুটপাত দিয়ে চলা বাইক চালকরা ঘরে আবদ্ধ। অফিসে ছুটে চলা মানুষদেরও ছুটির পর ফুটপাতের সামনে হাঁটতে দেখা যায় না। ফুটওভার ব্রিজে নেই মানুষদের সেই ভিড়। সব যেন জনমানবহীন।

আমাদের এই চেনা শহরের বড় অসুখ করেছে। প্রিয় নগরীর অসুখ সারলে আমরা আবার আগের মতো ছুটে চলতে পারব। সেদিন থাকবে না কোনো বারণ। প্রাণ খুলে খোলা আকাশের নিচে নিঃশ্বাস নিতে পারব।

লেখক: শিক্ষার্থী, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, ঢাকা।


ঢাকা/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়