ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

তাহলে প্রকৃতির ওষুধ করোনাভাইরাস!

জাহিদ হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৪, ২২ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তাহলে প্রকৃতির ওষুধ করোনাভাইরাস!

একটা সময় ছিল যখন প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে ছিল গভীর বন্ধুত্ব। মানুষ যেমন প্রকৃতিকে ভালোবাসতো তেমনি প্রকৃতি ও মানুষকে দু’হাত ভরে দান করতো। মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান থেকে শুরু করে সব মৌলিক চাহিদা পূরণ করতো প্রকৃতি। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষের চাহিদা বাড়তে লাগল। নিজেদের চাহিদা মেটাতে মানুষ প্রকৃতির ওপর প্রভাব বিস্তার শুরু করল। ফলে ভেঙে যেতে লাগল তাদের বন্ধুত্ব, নষ্ট হতে থাকল ভারসাম্য। মানুষ তার ভোগ-বিলাস চরিতার্থ করতে গিয়ে চোখের সামনে ধ্বংস করতে লাগল প্রকৃতিকে।

সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষ তার আরাম আয়েশের জন্য পৃথিবীর ক্ষতি করে চলছে। আর সভ্যতার চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে তো প্রকৃতির ওপর একপ্রকার প্রভুত্বই শুরু করেছে। গাছপালা, বন-জঙ্গল কেটে উজাড় করছে; খাল-বিল, নদী-নালা ভরাট করছে; নতুন নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন করছে; গণপরিবহন, ব্যক্তিগত যানবাহন, প্লাস্টিক, পলিথিন ব্যবহার বৃদ্ধি করছে; পানি দূষণ করে চলছে। এ যেন পৃথিবী ধ্বংসের এক মহোৎসব।

প্রতিবছর পৃথিবীতে কয়েক লক্ষ হেক্টর বন কেটে ফেলা হচ্ছে, বাতাসে কয়েক হাজার টন কার্বন নিঃসরণ করা হচ্ছে, অগণিত পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। মূলত শিল্পোন্নত এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোই এই দূষণে বেশি এগিয়ে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশ এবং বিভিন্ন সংস্থা এই দূষণের লাগাম টেনে ধরার জন্য সবাইকে একত্রিত করার চেষ্টা করেছে। অনেক ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে সফলতা আসলেও প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো বরাবরই এক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করে। ফলে এসব মহান পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। যার সর্বশেষ উদাহরণ প্যারিস জলবায়ু চুক্তি।

আজ ২২ এপ্রিল, বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। ১৯৭০ সালে মার্কিন সিনেটর গেলর্ড নেলসন পৃথিবীর উপর আগ্রাসন রোধে, প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে এবং পরিবেশ বিষয়ক বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতির লক্ষ্যে বিশ্ব ধরিত্রী দিবস পালন শুরু করেন। ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ এই দিবসটিকে তাদের বার্ষিক পঞ্জিকায় স্থান দেয়। আর তখন থেকেই দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হচ্ছে। বর্তমানে ‘আর্থ ডে নেটওয়ার্ক’ এর মাধ্যমে বিশ্বের ১৯৩টিরও বেশি দেশে দিবসটি পালিত হয় ।

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস এবার ৫০ বছরে পদার্পণ করেছে। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন’। দিবসটি এবার এমন একটা সময়ে এসেছে, যখন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বে অসহায়ত্ব বিরাজ করছে। অনেকেই একে প্রকৃতির প্রতিশোধ বলেও দাবি করছে। ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কারখানাগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে, ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, সমুদ্র সৈকতগুলোতে মানুষের আনাগোনা নেই, নেই পানি দূষণের প্রতিযোগিতা। এক কথায় সারা পৃথিবী যেন থমকে গেছে।

অন্য দিকে এই ঘটনা যেন প্রকৃতিতে পৌষ মাস হয়ে এসেছে। চীনে কার্বন নিঃসরণের হার প্রায় ২৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ইতালির ভেনিসের খালগুলোতে নৌযান চলাচল বন্ধ হওয়ার ফলে পানি অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন পরিষ্কার হতে শুরু করছে। সেখানে পানির নিচে মাছ খেলা করতেও দেখা গেছে। আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়ার বাতাসে কার্বনের পরিমাণ কমে গেছে। তাছাড়া বাংলাদেশের কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ডলফিনদের নির্ভয়ে সাঁতার কাটতে দেখা গেছে। যা গত কয়েক দশকে দেখা যায়নি। এই ঘটনাগুলো দেখে মনে হচ্ছে করোনাভাইরাসই পৃথিবীর ওষুধ, আমরাই ভাইরাস।

তবে এই অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী নয়। হয়তো অচিরেই করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তখন মানুষ আবার বিপুল উৎসাহ নিয়ে প্রকৃতি ধ্বংসে নেমে পড়বে। শিল্পোন্নত দেশগুলো তাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে বড় বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করবে। এক্ষেত্রে হয়তো আমাদের কিছুই করার নেই। কিন্তু আজকের এই বিশেষ দিনে আমাদের উচিৎ শপথ নিয়ে ছোট ছোট যে সব কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিচ্ছি, সেগুলো থেকে দূরে থাকা। তাছাড়া আরও কিছু উদ্যোগ আমরা চাইলেই নিতে পারি।

যেমন- বাড়ির আঙিনায়, ছাদে যেখানেই খালি জায়গা পাওয়া যাবে, সেখানেই সুবিধামতো গাছ লাগাতে পারি; গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের অপচয় রোধ; পলিথিনের ব্যবহার হ্রাস করতে পারি; যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলা; এয়ার কন্ডিশনারের পরিবর্তে ফ্যান ব্যবহার ইত্যাদি। এই ছোট ছোট উদ্যোগগুলোই পৃথিবীকে তার প্রকৃত রূপ ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করবে।

যেই পৃথিবীতে আমাদের জন্ম, যেই পৃথিবী আমাদেরকে মায়ের মতো আগলে রেখেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী, সেই পৃথিবীর প্রতি আমাদের ভালোবাসা একান্তই কাম্য। পৃথিবী ভালো না থাকলে আমরা কীভাবে ভালো থাকবো? নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই আমাদের উচিৎ পৃথিবীকে ভালো রাখার ব্যবস্থা করা।

লেখক: শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

কুবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়