মস্তিষ্কের সঙ্গে প্রেম-ভালোবাসার যে সম্পর্ক
স্বপনীল আঁকাশ || রাইজিংবিডি.কম
মানুষ ভালোবাসার দাস। ভালোবাসা হচ্ছে কোনো জীবের প্রতি স্নেহ, আবেগ, অনুভূতি ও দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ। ভালোবাসা যেমন মানুষকে বাঁচতে শেখায়, তেমনি বাঁচাতে শেখায়।
সম্রাট শাহজাহান যেমন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাজমহল, তেমনি ধ্বংসও হয়েছে অসংখ্য স্থাপনা। অনেক কবি-সাহিত্যিক প্রেমের জন্য লিখেছেন অসংখ্য সাহিত্য, কবিতা এবং নির্মিত হয়েছে অসংখ্য মুভি সিনেমা। কখনো কি ভেবে দেখেছেন, কী সেই ভালোবাসা? নিজেকে প্রশ্ন করেছেন কখনো?
বিজ্ঞান বলে, প্রেম বা ভালোবাসা হয় আমাদের মস্তিষ্কের কিছু রাসায়নিক পদার্থের জন্য। এই রাসায়নিক পদার্থগুলোকে মেডিকেল সায়েন্সের ভাষায় হরমোন বলা হয়।
মানুষের মস্তিষ্ক অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে গঠিত। প্রত্যেকটি ক্ষুদ্র অংশ আলাদা আলাদা রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত করে। যেমন ডোপামিন নিঃসৃত হয়-হাইপোথ্যালামাস থেকে নোরফেনপ্রিন-অ্যাড্রিনাল মেডুলা অক্সিটোসিন- পোস্টেরিয়র পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে। আরও বেশকিছু হরমোনের প্রভাবে মানুষ প্রেমে পড়তে পারে। যদি মানুষের শরীরে কৃত্রিমভাবে এই হরমোনগুলো দেওয়া হয়, তাহলেও তাদের মাঝে সেই প্রেমের অনুভূতি হয়।
এখন আসি প্রেম কী? এটার সাথে মস্তিষ্কের কী সম্পর্ক?
পৃথিবীতে এমন একজন মানুষ পাওয়া যাবে না, যার মধ্যে কখনো প্রেম বা ভালোবাসার অনুভূতি নেই। প্রায় সবাই কম-বেশি প্রেমের অনুভূতির সাথে পরিচিত। কিছু দিন পূর্বে আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ জন বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে একটি জরিপ করি। জরিপে তাদের আমি তিনটি প্রশ্ন করি-
১. জীবনে কতজনকে ভালো লেগেছে?
২. কতজন প্রপোজ করেছে এখন পর্যন্ত?
৩. কতজনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক হয়েছে এখন পর্যন্ত, নাকি প্রথম যার সাথে প্রেম হয়েছিল তার সাথেই সম্পর্ক আছে এখনো?
আমার ক্লাসমেটদের বলি, তাদের মধ্যে শতকরা ৭০ শতাংশ জন প্রেমের অনুভূতির সাথে পরিচিত। অর্থাৎ প্রতি ১০ জনের সাত জনই প্রেম করে অথবা কাউকে পছন্দ করে অথবা আগে করতো এখন ব্রেকাপ হয়েছে।
এখন আসা যাক বিজ্ঞানীরা প্রেমকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন, বিজ্ঞানীদের মতে, প্রেম হলো মানুষের মনের এক ধরনের রাসায়নিক অবস্থা, যার জন্য একাধারে দায়ী মানুষের জিন এবং কিছু রাসায়নিক বস্তু। এই রাসায়নিক পদার্থগুলোকে বলা হয় হরমোন।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক নৃতত্ত্ববিদ হেলেন ফিশার এবং স্নায়ুচিকিৎসক লুসি ব্রাউন, আর্থার অ্যারোন প্রমুখ বিজ্ঞানীরা প্রায় ৪০ জন প্রেমে পড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের উপর এক গবেষণা চালান। তাদের গবেষণার ধরনটি ছিল এরকমের। প্রেমিক-প্রেমিকাদের সামনে তাদের ভালোবাসার মানুষটির ছবি রাখা হলো এবং তাদের মস্তিষ্কের ফাংশনাল এমআরআই (fMRI) করা হলো। দেখা গেলো, এ সময় তাদের মস্তিষ্কের ভেন্ট্রাল এবং কর্ডেট অংশ উদ্দীপ্ত হচ্ছে, আর সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে ডোপামিন নামক এক রাসয়ায়নিক পদার্থের নিঃসরণ ঘটছে। গবেষকরা এটাও বলেছেন, কারো দেহে ডোপামিন বেশি পাওয়া গেলেই যে সে প্রেমে পড়েছে ,তা নাও হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, একজন মানুষ যখন অন্য আরেকজন মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তখন তার মস্তিষ্ক মোট চার মিনিট ৯০ সেকেন্ড সময় নেয়। আবার কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের মস্তিষ্কে প্রেমে পড়ার ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আসে। পরিবর্তনগুলোর মধ্যে ৫৫ শতাংশ হলো তার অঙ্গভঙ্গি বা বাহ্যিক রূপ, ৪৫ শতাংশ কণ্ঠস্বর ও কথা বলার ভঙ্গি।
সুস্থ থাকতে হলে সবসময় হাসিখুশি থাকতে হবে। মানুষকে ভালোবাসতে হবে। কেননা আপনি যদি মানুষের সাথে রেগে কথা বলেন, তাহলে আপনার দেহেও খারাপ হরমোন নিঃসৃত হবে, যেগুলো দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আর মানুষকে ভালোবাসলে, হাসিমুখে কথা বললে ভালো হরমোন নিঃসৃত হবে এবং আপনি সুস্থ থাকবেন।
লেখক: শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ (৩য় বর্ষ), ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
ডিআইইউ/মাহি