ওদের স্বপ্ন পূরণ করবে কে
রাফসান নিঝুম || রাইজিংবিডি.কম
তিনজনের জন্ম ভিন্ন ভিন্ন স্থানে হলেও ভাগ্যের চাকা যেন তাদের এক করে এনেছে ইট-পাথরের এই নগরীতে। অভাবের তাড়নায় কাজ করতে গিয়ে হয়ে গেছেন একে-অপরের বন্ধু। তাদের দুঃখ, কষ্ট, সুখ ও আনন্দ যেন একই সঙ্গে গাঁথা।
বলছিলাম শিশু শামীম, রফিক, আলীর কথা। বিভিন্ন এলাকায় ময়লা টোকানোর কাজ করেই চলে তাদের সংসার।
রাজধানী ঢাকার খিলগাঁও রাজারবাগ এলাকায় দেখা হয়ে গেলো তাদের সঙ্গে। কথোপকথনের এক পর্যায়ে জানালো নিজেদের আক্ষেপ ও ক্ষোভের গল্প।
শিশু শামীম (১৩) ময়লা টোকাই হিসাবে কাজ করছে গত ১ বছরের কিছু বেশি সময় ধরে। অভাবের সংসারে বাড়তি আয় জোগানোর জন্যই তার এ কাজে আসা। শামীম বলে, ‘বাপের টাকায় সংসার চলে না ভাই৷ তাই এই কাজে নামছি। এইখান থেইক্কা যা ইনকাম হয়, হেইডা দিয়াই কোনো মতে চলে।’
শিশু রফিক (১৩) অবশ্য এর আগে ছিল নারায়ণগঞ্জের এক জুতার কারখানায়। মালিকের অত্যাচারের কারণে চলে এসেছে সেখান থেকে। এখন মানুষের বাসা থেকে ময়লা এনে ভাগাড়ে ফেলেই যতসামান্য আয়। রফিক বলে, ‘আগের কারখানার মালিক ভালা না। কিছু হলেই মারতো। তাই একদিন ট্রেনে কইরা ঢাকা চইল্লা আইছি।’
পড়ালেখার বিষয়ে জানতে চাইলে রফিক বলে, ‘পড়ালেহা করতে ম্যালা টেকা-পয়সা লাগে। খাওনের টাকাই তো হয় না, পড়ালেহা দিয়া কী করুম?’
আলী (১১) অবশ্য এই কাজে নতুন। তবে তার আক্ষেপ রয়েছে কম টাকা পাওয়ার। কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার করে যে টাকা পাওয়ার কথা ছিল, সেই টাকা পায়নি বলেই দাবি করছে সে। সেই সঙ্গে মানুষের কাছ থেকে দুর্ব্যবহার ও কটু কথা বলার কথাও বলেছে সে।’
আলী বলে, ‘মানুষ অনেক সময় গালি দেয়। কাজে গেলে তাড়াইয়া দেয়!’
‘আমরা তো ভাই ময়লা টোকাই, এর লাইগা মানুষজন এমন করে। কিন্তু আমরা তো নিজের ইচ্ছায় এই কাজে এহানে আসি নাই। পেটের দায়ে আইছি, কাজ না করলে খাওয়াইবো কে?’, বলে আলী।
শামীম, রফিক, আলী বেশ কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইলো যে, কেন আমি তাদের এই তথ্য নিচ্ছি। শামীম তো হঠাৎ বলেই বসলো যে এইগুলা টিভিতে দেখাবেন নাকি? ‘না’ বোধক উত্তর পাওয়ার পর তাদের অনুরোধ ছিল, তাদের ছবি যেন কোথায় (ফেসবুকে) না ছাড়ি।
হয়তো সমাজের চোখে এই সব শিশুর মূল্য নেই। তবুও এদের চোখে রয়েছে হাজারো স্বপ্ন। মানুষ হয়ে বড় হওয়ার স্বপ্ন। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন।
লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, তেজগাঁও।
ঢাবি/মাহি