অনলাইন ব্যবসায় ঝুঁকছেন শিক্ষার্থীরা
মো. পারভেজ দেওয়ান || রাইজিংবিডি.কম
কালের বিবর্তনে পৃথিবী আজ অনন্য উচ্চতায়। একসময় মানুষ যা কল্পনাও করতে পারেনি, তা আজ বাস্তবে ধরা দিয়েছে। অনলাইনের সাহায্যে পুরো পৃথিবী আজ হাতের মুঠোয়। এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যোগাযোগ করা যায় খুব সহজে। প্রথম দিকে অনলাইনকে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে মাধ্যমটি হয়ে উঠেছে ব্যবসায়ের অন্যতম হাতিয়ার।
একটা প্রবাদ আছে, কারো মাঘ মাস, কারো সর্বনাশ। প্রবাদটির সাথে বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপট অনেকটাই মিল আছে। করোনাভাইরাস যেমন পুরো পৃথিবীকে স্থবির করে দিয়েছে, ঠিক তেমনি অনলাইন ব্যবসা কিংবা ই-কমার্সকে গতিশীল করেছে। করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত যত মানুষ না অনলাইন ব্যবসা সম্পর্কে জানতেন, করোনার কারণে তার প্রায় ৪/৫ গুণ বেশি মানুষ অনলাইন ব্যবসা সম্পর্কে জেনেছেন।
এই পরিস্থিতিতে অনেক মানুষ হারিয়েছেন তাদের কর্ম, শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া থেকে দূরে। কিন্তু সময় তো আর বসে থাকে না। এই অবসর সময়কেই অনেক শিক্ষার্থী অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার বানিয়েছেন। শুরু করেছেন অনলাইন মাধ্যমে ব্যবসা। এতে তাদের অবসর সময়তো কাটছেই, সঙ্গে অর্থ উপার্জনও হচ্ছে।
অনলাইন ব্যবসায়ের জনপ্রিয় কিছু সাইট হচ্ছে- ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপ ফুড পান্ডা, ইভ্যালি, আলিবাবাসহ আরও অনেক। তবে, নিজস্ব ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপ বা পেজ ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের সম্ভাবনাও বেশি। তাছাড়া ইভ্যালিসহ অন্যান্য সাইট থেকে ডিসকাউন্ট মূল্যে পণ্য কিনে তা পুনরায় বিক্রির মাধ্যমে অনেকেই অর্থ উপার্জন করছেন।
এদিকে অনেক শিক্ষার্থী ঘরে বসেই হোম-মেড খাবার তৈরি করে তা ফুড পান্ডা, ই-ফুড, সহজ, পাঠাওয়ের মাধ্যমে ডেলিভারি দিতে অর্থ উপার্জন করছেন। এতে গ্রাহক-ভোক্তা উভয়েই সন্তুষ্ট।
উত্তরা টাউন কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী নাঈম। তিনি ইতোমধ্যে অনলাইনে ব্যবসা করা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, করোনার কারণে লেখাপড়া বন্ধ। তাই অবসর সময় কাটানোর জন্য অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেছি। এখন পযর্ন্ত সফল। তবে শুরুটা যে সহজ হয়েছে, তা কিন্তু নয়।
শুরুতে পুঁজির সংকটে পড়েন নাইম। বন্ধুদের কাছ থেকে ধারদেনা করে ১০,০০০ টাকা সংগ্রহ করেন নাইম। এরপর সেই টাকা দিয়ে বিভিন্ন অনলাইন শপ থেকে ডিসকাউন্ট মূল্যে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ঘড়ি, চশমা, হেডফোন, সাউন্ড বক্স, ইত্যাদি সংগ্রহ করেন। পরবর্তী সময়ে সেসব পণ্য তিনি ফেসবুক, বিক্রয় ডটকমের সাহায্যে সামান্য লাভে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করেন। এতে তার হাত খরচের টাকা তো হচ্ছেই, সঙ্গে পরিবারকেও সহযোগিতা করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী আরাফাতুল ওসমানী। তিনিও অনলাইনে ব্যবসা শুরু কছেন। বলেছেন তার গল্প, করোনার কারনে লেখা পড়া বন্ধ। তাই এই অবসর সময়কে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছি। বর্তমান সময়ে মানুষ অনলাইন ব্যবসায়ের উপর অনেক নির্ভরশীল। তারা অনলাইনে কেনাকাটা করতে পছন্দ করেন। কারণ, এতে সময় বাঁচে। তাই আমি অনলাইন ব্যবসা বেছে নিয়েছি।
প্রথম দিকে রাজশাহী থেকে পাইকারি দামে লিচু এনে ঢাকায় বিক্রি করতাম। এতে ভোক্তার ব্যাপক সাড়া পাই। আমি যেহেতু ভোক্তাদের কাছে ফরমালিন মুক্ত লিচু পৌঁছে দিতে পেরেছি, তাই তাদের আস্থা অর্জন করেছি। এবার রাজশাহীর বিভিন্ন বাগান থেকে আম সংগ্রহ করি, যা ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিক্রি করি। প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি করি। এতে সব খরচ বাদ দিয়ে ভালোই লাভ হয়েছে। ভোক্তা ও আমি উভয়েই খুশি।
এদিকে, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী মুন্না। আলাপকালে তিনি বলেন, আমি আমার লেখাপড়ার খরচ অর্ধেক নিজেই চালাতাম, বাকি টাকা পরিবার দিত। আমার টাকা আমি টিউশনের মাধ্যমে সংগ্রহ করতাম। কিন্তু করোনা পরবর্তী সময়ে আমার টিউশন চলে যায়। ফলে আমার লেখা পড়ার খরচ যোগাতে দোটানায় পড়তে হয়। তাই অনেক ভেবে ঠিক করলাম অনলাইন ব্যবসা অন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। আমার অনেক বন্ধু বর্তমান সময়ে অনলাইন ব্যবসায় জড়িত। তাই আমিও অনলাইন ব্যবসায়ের সিদ্ধান্ত নিলাম।
আমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাইকারি মূল্যে ছেলেদের বিভিন্ন শার্ট-প্যান্ট ক্রয় করে তা ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিক্রি করি। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আমার প্রতিষ্ঠানের নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করবো।
নাঈম, ওসমানী, মুন্নার মতো অনেকেই আছেন, যারা নিজ, নিজ অবস্থান থেকে অনলাইন ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়াচ্ছেন। ফলে তারা নিজেরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, তেমনি ভোক্তারা ঘরে বসেই পণ্য হাতে পেয়ে খুশি হচ্ছেন।
লেখক: শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক, সরকারি তিতুমীর কলেজ।
ঢাকা/মাহি