বৃত্তিকে ‘আর্থিক সাহায্য’ বলায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
জাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ‘বৃত্তি’কে ‘আর্থিক সাহায্য’ উল্লেখ করায় ‘আপত্তিকর ও অসম্মানজনক’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
গত মঙ্গলবার (২২ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তি-২) এ বি এম আজিজুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে তৈরি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ।
শিক্ষার্থীদের দাবি, এটা তাদের মেধার জোরে প্রাপ্ত ‘বৃত্তি’। তারা ভিখারি নন যে আর্থিক সাহায্য নেবেন। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এ ব্যাপারে বিভিন্ন মাধ্যমে জানাচ্ছেন তাদের মতামত, প্রতিক্রিয়া; সমালোচনা করছেন প্রশাসনের ভাষাগত অদক্ষতার। অচিরেই এটি সংশোধনের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী তাহারিমা সুলতানা হিমু বলেন, ‘আমি তো কখনোই কোনো সাহায্যের জন্য আবেদন করি নাই; তাহলে কেন আমাকে সাহায্য দেওয়া হবে!প্রশাসন যেটা দিতে পারে, সেটা হলো বৃত্তি; আমার অনুমতি না নিয়ে আর্থিক সাহায্য কেন দেবে? বৃত্তি আর আর্থিক সাহায্যর পার্থক্য বোঝে না প্রশাসন। সাহায্য চেয়ে থাকলে আমাদের সাহায্যের আবেদনপত্র দেখানো হোক। বিষয়টি একইসঙ্গে আপত্তিকর ও অসম্মানজনক। অচিরেই এটি সংশোধন করা হোক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৮তম আবর্তনের আরেক শিক্ষার্থী এরফানুল ইসলাম ইফতু বলেন, ‘আমার প্রশ্নটা হলো, আমার আচরণ, শিক্ষার অগ্রগতি, ক্লাস ও হলের উপস্থিতি সন্তোষজনক হওয়ায় কি আমি এই সাহায্য পেয়েছি, নাকি বৃত্তি পেয়েছি? এটা আসলে কী? আমি তো একজন শিক্ষার্থী। আমি বৃত্তি পেতে পারি, সাহায্য কেন পাবো? শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষার্থীর মতো আচরণ করা কি উচিত না? বিষয়টা কি দান খয়রাতির বিষয় নাকি? আমরা কি ভিখারি, যে সাহায্য নেবো?’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান বলেন, ‘এটা অবশ্যই পরিবর্তনযোগ্য। এই শব্দটি আসলে বৃত্তি চালু হওয়ার পর থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। লিখিত দিলে আমরা প্রশাসনকে বিষয়টা জানিয়ে এটা পরিবর্তন করতে পারবো। কিছু কিছু শব্দ যে সমস্যার, এটা কেউ ধরিয়ে না দিলে আসলে বোঝা অসম্ভব। শিক্ষার্থীরা লিখিত দিলেই শব্দটি পরিবর্তন করা কোনো সমস্যাই নয়। শব্দটি আসলেই দৃষ্টিকটু।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মাশরুর শাহিদ বলেন, ‘অধ্যাদেশটি পড়তে পারলে ভালো হতো, তবে সাধারণ জ্ঞান থেকে বলতে পারি নোটিশেই কিন্তু ‘বৃত্তি’ শব্দটি আছে; ‘বৃত্তির বিল’। তার মানে দাঁড়ায়, প্রশাসন এই আর্থিক সহায়তা/ভাতাকে ‘বৃত্তি’ হিসেবেই জ্ঞান করছে। এখন, যেহেতু বৃত্তি-গ্রহীতা অনেকের ‘সাহায্য’ শব্দে অস্বস্তি বা আপত্তি আছে, তাই ‘সম্পূরক শিক্ষাবৃত্তি’ দিয়ে ‘সম্পূরক আর্থিক সাহায্য’কে প্রতিস্থাপিত করা যায়। বৃত্তি শব্দের অর্থ হিসেবে বলা যেতে পারে, বিশেষ অর্জনের কারণে ভবিষ্যতে আরও ভালো করার জন্য অনুপ্রেরণা দেওয়া, কাজেই এখানে বৃত্তি-ই যৌক্তিক, বৃত্তি-ই শ্রেয়তর।
উল্লেখ্য, প্রজ্ঞাপনটিতে পৃথকভাবে বলা ছিল ‘সম্পূরক আর্থিক সাহায্য বিধি অনুযায়ী প্রতি বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পর্বের পরীক্ষার ফলাফলের মেধানুসারে সব বিভাগের শতকরা ৫০ ভাগ শিক্ষার্থীকে মঞ্জুর করা হয়েছে এই ‘আর্থিক সাহায্য’র জন্য।
তাজুল/মাহি