কেন আমরা ব্রাজিল ভালোবাসি?
মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ || রাইজিংবিডি.কম
ব্রাজিল, একটি দেশের নাম। এর চেয়েও বড় কথা একটি ফুটবল রাষ্ট্রের নাম এটি। ব্রাজিল ১৯১৪ সালে আন্তর্জাতিক খেলা শুরু করে। তাদের ফুটবল ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এপর্যন্ত ব্রাজিল ফিফা নিয়ন্ত্রিত ১৯টা আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতেছে। সৃষ্টিশীল পাসিং, ছন্দময় ও নান্দনিক ফুটবলের জন্য এই দেশটিই সেরা।
ফুটবলে ব্রাজিলের ‘সাম্বা’ স্টাইল এক অন্যরূপ। পুরো বিশ্ব ফুটবল অনেকটাই আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের সংমিশ্রণ বলা যেতে পারে। রোববার বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টায় কোপা আমেরিকার ফাইনালে মুখোমুখী হবে ফুটবলের চির দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। ফুটবলের ওই উত্তেজনাটা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মনে একটু বেশিই নাড়া দেয়। তেমনি কয়েকজন শিক্ষার্থীর ব্রাজিলের সাপোর্ট করার কারণ ও মতামত তুলে ধরছেন আরেক সমর্থক মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ।
ফুটবল মানেই ব্রাজিল
সমর্থনের কথা বলতে গেলে, আগে বলতে হবে সমর্থক হিসেবে আমি কেমন। সমর্থক হিসেবে আমি অপরচুনেস্টি নইতো? আসলে সমর্থনের শুরুর দিকে সবাই এমন করে। আমিও করতাম, ফিক্সড কোনো দল সমর্থনে ছিল না। তখন যে দল ভালো খেলতো, সেই দলকে সমর্থন করতাম। সমর্থন নানা কারণে করে। কেউ একজন ভালো খেলোয়াড়ের জন্য করে, কেউ টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য।
২০০৪ সালের কথা। আমি মাত্র কয়েকটি খেলা দেখেছি। তখন একটা খেলা দেখেছিলাম ব্রাজিলের। ওই সময় ব্রাজিলের হয়ে খেলছিলেন রোনালদো এবং কাকা। সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে যেটা, এত দ্রুত এবং এত ফাস্ট পাস বিনিময় করতো, যেটা দেখে খুবই দারুণ লেগেছে। ব্রাজিলের ম্যাচ মোটামুটি মিস করতাম না। কিন্তু তখনো পুরোপুরি সমর্থক হইনি। ২০০৬ এ ব্রাজিলের সমর্থক হই। কিন্তু এমন এক সময়ে সমর্থক হই, তখন ফুটবল বিশ্বে নাম কুড়িয়ে নিয়েছেন মেসি। সেই সময়ই আমি আসলে ব্রাজিলের সমর্থক হই। আজ সেই ব্রাজিল ফুটবলের নক্ষত্ররা নেই। নেই রোনালদো, কাকা, রয়ে গেছে শুধু তাদের সেই খেলার স্মৃতি। কিন্তু ব্রাজিল এমন এক দেশ, যে দেশে একটা নক্ষত্র ডুবে গেলে দশটা নক্ষত্র জন্ম নেয়। বর্তমানে ব্রাজিলের প্রত্যেকটি খেলোয়াড়ই এক একটি নক্ষত্র।
ফারহান তুরাব, শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)
নান্দনিক ফুটবলের রাজা ব্রাজিল
সময়টা ২০০৬। ফুটবল সবেমাত্র বুঝতে শুরু করি। বিশ্বকাপের ম্যাচে রোনালদো, রোনালদিনহোর ফুটবল জাদুতে মুগ্ধ হয়ে যাই। ভালো লাগা জন্মে ফুটবলের প্রতি। এই ভালোবাসা থেকেই কিছু দিন পরেই ভক্ত হয়ে যাই ব্রাজিলের। ২০০৮ সালে অলিম্পিকে ব্রাজিল দলের অর্জন আজও অন্য রকম অনুভূতি। রোনালদোর গোল করার অসাধারণ সব কৌশল, রোনালদিনহোর দ্রুত গতির ড্রিবলিং আর অসাধারণ কিছু স্কিলের জন্য নান্দনিক ফুটবলের ব্রাজিল দল ক্রমেই হয়ে যায় ভালোবাসার।
শুধু কি স্কিল আর নান্দনিকতা থেকে ব্রাজিল এমন নয়, অর্জনের খাতা এতটাই লম্বা, যা আজ পর্যন্ত অন্যসব দলের কাছে স্বপ্নের মতো। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, ধারাবাহিকভাবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে একটা বিশ্বকাপ ট্রফি, যাদের চিরকালীন।
পেলে, যার ডাকনাম কালো মানিক তিনটি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফুটবলে ইতিহাসে চিরস্মরণীয় এক নাম।রবার্তো কার্লোস, যাকে বলা হয় বুলেট ম্যান।বর্তমান সময় নেইমার জুনিয়র যে অন্যতম সেরা খেলয়াড়, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।ফুটবল ম্যাচে, যার অসাধারণ কিছু স্কিল ড্রিবলিং ইতোমধ্যে নাড়া দিয়েছে বিশ্বব্যাপী।ক্লাব ফুটবলে এতটাই জনপ্রিয় যে, এখন পর্যন্ত ক্লাব পরিবর্তনে বিশ্বের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড় এই ব্রাজিলিয়ান।এর বাইরেও অসংখ্য প্রতিভাবান ব্রাজিলের খেলোয়াড় প্রতিনিয়ত ফুটবলকে করছে উপভোগ্য আর একটা খেলাকে পরিণত করেছে শিল্পে। আর চলতি বছর কোপা আমেরিকার আসরে অর্জনের খাতাটা আবারো দীর্ঘায়িত হবে এটাই প্রত্যাশা।
রবিউল হাসান সাকীব, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।
ব্রাজিলই ফুটবলের রাজা
আমার প্রিয় খেলার তালিকায় ক্রিকেটের পরই আছে ফুটবল। যখন থেকে ফুটবল বুঝি, তখন থেকেই ব্রাজিলের ভক্ত হয়ে যায়। একটা দলের সমর্থন করার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকে। কেউবা একজন খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্সের জন্য করে, আবার কেউবা করে দলের ভালো খেলার জন্য। তেমনিভাবে আমি ব্রাজিলের সমর্থন করি খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের কারণে। তাদের ফুটবল খেলায় শিল্প থাকে, একটা ছন্দ খুঁজে পাই। তাই ওদের খেলা দেখতেও ভালো লাগে। ফুটবলের সব সৌন্দর্য রয়েছে তাদের খেলায়। ব্রাজিল মানেই সাম্বার তালে তালে দর্শক মাতানো খেলা। তাদের দলীয় সমঝোতাও খুব ভালো। সবারই একজন প্রিয় খেলোয়াড় থাকে, আমার প্রিয় খেলোয়াড় নেইমার। কারণ, যেকোনো মুহূর্তে খেলার গতি পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা আছে তার। তবে ব্রাজিলের প্রতিটি খেলোয়াড়কেই ভালোবাসি। সেইসঙ্গে আছে ব্রাজিলের গৌরবময় ইতিহাস। যারা সর্বোচ্চ বিশ্বকাপ জয়ী। এছাড়াও ব্রাজিল দলে ছিল পেলে, কাকা, রোনালদিনহোর মতো বিশ্বসেরা ফুটবলার। যাদের ফুটবল যাদুতে মেতেছিলেন ফুটবল প্রেমিরা, তেমনি প্রতিপক্ষ হয়েছিল দিশেহারা। বর্তমানে ব্রাজিলের প্রতিটি খেলোয়াড় এক একজন নক্ষত্র। ব্রাজিলই ফুটবলের রাজা। আশা করি এবারের কোপা আমেরিকার ট্রফি ব্রাজিলের ঘরেই উঠবে।
মো. ইমদাদুল ইসলাম, শিক্ষার্থী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
‘সাম্বা’ ব্রাজিল
সাম্বা নৃত্যের সাথে শৈল্পিক ফুটবলের সংমিশ্রণ ব্রাজিলকে দিয়েছে অনন্য উচ্চতা। এই অনন্য উচ্চতা নিয়ে যাওয়া কারিগরদের মধ্যে অন্যতম রোনালদো, রোনালদিনহো, কাকা, রবার্তো কার্লোস থেকে শুরু করে হালের ক্রেজ নেইমারও রয়েছেন। যখন দর্শক কোনো দলের খেলায় নিজেকেই খুঁজে পায়, আত্মতৃপ্তিতে ঢেকুর তুলে তখন সেই দলের দিকেই ঝুঁকে পড়ে। সেই বিবেচনায় আমিও তার ব্যতিক্রম নই। ছন্দে ভরা নান্দনিক ফুটবল আর ফুটবলারদের ফুটবল নিয়ে কারুকাজ ব্রাজিলের প্রতি মুগ্ধতা বাড়িয়ে দিয়েছে। তাছাড়া ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দ্বন্দ্ব ব্রাজিলের প্রতি সমর্থনের রেশটাকে আরও গতিশীলতা এনেছে। মারাকানায় কোপা আমেরিকার শিরোপা উঁচিয়ে ধরে নিজেদের সক্ষমতা জানান দিক আরও একবার!
নাজমুস সাকিব সালেহ আব্দুল্লাহ, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ব্রাজিলই সেরা
ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, England invented football and Brazil perfect it. এই কথাটিই বোঝার জন্য যথেষ্ট। ব্রাজিল যুগে যুগে ফুটবলকে উপহার দিয়েছে অসংখ্য কিংবদন্তি ফুটবলার। যারা ফুটবলটাকে শিল্প হিসেবে রূপদান করেছে। ফুটবলের নান্দনিকতা, সৌন্দর্য বর্ধনে ব্রাজিল যোগ করেছে নতুন মাত্রা। পেলে, গ্যারিঞ্জা, জর্জিনহো, বেবেতো, ভাবা, দিদি, লিওনিডাস, কাফু, দুঙ্গা, জিকো, সক্রেটিস, কাকা, রবার্তো কার্লোস, রোনালদো, রিভালদো, রোমারিও, নেইমার, রোনালদিনহোর মতো কালজয়ী ফুটবলারদের আবির্ভাব ঘটেছে ব্রাজিল থেকে।
একমাত্র দেশ হিসেবে ব্রাজিল বিশ্বকাপের সব আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। যে কৃতিত্ব নেই অন্য কোনো দেশের, এটাই প্রমাণ করে ব্রাজিল ছাড়া বিশ্বকাপ অসম্ভব। আর বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফল দল ব্রাজিল। সর্বোচ্চ পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ব্রাজিল এবং বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ দলীয় জয় ও ব্রাজিলের। অনেকে বলেন, আমরা কাপ দেখে দল করি না বরং খেলা দেখে দলের সমর্থন করি। তাদের জানা উচিৎ ভালো খেলা ব্যতীত কখনো বিশ্বকাপের মতো মর্যাদার শিরোপা অর্জন করা সম্ভব নয়। তাছাড়া ভালো খেলে বলেই সর্বোচ্চ ১৫৯ বার ফিফা র্যাংকিং শীর্ষে উঠেছে ব্রাজিল। যার আশেপাশেও নেই অন্য কোনো দল। তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায়, ভালো খেলা ছাড়া কি শীর্ষে পদার্পণ করা যায়?
জুবায়েদ মোস্তফা, শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
ব্রাজিল মানেই ছন্দময় ফুটবল
ব্রাজিলের ফুটবল কথাটি আসলেই যে বিষয়টি সবার আগে আসে, সেটা তো সাম্বার তালে মোহনীয় ছন্দে ফুটবলের পরিপূর্ণ রূপ। ব্রাজিল মানেই ছন্দময় ফুটবল। মাঠে ড্রিবল করে প্রতিপক্ষকে ধোঁকা দিয়ে এগিয়ে যাওয়া। দৃষ্টিনন্দন গোল। ফুটবলকে যে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় ব্রাজিলই তা বিশ্বকে চিনিয়েছে। শিল্পের ফুটবল এবং ব্রাজিল যেন একে অপরের পরিপূরক।
ফিফা আয়োজিত বিশ্বকাপে ব্রাজিল যেন রেকর্ডের আরেক নাম। এখনো পর্যন্ত ব্রাজিলই একমাত্র দল, যারা সব বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছে, জয়ী হয়েছে সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপে এবং দখল করে আছে সব বিশ্বরেকর্ডের বড় অংশ।
ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে সফলতম একটি দলের নাম ব্রাজিল। তাদের দলে যুগে যুগে খেলে গেছেন অনেক নামিদামি রথী-মহারথীরা। যদি এ দলটিকে আর্জেন্টিনার সাথে তুলনা করা যায় তাহলে হয়তো ম্যারাডোনা বা মেসি ছাড়া আর্জেন্টাইন ফুটবলে সেরকম কোনো ফুটবলারের নাম আসবে না। কিন্তু ফুটবল ইতিহাসে ব্রাজিলই একমাত্র দল, যারা প্রতি দশকেই ইতিহাসে স্থান দখলকারী একাধিক খেলোয়াড় উপহার দিয়েছে। যাদের নাম ফুটবল অঙ্গনে সোনার অক্ষরে লেখা আছে।
জুবায়েদুল হক রবিন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট
ফুটবল পূর্ণতায় ব্রাজিল
ফুটবল খেলার জন্ম হয় ইংল্যান্ডে কিন্তু খেলাটিকে পূর্ণতা দিয়েছে ব্রাজিল। খেলার মাঝে শিল্পের খোঁজ শুধু ব্রাজিল দিয়ে থাকে। সাম্বার তালে মোহনীয় ছন্দে ফুটবলের পরিপূর্ণ রূপই হচ্ছে ব্রাজিল। এখন পর্যন্ত একমাত্র সেরা দল যারা দুটিতে রানারআপসহ পাঁচটি বিশ্বকাপ জিতেছে। হ্যাঁ এটাই ব্রাজিল। যুগে যুগে যারা নিয়ে এসেছে কিংবদন্তি খেলোয়াড়দের। ফুটবল ইতিহাসে ব্রাজিলই একমাত্র দল যাদের রয়েছে এক থেকে এক বড় মাপের খেলোয়াড়। পেলের বিশ্বকাপের খেলা নিয়ে ইতালিয়ান এক কোচের মন্তব্য এমনই ছিল যে ‘পেলে কোনো মানুষ নন, তিনি ফুটবলের প্রভু।’
অলংকার গুপ্তা, শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
ছন্দময় ফুটবলের নাম ব্রাজিল
ব্রাজিল নামটা শুনলেই ফুটবলের নাম মাথায় আসে। আদেমির, পেলে, জিকো, রোনালদো, রিভালদো, রোমারিও, রোনালদিনহো, কাকা, নেইমার ব্রাজিলকে দুনিয়াব্যাপী ফুটবল দিয়েই পরিচিত করিয়েছেন। সেলেসাও নামে পরিচিত এই দলটি, ছন্দময় ফুটবল খেলে, ফুটবলে ব্রাজিলের "সাম্বা" স্টাইল এক অন্য রূপ।
ব্রাজিলের প্রতিভার অভাব নেই। প্রতিটি প্রজন্মেই একজন করে মহাতারকা তৈরি হয়েছে ব্রাজিল থেকেই। প্রতিবছরই শত শত ফুটবলার ব্রাজিল থেকে ইউরোপে খেলতে যায়, সেখানে খেলে একেকজন তারকা তৈরি হয়। এভাবেই ব্রাজিল নিজেদের ফুটবল সংস্কৃতি, ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছে।
রুকাইয়া মিজান মিমি, শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
জবি/মাহি