কৃষ্ণ যদি কালো হয়, কৃষ্ণচূড়া লাল কেন?
আজাহারুল ইসলাম, ইবি || রাইজিংবিডি.কম
হঠাৎ মনে প্রশ্ন জাগলো কৃষ্ণ অর্থ কালো, তবে কৃষ্ণচূড়া লাল কেন? এর উত্তর খুঁজতে অনেককেই জিজ্ঞেস করেও কোনো সদুত্তর পেলাম না। তাই শুরু করলাম অনলাইনে ঘাটাঘাটি। পেলামও বেশ কিছু উত্তর। এ প্রশ্নের জবাব আমিরুল আলম খান তার পারুলের সন্ধানে গ্রন্থে লিখেছেন, ১৭ শতকের এক রাজকবি দেবতা কৃষ্ণের মাথার চূড়ার বর্ণনায় রক্তবর্ণ ফুলের সঙ্গে একে তুলনা করেছেন। তারপর কোনো কাব্যরসিক হয়তো সেই বর্ণনা থেকে কৃষ্ণচূড়া নাম রেখে থাকবেন।
ড. মোহাম্মদ আমীন তার পৌরাণিক শব্দের উৎস ও ক্রমবিবর্তন গ্রন্থে লিখেছেন, রাতে কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো কৃষ্ণগহ্বরের মতো নিকষ হয়ে ওঠে। এ নিকষ কৃষ্ণই দিনের বেলা গাছের চূড়োয় রঙিন স্বপ্নে জ্যৈষ্ঠ মাসের অসহ্য গরমেও দু’দণ্ড শান্তির বারতা বয়ে আনে। তাই ফুলটির নাম রাখা হছে কৃষ্ণচূড়া। তবে যে কারণেই কৃষ্ণচূড়া লাল হোক, এর সৌন্দর্য সাড়া জাগায় ফুলপ্রেমীদের মনে। সারাদেশের, শহর-পল্লীর মতো কৃষ্ণচূড়ায় সেজেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ও। একদিকে গ্রীষ্মের তাপদাহে পুড়ছে প্রকৃতি, অন্যদিকে মৃদু বাতাসে দুলছে রক্তিম বর্ণের কৃষ্ণচূড়া। সবুজ পল্লব আর লাল কৃষ্ণচূড়া যেন আকাশের নিচে এক অপরূপ সংমিশ্রণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন, টিএসসিসির মূল ফটক, স্মৃতিসৌধ এলাকা, রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবন এলাকা, খালেদা জিয়া হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলসহ বিভিন্ন স্থানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে কৃষ্ণচূড়া।
কৃষ্ণচূড়ার আগমনে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে ১৭৫ একর। নজর কাড়ছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও দর্শনার্থীদের। ক্লান্ত দুপুরে এসব গাছের নিচে বসেই আড্ডায় স্বস্তি ফেরানোর চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীরা। বন্ধুরা মেতে ওঠে খুনসুটিতে, কেউবা ব্যস্ত থাকেন ফুল কুড়াতে। কেউ আবার ছবি ও সেলফিতে মত্ত। দেখা মেলে পাখিদের আনাগোনা ও খুনসুটিও। প্রেমিক তার প্রিয় মানুষটির খোঁপায় কৃষ্ণচূড়া গুঁজে দিতে ভুল করেন না।
তবে প্রধান ফটক এবারো রাঙেনি কৃষ্ণচূড়ায়। অযত্ন-অবহেলায় গাছটিকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। তবে গত বছরের শেষে ওই একই জায়গায় লাগানো হয়েছে আরও একটি নতুন কৃষ্ণচূড়ার চারা। এতে নতুন কচি পাতা গজানো শুরু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সাবেক ও বর্তমানদের সবার প্রত্যাশা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ফের ফিরে পাবে হারানো জৌলুশ।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
/মাহি/