৫৬ বছরে সরকারি তিতুমীর কলেজ: কী ভাবছেন শিক্ষার্থীরা?
মামুনূর রহমান হদয় || রাইজিংবিডি.কম
শাহাদাত হোসেন নিশাদ, তাসনীম নওশীন, আমান উল্লাহ আলভী, প্রমা শর্মা (ঘড়ির কাটার দিকে)
৫৬ বছরে পদার্পণ করল প্রাণের বিদ্যাপীঠ সরকারি তিতুমীর কলেজ। জিন্নাহ কলেজ থেকে তিতুমীর কলেজ হয়ে ওঠা ৫৫ বছরে নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে আলোচনায় ছিল তিতুমীর কলেজ।
নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে কলেজটি। ক্লাসরুমের সংকটে ভূমিকা, আবাসনের সমস্যা দূরীকরণ, যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত বাসের ব্যবস্থা, ক্যান্টিন নির্মাণ, মেডিকেল সেন্টার স্থাপন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য কাজ করে সকলের হৃদয় জয় করছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।
তিতুমীর কলেজের ৫৬ বছরে পদার্পণ নিয়ে কী ভাবছেন শিক্ষার্থীরা। কতটা প্রাপ্তি, কতটা প্রত্যাশা কিংবা কতটা চাওয়া- শিক্ষার্থীদের সেসব কথা তুলে ধরেছেন মামুনূর রহমান হদয়।
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ হোক শিক্ষাবান্ধব’
১১ একরের এই ক্যাম্পাস স্বপ্নের মতোই সুন্দর। সৌন্দর্যের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ আরও শিক্ষাবান্ধব হওয়া দরকার। একদিন এই তিতুমীর কলেজ সৌন্দর্যের পাশাপাশি গুণগত মানের দিক দিয়েও সেরা হবে এই আশায় বুক বাঁধি। জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে সফল হয়ে একদিন এই ক্যাম্পাসেই অতিথি হয়ে এসে শুনাতে চাই সফলতার গল্প। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ব মানচিত্রের সবাই চিনবে বাংলাদেশে একটি তিতুমীর কলেজ রয়েছে। তিতুমীর কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করা শিক্ষার্থীরা উচু পর্যায়ে যাক। সুন্দর পরিবেশ হিসেবে থেকে এই ক্যাম্পাস আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম ছড়িয়ে দিক; ৫৬ বর্ষে পদার্পণ করায় তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে এটাই কামনা।
- শাহাদাত হোসেন নিশাদ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ।
‘সম্পর্কটা হোক জ্ঞানের’
৫৬-তে পা রাখল প্রাণের বিদ্যাপীঠ। আমাদের ক্যাম্পাসের বিভিন্ন বিভাগে রয়েছেন জ্ঞানী, উচ্চতর ডিগ্রিধারী এবং দক্ষ শিক্ষক। কিন্তু তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা এবং বিভাগকেন্দ্রিক। উদাহরণ হিসেবে একজন ইংরেজি পড়ুয়া শিক্ষার্থী চাইলেই ভূগোলের কোনো বিষয় সম্পর্কে জানতে অন্য বিভাগের শিক্ষকের কাছে ছুটে যেতে পারে না। নিজ বিভাগের পড়াশোনার বাহিরে একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞান আহরণের ইচ্ছা থাকতে পারে অন্যান্য বিভাগের বিষয়ের ওপর। এসব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় আমাদের ভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের সহায়তা পাওয়া কঠিন হয়। ভূগোল বিভাগের শিক্ষকের সহায়তা পেতে হলে ভূগোলের শিক্ষার্থী হওয়া আবশ্যক। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এই সম্পর্কে পরিবর্তন আসুক। শিক্ষার্থী-শিক্ষকের সম্পর্কটা বিভাগকেন্দ্রিক নয়, ছড়িয়ে পড়ুক সর্বত্র।
- তাসনীম নওশীন, অর্থনীতি বিভাগ।
‘ক্যাম্পাস হোক বিশ্বমানের’
তিতুমীর কলেজে পড়াশোনা করব এটা দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল। আমি এখন সেই স্বপ্নের গর্বিত সদস্য। ভাবতেই মন প্রফুল্ল হয়ে ওঠে। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে আমার ভাবনা- বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শতভাগ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত হোক। অশুভ, অপ্রীতিকর কোনো কিছু কোনোভাবেই আমাদের যেন সংকুচিত করে না দেয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, মুক্তচিন্তার অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। এখানে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে মনোজগতের উৎকর্ষ সাধিত হয়। কোনো প্রকার কোন্দল যেন ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক ভারসাম্যে ক্ষতিকর প্রভাব না ফেলে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রেখে বৃহৎ স্বার্থে সংকীর্ণতা পরিহার করলে তিতুমীর কলেজ হবে বিশ্বমানের।
- আমান উল্লাহ আলভী, মার্কেটিং বিভাগ।
‘ছড়িয়ে পড়ুক সৃজনশীলতা’
১১ একরের ক্যাম্পাসে হাঁটার সময় আপনি একটা আলাদা জগৎ অনুভব করতে পারবেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ক্যাম্পাস যে কাউকে মুগ্ধতা ছড়াতে বাধ্য করলেও, সবুজ-শ্যামল ক্যাম্পাসে কিছু জিনিসের অভাববোধ করি। চারুকলা বিভাগ, জার্নালিজম বিভাগ, আইন বিভাগ, ফার্মেসি বিভাগ ইত্যাদি ক্রিয়াশীল বিভাগগুলো ক্যাম্পাসে চালু হোক। কেননা এই বিভাগগুলো একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা হয়ে উঠে দক্ষ, ছড়িয়ে পড়ে সৃজনশীলতা।
- প্রমা শর্মা, সমাজকর্ম বিভাগ।
লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী।
/ফিরোজ/