ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

রাবিতে মঞ্চায়িত হলো ‘কোকিলারা’

রাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০৯, ২৭ আগস্ট ২০২৩   আপডেট: ২০:১২, ২৭ আগস্ট ২০২৩
রাবিতে মঞ্চায়িত হলো ‘কোকিলারা’

প্রায় ক্ষেত্রেই নারীদের কথাগুলো না বলাই থেকে যায় কিংবা নারীরা কথা বললেও সে কথাগুলো হয়তো কখনোই শুনতে পায় না কেউ। ‘কোকিলারা’ নাটকটি তিনজন নারীর তেমনই একটি গল্প নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নাট্যকলা বিভাগের আয়োজনে মঞ্চায়িত হয়েছে।

রোববার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যা সোয়া ৭টা এবং রাত পৌনে ৮ টায় দুইটি সেশনে রাবির শহিদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার টিএসসিসিতে মঞ্চায়িত হয়েছে। নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুমনা সরকার। এটি ১৭তম ব্যাচের অভিনয় শাখার একটি প্রযোজনা।

তিনজন নারীর তিন গল্পের মিশ্রণ হলেও তিন কোকিলা মিলেই কোকিলারা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এই কোকিলারা নারী হয়ে জন্মেছেন, সমাজে নারী হয়েই বেড়ে উঠেছেন এবং শেষ পর্যন্ত এই কোকিলারা তাদের না বলা কথাগুলো নিয়েই হারিয়ে গেছেন। পুরুষশাসিত সমাজে কোকিলাদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ হয় না সাধারণত। তবে এই ‘কোকিলারা’ সম্পাদিত পাণ্ডুলিপিতে সংযোজন করা হয়েছে ব্যারিস্টার কোকিলার আদালতের অন্যায় অবিচার না মেনে প্রতিবাদ করার বিষয়টি। সমকাল বিবেচনায় নাট্যকাহিনিতে তা প্রযুক্ত করা হয়েছে।

‘কোকিলারা’ নাটকটি আমাদের সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির নারীদের প্রতিনিধিত্ব করে। এখানে দেখানো হয়েছে কীভাবে ধর্মকে ব্যবহার করে ধর্মভীরু নারীকে ভোগের পণ্য বানানো হয়। এছাড়াও তিনজন কোকিলার মধ্যে বাকি দুজন শিক্ষিত এবং বেশ আত্মনির্ভরশীল। একজন অফিসের সেক্রেটারি এবং অন্যজন ব্যারিস্টার। ঘটনাক্রমে দেখা যায় এরা সবাই তাদের কর্মক্ষেত্রে পুরুষদ্বারা শোষিত। অর্থাৎ নারীরা সমাজের সব জায়গায় অন্যায়ের শিকার। এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো আমাদের সমাজ যথেষ্ট শিক্ষিত, নীতি-নৈতিকতায় পরিপূর্ণ এবং ধর্মীয় অনুশাসনেরও কমতি নেই। আবার আইন আদালতও নিজেদের অবস্থানে বেশ দৃঢ়। এতকিছু সত্ত্বেও দিনশেষে নারীদের আর অধিকার রক্ষা হয় না। নারীরা অভিযোগ নিয়ে সেখানেই লালসার শিকার হয়। এদিক থেকে নাটকটি একদমই প্রাসঙ্গিক। নাট্যকাহিনিতে নারীদের বাস্তবজীবনে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের গোপনচিত্র উঠে এসেছে।

নাটকের এক দর্শক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নাহিদ বলেন, নাট্যকাহিনি একদমই প্রাসঙ্গিক। সমাজ উন্নতির শিখরে পৌঁছে গেলেও নারীদের বেলায় আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়নি। আমরা ভুলে যাই এই নারীরা আমাদেরই অর্ধেক। তাই সমাজে নারীদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি। সেই সঙ্গে নারীদের অধিকার আদায়েও এগিয়ে আসতে হবে।

নাটকের নির্দেশক ও নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুমনা সরকার বলেন, ‘বদলের দুনিয়ায় সবকিছু বদলায় শুধু বদলায় না নারীর জীবন। আবহমানকালের বঞ্চনা ও শৃঙ্খল নানা আবরণে ধাবমান। কালের আকাশে তাই কোকিলার আকুতি প্রতিধ্বনি হয়। কোকিলারা তো আমাদেরই কন্যা, ভাগিনী, জায়া, জননী। আর কতকাল আহাজারির পর কোকিলাদের বাস্তবতা আমাদের স্পর্শ করবে? এমন বিস্ময়ভরা প্রশ্ন নিয়ে চরিত্রাভিনয় রীতিতে মঞ্চে হাজির প্রিয়াঙ্কা সেন মৌ, ফারজানা হাসান মিম ও সাবিহা সুলতানা বর্ষা। ওরা এম.পি.এ শিক্ষার্থী। যাবার আগে প্রতীকী করে বঞ্চনা ও প্রতারণার বয়ান ওরা করেছে আজ। নির্মাণে আঙ্গিক ও বিষয় সমান্তরালে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। শেষ অবদি নারীর অনিবার্যরূপ প্রকাশের চেষ্টাও করা হয়েছে।’

শাকিবুল হাসান/ফিরোজ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়