ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা: ভোগান্তি নিরসনে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

তারানা তানজিনা মিতু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০০, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩  
চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা: ভোগান্তি নিরসনে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

‘প্রাচ্যের রানী’খ্যাত সমুদ্র ও পাহাড়বেষ্টিত চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের পুরোনো সমস্যা। জোয়ার ও ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম এ বছর অত্যন্ত ১০ বার জলাবদ্ধতায় ডুবে ছিল।

গত আগস্ট মাসে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ সময় কোনো কোনো এলাকায় ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত পানি জমে ছিল। ভারী বর্ষণে নগরের নিচু এলাকাগুলোয় জলাবদ্ধতার কারণে সড়ক ও অলিগলিতে গোড়ালি থেকে হাঁটু সমান পানি জমে যায়। পানি না নামায় বিপাকে পড়েন নগরের নিচু এলাকার মানুষ। এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়রের বাসভবনেও পানি ঢুকে ছিল। ভারী বৃষ্টি ও বন্যার কারণে পিছিয়ে যায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষাও। জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি কম ছিল না দোকানি, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি ও জলাবদ্ধতা নিরসনে তাদের ভাবনা শুনে অনুলিখন করেছেন তারানা তানজিনা মিতু

ভারী বৃষ্টিপাত হলেই চট্টগ্রাম নগরীর অলিগলিসহ প্রধান সড়কগুলোতে পানি জমে যায় হাঁটু কিংবা কোমর সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে যাতায়াতে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। সেই সুযোগে যানবাহন ভাড়াও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এতে পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে। এদিকে চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হয়, দৈনিক ভিত্তিতে মাত্র দুই হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করা গেলেও বাকি এক টন বর্জ্য ড্রেন ও খালে ফেলে দেওয়া হয়, যা জলবদ্ধতার মূল কারণ। কর্তৃপক্ষ দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে, এ দুর্ভোগ আরও বাড়বে। আমরা এ থেকে মুক্তি চাই।
- শারমিন আক্তার, স্নাতকোত্তর, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

জলবদ্ধতা চট্টগ্রামবাসীর ওপর অনেক প্রভাব ফেলে। জলবদ্ধতার ফলে সড়কে যানবাহন চলাচল করে না। ক্লাস কিংবা পরীক্ষা থাকলে সঠিক সময়ে পৌঁছানো যায় না। ভোগান্তিতে পড়তে হয় অনেক। বাড়ি-ঘরে পানি উঠে আসবাবপত্র এবং বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যায়, এর কারণে আর্থিক অনেক ক্ষতি হয়। জলবদ্ধতাকে প্রতিরোধ না করলে ভবিষ্যতে আমাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। তাই সেবা সংস্থাগুলো নগরবাসীদের সেবায় আন্তরিক হলেই জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ নিরসন হবে।
- সাফওয়াত ওয়াসেকা রহমান চৌধুরী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

বর্তমানে চট্টগ্রাম শহরে যে হারে জলাবদ্ধতা বেড়েছে তাতে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন এক প্রকার অসহ্যকর হয়ে উঠেছে। ড্রেনেজ সিস্টেম ঠিকঠাক না থাকায় সব পানি জমে উঠে আসে রাস্তায়, বাসা বাড়িতে। এতে করে বাধাগ্রস্ত হয় আমাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড। কর্মজীবী মানুষের তো ভোগান্তির শেষ নেই। একপ্রকার যুদ্ধ করেই তাদের কর্মস্থলে পৌঁছাতে হয়। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারি সংস্থাগুলোর মাঝে সমন্বয় দরকার।
- ইয়াজ উদ্দিন সজিব, বিবিএ ডিপার্টমেন্ট, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

জলবদ্ধতার অন্যতম ভুক্তভোগী আমি। অতিরিক্ত বৃষ্টি ও কর্ণফুলী নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে কালুরঘাট ফেরিঘাট ডুবে যায়। চলাচলের সড়কে পানি জমে যায়। এর ফলে যাতায়াতে আমাদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক সময় রোগীদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ নিয়ে বোয়ালখালীবাসী অনেক ভোগান্তিতে আছে। অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ, পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকা, সময়মতো ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার না করায় নালা, নর্দমা ও খাল ভরাট হয়ে বোয়ালখালী পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে যায়। এগুলাতে আরও সচেতন হলে জলবদ্ধতা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি মিলবে। তবে যতদিন কালুরঘাট ব্রিজের কাজ শেষ না হবে, ততদিন আমরা এই ভোগান্তিতে ভুগব বোয়ালখালীবাসী।
- মেহুরুন নেছা তানজিন, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

বন্দরনগরী চট্টগ্রাম বৃষ্টিতে এক ভোগান্তির জায়গায় পরিণত হয়। অল্প পরিমাণ বৃষ্টিতে হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানিতে ডুবে যায় নগরের ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট, এতে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের গন্তব্যে পৌঁছাতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। জমে থাকা পানির কারণে রাস্তা আর উন্মুক্ত নালার তফাৎ বোঝা মুশকিল হয়ে যায়। যার ফলে তৈরি হচ্ছে মৃত্যুফাঁদ এবং প্রায়শই মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। গত কয়েক বছরে চট্টগ্রামের নালায় ডুবে অনেকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে নাগরিক সমাজ ও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। নগরের খাল ও নালা-নর্দমা বেদখল, অসচেতনতার কারণে খাল-নালায় বর্জ্য ফেলা এবং নিয়মিত খাল-নালা থেকে মাটি উত্তোলন না করা হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। জলাবদ্ধতার এই অভিশাপ থেকে আমরা যেভাবে হোক নগরবাসী মুক্তি চাই।
- শাহাদাত হোসেন, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতায় রূপ নিচ্ছে চট্টগ্রাম। অল্প বৃষ্টিতেই শহরের বেশ কিছু সড়ক ও নিচু এলাকাসমূহ হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানির নিচে চলে যাচ্ছে। জলাবদ্ধতায় নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাই শুধু ভেঙে পড়ে না, পাশাপাশি রাস্তায় আটকে পড়েন শ্রমজীবী-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এমনকি প্রতি বছর প্রাণহানিরও ঘটনা ঘটে। মূলত সমন্বয়হীনতা, পরিকল্পনাহীনতা এবং অদূরদর্শী পদক্ষেপের কারণেই চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে স্থায়ীভাবে এ সমস্যা নিরসনের জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
- ইনামুল হোসেন, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

লেখক: শিক্ষার্থী, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

/ফিরোজ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়