ঢাকা     শনিবার   ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১৩ ১৪৩১

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হয়েও জবি ছাত্রলীগের পদে ইউনুস

জবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫৪, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আপডেট: ২১:৩০, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হয়েও জবি ছাত্রলীগের পদে ইউনুস

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্র না হয়েও ছাত্রলীগের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন ইউনুস মাতাব্বর নামের একজন। আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে বিভাগীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ আদায় করে নিয়েছেন তিনি।

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহীম ফরাজির অনুসারী হিসেবে পরিচিত ইউনুস নিয়মিতই সক্রিয় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। সব কর্মসূচিতেই থাকে তার সরব উপস্থিতিতি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউনুস মাতাব্বর নামের ওই যুবক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রই নন। আইন বিভাগের চলমান ব্যাচগুলোতে ইউনুস মাতাব্বর নামে কোনো শিক্ষার্থীর নাম নেই। বিভাগের নথিপত্রেও এই নামের কোনো শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার পরিচয় দেওয়া ব্যাচের সহপাঠীরাও তাকে ক্লাসে দেখেন না। কয়েকবার বিভাগের করিডোরে তাকে দেখা গেলেও ক্লাস-পরীক্ষাতেও ছিল না তার কোনো উপস্থিতি।

আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সরকার আলী আক্কাস ইউনুস মাতাব্বর বিভাগের শিক্ষার্থী না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখেছি। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখেছি এই নামে (ইউনুস মাতাব্বর) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে কোনো ছাত্র নেই। আর ছাত্রলীগের পদ তো আমরা দেইনা। ছাত্রলীগের উচিত ছিল যাচাই-বাছাই করে পদ দেয়া। এখানে বিভাগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আর যেহেতু সে আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থী না, তাই আমরা কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারবো না।

আরও জানা গেছে, ইউনুস মাতাব্বর নামের ওই যুবক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহীম ফরাজির ঘনিষ্ঠ অনুসারী রবিউল ইসলাম রবির মাধ্যমে। দুইজনেরই গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলায়। একই জেলায় হওয়ায় ইউনুস মাতাব্বরকে তিনি আইন বিভাগ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পাইয়ে দিতে সুপারিশ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও আইন বিভাগ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রবিউল হাসানের সঙ্গেও তার সুসম্পর্ক রয়েছে। তার সঙ্গেই ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতেন ইউনুস নামের ওই যুবক।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হওয়ার পরও বিভাগীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক পদ পাওয়ায় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। নেতাকর্মীরা বলছেন, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির একই এলাকার হওয়ায় এবং নিজের দল ভারী করতে বহিরাগতদের ছাত্রলীগের পদায়ন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পরাগ হোসাইন বলেন, এটি ছাত্রলীগের জন্য খুবই লজ্জাজনক। সভাপতির নিজ এলাকা হওয়ার পরেও সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কিনা তা ভেরিফাই করেনি। এখানে বহিরাগত এনে দল ভারী করার উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। 

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ইউনুস মাতাব্বর কে কয়েকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে একবার কল রিসিভ করলেও সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি কেটে দেন। পরবর্তীতে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল হাসান বলেন, আমি সামান্য একটা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক। আমি তো আর এতো বড় বিষয়ে জানতে পারিনা। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আছেন তারা বিষয়টি দেখবে, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম ভাই দেখবেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে রবিউল ইসলাম রবিকে কল দেয়া হলে নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহীম ফরাজি বলেন, ইউনুস যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না, এটা যাদের সঙ্গে সে ক্লাস করেছে তারাও বুঝতে পারেনি। আমাদেরকে দেয়া জীবনবৃত্তান্ত দেখে আমরা তাকে পদ দিয়েছি। তাকে পদ থেকে বরখাস্ত করা হবে, এটি প্রক্রিয়াধীন। আমরা চাইলে শাস্তি দিতে পারিনা, এটা আমাদের এখতিয়ারে নেই।

এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঙ্গে বারবার মুঠোফোনে যোগাযোগ চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোস্তফা কামাল বলেন, ইউনুস যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না হয়ে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী না কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করবে, সেটা কখনোই হতে পারে না।

মেহেদী হাসান/ফিরোজ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়