ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

ধূমপানমুক্ত যবিপ্রবি ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে চলছে ধূমপান

যবিপ্রবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩  
ধূমপানমুক্ত যবিপ্রবি ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে চলছে ধূমপান

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে (যবিপ্রবি) ধূমপানমুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হলেও তা শুধু ঘোষণাতেই আবদ্ধ, বাস্তব চিত্রে ক্যাম্পাসে প্রতিনিয়ত চলছে প্রকাশ্য ধূমপান। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের নেই কোনো ধরনের তৎপরতা। ধূমপান সামগ্রী সহজলভ্য থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ‘স্পটে’ অবাধে ধূমপান করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

যবিপ্রবি প্রাঙ্গণকে সম্পূর্ণভাবে ধূমপান ও মাদকমুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হলেও, নজরদারির অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে প্রকাশ্যে ধূমপান বেড়েই চলেছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাডেমিক ভবনের পিছনে, খেলার মাঠের পাশে কদমতলা, কড়ইগাছতলা, শেখ রাসেল জিমনেসিয়ামের পিছনে, শিক্ষার্থী ছাউনি, ক্যাফেটেরিয়ার সামনে বসার স্থান ও দ্বিতীয় তলায় এবং প্রধান ফটকের সামনে প্রকাশ্যে চলছে ধূমপান। মূলত যবিপ্রবির প্রধান ফটক ও শেখ রাসেল জিমনেসিয়ামের পিছনে অঘোষিত ধূমপানের স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে অবাধে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকল ধূমপায়ীকে প্রকাশ্য ধূমপান করতে দেখা যায়। 

অবাধে ও প্রকাশ্যে ধূমপানে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে নারী ও অধূমপায়ী সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও মাঝেমধ্যে বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছেন। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে বিভিন্ন দোকানে ধূমপানের সময় সিগারেটের ধোঁয়ার মুখে পড়তে হয় নারী শিক্ষার্থীদের। অপরদিকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ধূমপান কিছু ‘স্পটে’ সীমাবদ্ধ থাকলেও সীমানা নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। তারা একাডেমিক ভবনের বিভিন্ন সিঁড়ির পাশে দাঁড়িয়ে প্রকাশেই ধূমপান চালিয়ে যাচ্ছেন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধূমপায়ী এক ছাত্র বলেন, ‘আমি নবম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় ধূমপান শুরু করি। প্রথমে বন্ধুদের সঙ্গে এক-দু টান দিলেও এখন এটা ছাড়া চলা যায় না। দৈনিক ৬০-৮০ টাকা ব্যয় হয় সিগারেটের পেছনে।’ জনসম্মুখে ধূমপান করার বিষয়ে এই ছাত্র বলেন, ‘আমি জানি জনসম্মুখে ধূমপান করা উচিত না, এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু পুলিশও তো প্রকাশ্যে ধূমপান করে তাদের তো কেউ কিছু বলে না।’ 

আরেকজন ছাত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পূর্বে সে কখনও সিগারেট ছুঁয়েও দেখেনি, বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর বন্ধুদের সঙ্গে প্রথম বর্ষে থাকা অবস্থায় ধূমপান করা শিখেছে, এখন এটা ছাড়া আর ভালো লাগেনা। কেন খায় সেটাও নিজে জানে না, তবে প্রতিদিন তার ৮০ থেকে ৯০ টাকা সিগারেটের পেছনে বাড়তি খরচ হয়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী বলেন, ‘ক্যাম্পাসের ভিতরে ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও আমাদের ক্যাম্পাসের ভিতরে, চলাচলের রাস্তায়, গেটের সামনে, আশেপাশের দোকানে দাঁড়িয়ে অনেকেই ধূমপান করেন। এতে আমাদের অস্বস্তি হলেও এসবের ধার ধারেন না ধূমপায়ীরা। প্রশাসনের উচিত এ বিষয়টাকে তীক্ষ্ণ নজরদারিতে রাখা ও যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া।’

এই বিষয়ে অরেকজন ছাত্রী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনের অভ্যন্তরে ক্যাফেটেরিয়ার সামনে, কদমতলা, শহিদ মিনারের পাশে, জিমনেসিয়ামের পিছনে জনসম্মুখে সিগারেট খেতে দেখা খুবই বিরক্তিকর। সিনিয়র হোক বা জুনিয়র, কোনো শিক্ষার্থীরই উচিত না ক্যাম্পাসের গন্ডির ভেতর এমন কাজ করা। বিশেষ করে কিছু ছেলে আছে  যারা মেয়েদের দেখেও ধোঁয়া ছাড়ার খুবই অস্বস্থিকর পরিবেশ তৈরি করে। এমন অনেক মেয়ে আছে যাদের ধূমপানের ধোঁয়ায় অ্যাজমা সমস্যা হয় কিন্তু ধূমপায়ীরা সিনিয়র বলে তারা কিছু বলতে পারে না। আমি মনে করি ক্যাম্পাসে অভ্যন্তরে ধূমপান সবার জন্য নিষিদ্ধ করা উচিত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যবিপ্রবির প্রক্টর ড. হাসান মোহাম্মদ আল ইমরান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ধূমপানের বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। ক্যাম্পাসকে ধূমপান ও মাদকমুক্ত রাখতে প্রতিবছরই প্রক্টর দপ্তর থেকে মাদকবিরোধী সেমিনার করা হয়। ক্যাম্পাসকে ধূমপানমুক্ত রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে। যদি এমন কোনো কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গঠন করা হয় তাহলে ওই কমিটিকে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করব। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়কে ধূমপানমুক্ত রাখতে যদি কোনো আইনি সংস্থা ক্যাম্পেইন বা সতর্কতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে চায় তাহলে তাদেরকে আমরা স্বাগত জানাব।’

সজীবুর রহমান/ফিরোজ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়