ঢাকা     সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

সংকটেও সম্ভাবনাময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

আরিফুল ইসলাম, জবি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২০, ১৫ অক্টোবর ২০২৩  
সংকটেও সম্ভাবনাময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ও ঐতিহ্যের ধারক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। কলেজ থেকে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫’ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হওয়া এ বিশ্ববিদ্যায়টির কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২০ অক্টোবর উনিশ বছরে পা রাখতে যাচ্ছে এ বিদ্যাপীঠটি।

প্রতিবারের ন্যায় এবারও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে পালিত হবে দিবসটি। তবে কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত এ বিদ্যাপীঠটি কতটুকু এগিয়ে গেল তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সংশ্লিষ্টদের মাঝে।

নানান সীমাবদ্ধতার বেড়াজালে আবদ্ধ থাকার পরেও একাডেমিক ও গবেষণায় অগ্রগামী হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, অবকাঠামো দিক থেকে অনেকাংশে পিছিয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।  তবে কেরানীগঞ্জে নির্মিতব্য দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের মাধ্যমে অবকাঠামোগত সমস্যার সমাধান হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অগ্রগতি নিয়ে উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের সভাপতি হয়ে আসার পর অনেক সীমাবদ্ধতা দেখেছি। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে অনেক বিভাগে নিয়মিত ক্লাস হতো না। পরবর্তীতে আমি এখানকার প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করি। ২০১৯ থেকে এখন পর্যন্ত এখানে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে আছি। এ দায়িত্ব গ্রহনের পর ছাত্রী হলের অসম্পূর্ণ কাজ ও  নতুন ভবনের উপরের অংশের কাজ পর্যায়ক্রমে সম্পূর্ণ করি।

গবেষণা খাতে বরাদ্দের বিষয়ে তিনি জানান, গবেষণা খাতে বরাদ্দ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আমরা তো প্রতিনিয়ত বাড়াতে চাই। বর্তমান আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। শিক্ষার্থীরা গবেষণা করতে চাইলে আমরা বরাদ্দ দেব। চাকরির বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় আমাদের শিক্ষার্থীরা দারুণ সাফল্য নিয়ে আসছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রতিষ্ঠানটির অর্জনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের জন্য কাউন্সিলিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) বাস্তবায়নে ইউজিসি কর্তৃক মূল্যায়নে ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৯৩.৭৫ নম্বর পেয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করে এ বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হওয়া চুক্তিকে বিশেষ অর্জন বলে মনে করেন তিনি।

সাংস্কৃতিক বিষয়ে তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক অগ্রগতির দিকে তাকালেই বোঝা যায় একটা বিশ্ববিদ্যালয় কতটা উন্নত। আর সেদিক দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বেশ এগিয়ে। সম্প্রতি চারুকলা অনুষদ করা হয়েছে। সংগীতের দিকেও অনেক উন্নত। অনেক শিক্ষার্থী এখন সংগীত, নাট্যকলায় তাদের অর্জন নিয়ে আসছে।

লাইব্রেরি সংকট নিয়ে তিনি জানান, বর্তমানে সবাই প্রযুক্তিনির্ভর। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মোবাইল ফোনে লেখাপড়া করে। তবুও আমি বলবো লাইব্রেরিতে পড়ার বিকল্প নেই। যদিও আমাদের কিছুটা সংকট আছে, তারপরও আমাদের শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করে। বিভাগগুলোর অগ্রগতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মাইলফলক হিসেবে মনে করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে এগিয়ে নেওয়া একটা চ্যালেঞ্জ-এমনটাই মনে করেন ড. কামালউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, আমাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ ছিল নতুন ক্যাম্পাসের কাজ শুরু করা। সেটা আমরা করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করি ২০২৪ সালের মধ্যে সেগুলোর কাজ শেষ হবে। এরপর আমাদের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের জন্য হল নির্মাণ করা। আমাদের ছেলে-মেয়েগুলো অনেক কষ্টে থাকে। আর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা। আমরা সেটি নিয়ে কাজ করছি। দ্বিতীয় ক্যাম্পাস হলে আমাদের বাকি সমস্যা থেকেও মুক্তি মিলবে।

দেশের প্রথম সারির এ বিদ্যাপীঠে বর্তমানে সাতটি অনুষদ, ৩৮টি বিভাগ ও দুইটি ইনস্টিটিউট রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৮০ জন শিক্ষক, ৭৩৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ১৮ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে । এছাড়া ২৪৫ জন এমফিল ও ১৪১ জন পিএইচডি শিক্ষার্থী রয়েছেন ।

/হাসান/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়